ধারণার ওপর মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে মনগড়া বক্তব্য জাপা এমপি ফখরুলের!

প্রকাশ | ০৩ জুলাই ২০২২, ০৭:৪৫ | আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২২, ১৮:৪৪

সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকাটাইমস

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম জাতীয় সংসদে তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবই থেকে বেশ কিছু বিষয় সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তার বক্তব্যের সূত্র ধরে ঢাকাটাইমস আলোচিত বইগুলো সংগ্রহ করে যাচাই করে দেখেছে, ফখরুল ইমামের অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই।

তার ওই বক্তব্য অনেকটা ধারণাপ্রসূত বলে ঢাকা টাইমসের কাছে স্বীকার করেছেন ময়মনসিংহ-৮ আসনের এই সংসদ সদস্য। গতকাল ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘নিজের এই বক্তব্যের ভুল স্বীকার করে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে এটি এক্সপাঞ্জ (প্রত্যাহার) করার আবেদন করেছেন।

এদিকে এরই মধ্যে তার সংসদে দেওয়া ওই বক্তব্য নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে জোরালো সমালোচনা।

একজন সংসদ সদস্যের এ ধরনের মনগড়া বক্তব্য দেওয়া ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।

শিক্ষাবিদ সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘রাজনীতিবিদরা কখন কী বলেন তার কোনো ঠিক নেই। তারা সকালে বলেন এক কথা, আবার বিকেলে চাপে পড়ে বলেন আরেক কথা।’

গতকাল বিকেলে ঢাকা টাইমসের সঙ্গে আলাপে নিজের ভুলের কথা স্বীকার করে ফখরুল ইমাম বলেন, ‘আমি সব সময় ডাবল চেক বা ত্রিপল চেক করি। কিন্তু পত্রিকার ভেতরে এটা ২০১৬ সালের ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটা আমি লক্ষ করিনি। তাড়াহুড়ার মধ্যে আমি খেয়াল করিনি। ভুলটা আমারই হয়েছে। বিষয়টি খেয়াল করা দরকার ছিল।’

ফখরুল ইমাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি এটা মিস করেছি, আমার বক্তব্য এক্সপাঞ্জ (প্রত্যাহার) করার জন্য আবেদন করেছি। আমি ২০১৬ সালের ২ জুলাইয়ের একটা রিপোর্ট ২০২২ ভেবে ভুল করে বক্তব্য দিয়েছি। ওই তারিখটা মিস করার ফলে এই গণ্ডগোলটা হয়েছে। আমি এই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছি।’

সেদিন সংসদে মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে কটাক্ষ করেও বক্তব্য দেন ফখরুল ইমাম। যা নিয়ে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। সেই সঙ্গে মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষা ও তাদের পা থেকে মাথা পর্যন্ত হিজাব পরা নিয়ে সমালোচনা করেন তিনি। তার অভিযোগ, এসব মাদ্রাসায় নারীদের কেবলই সংসার করা শেখানো হয়, অন্য কোনো বিজ্ঞান শিক্ষা দেওয়া হয় না।

সেদিন কি বলেছিলেন ফখরুল ইমাম?

‘এই যে শিক্ষাব্যবস্থা প্রাইমারিতে আছে, সেখানে ক্লাস টুতে ‘সবাই মিলে কাজ করি’ শিরোনামে মহানবীর সংক্ষিপ্ত জীবনী ছিল, সেটা বাদ দিয়েছে। ক্লাস থ্রির পাঠ্যবই থেকে ‘খলিফা হযরত আবু বকর’ শিরোনামে একটা সংক্ষিপ্ত জীবনী ছিল, সেটা বাদ দিয়েছে। চতুর্থ শ্রেণিতে খলিফা হযরত ওমরের সংক্ষিপ্ত জীবনী ছিল, সেটা বাদ দিয়েছে। পঞ্চম শ্রেণিতে নবীজীর বিদায় হজ নিয়ে লেখা, সেটা বাদ দিয়েছে।’

ফখরুল ইমাম সংসদ অধিবেশনে নিজের বক্তব্যে আরও বলেন, ‘পঞ্চম শ্রেণির বইয়ে ‘বই’ নামক একটা কবিতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেটা ধর্মীয় গ্রন্থ আল কোরআন বিরোধী কবিতা। আর ষষ্ঠ শ্রেণিতে ‘লাল গরু’ নামক একটি ছোট গল্প আনা হয়েছে যা মুসলিম শিক্ষার্থীদের শেখানো হচ্ছে গরু হচ্ছে মায়ের মতো, তাই গরু জবাই করা ঠিক নয়। অর্থাৎ হিন্দুত্ববাদ। সপ্তম শ্রেণির বইতে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘লালু’ নামক একটি গল্প ঢুকানো হয়েছে। যাতে শেখানো হচ্ছে হিন্দুদের কালীপূজা ও পাঠা বলির কাহিনী। অষ্টম শ্রেণির বইতে হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ রামায়ণের সংক্ষিপ্ত রূপ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।’

এক ধর্মের বিষয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভূক্ত করা ও অন্য ধর্মের বিষয়কে বাদ দেওয়া হয়েছে- এমন প্রসঙ্গ তুলে জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘এইগুলো কিসের আলামত? আমরা সবাই একসঙ্গে থাকতে চাই, কিন্তু একটা ধর্মের গ্রন্থকে বাদ দিয়ে আরেকটা ধর্মের প্রাধিকার দিয়ে সেখানে আপনি সংস্কৃতি বদলের চেষ্টা করবেন, সেটা কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অবশ্যই দেখতে হবে।’

পাঠ্যবই নিয়ে একজন সংসদ সদস্যের এমন অযাচিত বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সংসদ সদস্যদের এমন ভুল তথ্য দেওয়া দুঃখজনক। তিনি নিজের ভুল স্বীকার করে বক্তব্য প্রত্যাহার করতে বলেছেন, এটা থেকে সংসদ সদস্যদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।’

সুজন সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের সংসদ সদস্যদের বিষয়ে এক ধরনের দায়মুক্তি আছে, তাদের বিরুদ্ধে কেউ যেতে পারে না। বিভিন্ন সময় তারা আমার বিরুদ্ধেও কুৎসা করেছে। অনেক মান্যগন্য ব্যক্তিকে নিয়ে এমন কুৎসা ও মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়। তাদের আচরণবিধি ঠিক থাকার কথা। আমরা ২০১৪ সালে সংসদ সদস্যদের আচরণের বিষয়ে একটি প্রস্তাব দিয়েছিলাম, সেটা সংসদে উত্থাপন হয়নি।’

শিক্ষাবিদ সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘রাজনীতিবিদরা কখন কী বলেন তার কোনো ঠিক নেই। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলে থাকেন। তারা সকালে বলেন এক কথা, আবার বিকেলে চাপে পড়ে বলেন আরেক কথা। তাদের কথার ওপর বক্তব্য দেওয়া বা সেটাকে গ্লোরিফাই করা আমার কাজ না।’

(ঢাকাটাইমস/৩জুলাই/মোআ)