পাল্টাপাল্টি অভিযোগের গোয়েন্দা অনুসন্ধান শুরু দুদকের

প্রকাশ | ০৪ জুলাই ২০২২, ০৮:৩৫ | আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২২, ০৮:৫৯

সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকাটাইমস

১১৬ জন আলেমকে ‘ধর্ম ব্যবসায়ী’  উল্লেখ করে তাদের আর্থিক লেনদেনের তদন্ত চেয়ে করা গণকমিশনের অভিযোগের বিষয়ে গোয়েন্দা অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। অপরদিকে ওই আলেমদের পক্ষ থেকে গণকমিশনের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য করা আবেদনেরও তথ্য যাচাই বাছাই চলছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, গণকমিশনের তরফ থেকে ১১৬ জন আলেমের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের সত্যতা নিরূপণের জন্য দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের টিম গঠন করা হয়। ওই কমিটির প্রাথমিক তথ্যানুসন্ধানকালে কমিশনে আলেমদের পক্ষ থেকে পাল্টা অভিযোগ করা হয়। এমন বাস্তবতায় কমিশন কিছুটা বিব্রত হয়। এমনিতেই অলেমদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি স্পর্শকাতর, তার ওপর আলেমরা যখন স্মারকলিপি দিয়ে গণকমিশনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করতে বলেন, তখন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দ্বিধায় পড়েন। এমনকি কমিটির একজন কর্মকর্তা তদন্ত করতে অপারগতা প্রকাশ করেন বলেও জানা যায়।

এমন প্রেক্ষাপটে দুই পক্ষের বিষয়টি কমিশনের গোয়েন্দা বিভাগের মাধ্যমে খোঁজ নিতে বলা হয়। ফলে অভিযোগ আমলে নেওয়া হলেও আনুষ্ঠানিক কোনো অনুসন্ধান বা তদন্ত শুরু হয়েছে- এমনটি বলা যাচ্ছে না। কমিশন থেকেও বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, আলেমদের সম্পদ ও আর্থিক বিষয় অনুসন্ধান করতে তারা কমিটি করলেও এই বিষযে এখনই আনুষ্ঠানিক কোনো অনুসন্ধান শুরু করেনি সংস্থাটি।

গত ১১ মে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সমন্বয়ে গঠিত গণকমিশনের পক্ষ থেকে  বিচারপতি  শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজসহ পাঁচ সদস্যের একটি টিম দুদকে হাজির হয়ে ১১৬ জন আলেমের বিরুদ্ধে তদন্তের আবেদন করেন। গণকমিশন থেকে দুই হাজার ২১৫ পৃষ্ঠা সম্বলিত একটি শ্বেতপত্রও দুদক চেয়ারম্যানের কাছে তুলে দেন তারা। আলেমদের আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি তাতে তুলে ধরা হয়। এর প্রেক্ষিতে দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- উপপরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও আহসানুল কবির পলাশ। তবে তাদের কাছে অভিযোগ সংক্রান্ত কোনো নথি হস্তান্তর করা হয়নি বলে জানা যায়। কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘প্রথমে তথ্য অনুসন্ধানের জন্য দেওয়া হলেও বিষয়টি এখন গোয়েন্দা শাখা থেকে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

দুদকের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক মীর জয়নুল অবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে ওই বিভাগের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। জানা গেছে, ওই বিভাগ থেকে একাধিক কর্মকর্তা তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করছেন। গণকমিশনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া সাপেক্ষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান একজন  দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।

অপরদিকে গত ২৩ মে সংক্ষুব্ধ আলেমদের পক্ষে ইসলামি কালচারাল ফোরামের মহাসচিব মাওলানা মো. নাজমুল হক স্বাক্ষরিত গণকমিশনের কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে তাদের সম্পদের উৎস, ব্যাংক হিসাব, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। 

উভয় পক্ষের আভিযোগের তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এটা নতুন করে অনুসন্ধান বা তদন্ত  করছে না দুদক। তবে দুদক থেকে যে কমিটি করা হয়েছে সেই কমিটি দেখবে গণকমিশনের সেই ২ হাজার ২১৫ পাতার  শ্বেতপত্রে কী আছে। সেটা সারসংক্ষেপ কমিশনের কাছে জমা দেবে।’

তবে আলেমদের বিরুদ্ধে গণকমিশনের এই তালিকা দেওয়াকে ইসলাম বিদ্বেষী বলে আখ্যা দিয়েছেন হেফাজত আমির আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। তিনি বলেন, ‘ভুঁইফোঁড় সংগঠনটি বরাবরের মতোই নিজেদের ইসলাম বিদ্বেষী চেহারা জাতির সামনে উন্মোচিত করেছে। তাদের এই শ্বেতপত্র সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট এবং মিথ্যা তথ্যে ভরপুর।’

হেফাজত আমির বলেন, ‘এই সংগঠন দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার পাঁয়তারা চালিয়ে আসছে। সর্বশেষ তারা দেশবরেণ্য ওলামা-মাশায়েখ এবং ইসলামি আলোচকগণের এ তালিকা প্রকাশ করে চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছে।’

গণককমিশনের দেওয়া এই তালিকার সমালোচনা করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘গণকমিশনের লোকজনই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। দুর্নীতি ও অর্থপাচারের সঙ্গে কোনো আলেম জড়িত নন। যারা আলেম এবং কওমি মাদ্রাসার বিরুদ্ধে লেগেছে তারাই এসবের সঙ্গে জড়িত।’

ঢাকাটাইমস/০৪জুলাই/