আখাউড়ায় নারী মুক্তিযোদ্ধার ‘বীর নিবাসে’ ২০ ফাটল

প্রকাশ | ০৪ জুলাই ২০২২, ১০:৪৯

হান্নান খাদেম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের আমোদাবাদ গ্রামের নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা সরমিলা দেবকে ২০১৮ সালে ‘বীর নিবাস’ নামে একটি পাকা ঘর নির্মাণ করে দেয় সরকার। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত অবদানের জন্য ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ঘরের নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করে।  স্বপ্নের সেই ঘর পেয়ে ওই নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা যারপর নাই খুশি হয়েছিলেন। এই ঘর তাকে দিয়েছিল নিরাপদ ও শান্তি সুখে বসবাসের একটু আশ্রয়। দিয়েছিল সম্মান, সামাজিক মর্যাদা। কিন্তু স্বপ্নের সেই ঘর মাত্র চার বছরের ব্যাবধানে ফাটল ধরেছে। খসে পড়ছে পলেস্তরা। বৃষ্টির পানি চুইয়ে পড়ছে ঘরে। পলেস্তরা পড়ে আহত হওয়ার শঙ্কায় দিন কাটছে এই বীর মুক্তিযোদ্ধার।

সরমিলা দেব আমোদাবাদ গ্রামের মহেন্দ্র দেবের মেয়ে। তারা দুই বোন বীর মুক্তিযোদ্ধা। আরেক বোন হলেন গীতা দেব।

আখাউড়া উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ২০১৮ সালের মাঝামাঝিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর উপজেলার আমোদাবাদ গ্রামের নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা সরমিলা দেবকে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি পাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়। ওই সময় উপজেলায় ১০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বীর নিবাস নির্মাণ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে সরমিলা দেব একজন।

ঘরটিতে দুটি শয়নকক্ষ, একটি প্রশস্ত বারান্দা ও শৌচাগার আছে। হাঁস, মুরগি পালনের জন্য পৃথক শেড এবং একটি নলকূপ। ঘরটি নির্মাণের ৭/৮ মাস পর থেকেই ছোট ছোট ফাটল দেখা দেয়, যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সরজমিনে দেখা গেছে, ঘরের দেয়ালের ভেতরে, বাইরে, বাথরুমে ছোট বড় প্রায় ২০টি ফাটল রয়েছে। মেঝের বিভিন্ন স্থানে ফাটল। ছাদের কয়েকটি স্থানে পলেস্তরা খসে পড়েছে। রঙ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে ঘরের রঙ। বাথরুমের ফাটল দিয়ে পানি পড়ে।

এ ব্যপারে বীর মুক্তিযোদ্ধা সরমিলা দেব বলেন, আমার কোন ছেলে সন্তান নাই। চারটি মেয়ে। স্বামী মারা গেছে প্রায় ১৮ বছর আগে। ঘরের জন্য আমি অনেক কষ্ট করেছি। কিন্তু সরকারের ঘর পাওয়ার ৭/৮ মাস পর থেকেই ঘরে ফাটল দেখা দেয়। তারপর আমি ঘরের ঠিকাদার ইসমাইল হোসেনকে বাড়িতে এনে ফাটল দেখিয়েছি। পরে ফোনেও কয়েকবার বলেছি। কিন্তু তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি। দিন দিন ফাটল বাড়ছে।

তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ঘরটা তো ফাটছে না, মনে হয় আমার হৃদয়টা ফেটে গেছে। কখন আস্তর ভেঙে আমার মাথায় পড়ে সেই ভয়ে থাকি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, নারী বলেই হয়তো আমার ঘরের কাজটি ঠিকমত করেনি।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সৈয়দ জামসেদ শাহ বলেন, নির্মাণের ৪ বছরের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার ঘরে ফাটল দেখা দেওয়া দুঃখজনক। বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। তিনিসহ উপজেলায় মাত্র তিনজন নারী মুক্তিযোদ্ধা। এর মধ্যে তারা দুই বোন। আখাউড়ায় প্রায় ৬০০ মুক্তিযোদ্ধা বলে জানান তিনি। 

ঘরের ফাটলের বিষয়টি ঠিকাদার ইসমাইল হোসেনকে অবগত করলে তিনি দেখবেন বলে জানান।

উপজেলা প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম সুমন বলেন, সঠিকভাবে কিউরিং না হলে ফাটল হতে পারে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অংগ্যজাই মারমা বলেন, আমি উপজেলা প্রকৌশলীকে দিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

(ঢাকাটাইমস/০৪জুলাই/এলএ)