চলে গেলেন অধিকারকর্মী সালমা খান

প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০২২, ২২:৩৫ | আপডেট: ০২ জুলাই ২০২২, ২২:৩৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

নারীর বিরুদ্ধে সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদসংক্রান্ত (সিডও) জাতিসংঘ কমিটির সাবেক চেয়ারপারসন সালমা খান আর নেই। অর্থনীতিবিদ ও নারী অধিকারকর্মী হিসেবে বেশি পরিচিত ছিলেন তিনি। শনিবার বেলা ২টার দিকে রাজধানীর গুলশানের বাসায় তিনি মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

সালমা খানের স্বামী সাবেক মন্ত্রী হাবিব উল্লাহ খান জানান, সালমাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার লাশ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা আছে। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী মেয়ে উমানা হক দেশে আসতে পারবেন কি না, তা জানার পর লাশ দাফনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

হাবিব উল্লাহ খান বলেন, ‘আমি নিজেও অসুস্থ, হাঁটতে পারি না। এখন তো ও আমাকে ফেলে চলে গেল।’

গুলশানের বাসায় সালমা খান ও তার স্বামী থাকতেন। দুজনই দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। বাড়িতে কয়েকজন নার্স দেখাশোনা করতেন তাদের।

সালমা খান মারা যাওয়ার সময় তার পাশেই ছিলেন হাবিব উল্লাহ খানের নার্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ফয়সাল ইসলাম। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান। এক সপ্তাহ ধরেই থেমে থেমে জ্বর হচ্ছিল সালমা খানের। মাঝেমধ্যে শ্বাসকষ্ট হতো। এছাড়া বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি।

কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন মহিয়সী এই নারী। তিনি প্রথম এশীয় হিসেবে সিডও কমিটির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ১৯৯৩ সালে প্রথম নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ (সিডও) সংক্রান্ত জাতিসংঘের সিডও কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৭ সালে আবার দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৭–১৯৯৮ সালে তিনি কমিটির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। সব মিলে সিডও কমিটিতে তিন মেয়াদে ১২ বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেন।

সালমা খান এনজিও কোয়ালিশন ফর বেইজিং প্ল্যাটফর্ম ফর অ্যাকশনের সাবেক চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি এবং ফুলব্রাইট স্কলার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উন্নয়ন অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কানেটিকাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিংয়ে ডিপ্লোমা ও যুক্তরাজ্যের লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জেন্ডার প্ল্যানিংয়ে বিশেষায়িত হন।

বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা উইমেন ফর উইমেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় সালমা খান নারী বিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা করেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সালমা খান ফুলব্রাইট স্কলারশিপ, ইউএস এআইডি স্কলারশিপ, ব্রিটিশ কাউন্সিল স্কলারশিপ ও মর্যাদাপূর্ণ আইজেনহাওয়ার এক্সচেঞ্জ ফেলোশিপ পেয়েছিলেন।

‘ফিফটি পারসেন্ট: উইমেন ইন ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড পলিসি ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামের বইয়ের লেখক সালমা খান দেশের বিভিন্ন সরকারি অফিসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় কর্মরত ছিলেন। জাতীয় পরিকল্পনা কমিশনে নারী উইংয়ের সূচনা ও বাংলাদেশের পঞ্চবার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনার ম্যাক্রো কাঠামোতে লিঙ্গ সমস্যাকে মূলধারায় আনার জন্য তিনি ভূমিকা রেখেছেন। পরিকল্পনা কমিশনে যোগদানের আগে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা করেন। তিনি ওই বিভাগের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন তিনি।

সালমা খান নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে গবেষণা ও প্রকাশনার জন্য ১৯৯০ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে স্বর্ণপদক পান। ১৯৯৭ সালে শ্রেষ্ঠ নারী প্রশাসক হিসেবে অনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কার এবং নারীর উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য অসামান্য সেবার স্বীকৃতি হিসেবে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল জিন হ্যারিস পুরস্কারে ভূষিত হন। এ ছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।

সালমা খানের গবেষণায় নারীর শ্রম অধিকার, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, অর্থনৈতিক নীতিতে লৈঙ্গিক সমতার বিষয়টিকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করার মতো বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। এ বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন তিনি।  

সালমা খান ন্যাশনাল কাউন্সিল অন উইমেন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, জাতীয় শিক্ষা কমিশন, মানব উন্নয়ন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। 

(ঢাকাটাইমস/০২জুলাই/কেএম)