পদ্মা সেতু নিয়ে যে কারণে বিএনপির ‘গা জ্বলে’

সিলভীয়া পারভীন লেনী
| আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২২, ১৬:৪৯ | প্রকাশিত : ০৪ জুলাই ২০২২, ১৫:৪৭

২৫ জুন পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন হয়েছে। এটা সেই সেতু যার প্রতিটা পিলার ও স্প্যানের সাথে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের মানুষের আত্মমর্যাদা, আত্ম-অহংকার এবং ভালোবাসার অপূর্ব নিদর্শন। বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রথম থেকে শেষ অবধি পদ্মা সেতু প্রকল্পকে যেভাবে তুলে ধরেছে, তা অবাক করার মতো। সত্যিই প্রতিটি কনক্রিটের খবর জেনেছে বাংলাদেশের মানুষ।

শুধু তাই নয় এটি নিয়ে দেশি ও বিদেশি বহুমুখী যে ষড়যন্ত্র ছিল তার নাগপাশ ছিন্ন করে, সব কুচক্রী মহলকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক যোগ্য নেতৃত্বে পদ্মা সেতু বাস্তব রূপ পেয়েছে। তা দেখে মাথা বিগড়ে গেছে একটি মহলের।

যেসব জ্ঞানপাপী, যারা সব সময় দেশের অমঙ্গল কামনা করেন, দেশের মানুষের সাথে যাদের কোনো সম্পর্ক নেই, সব সময় যারা মেতে থাকেন নানা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে, পদ্মা সেতুর এ বাস্তব রূপ দেখে তারা এখনো পাগলের প্রলাপ বকে চলেছেন। মাত্র ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের হাত ধরে আজ বাংলাদেশ সগর্বে মাথা উঁচু করে পৌঁছে গেছে উন্নত দেশের দ্বারপ্রান্তে। এদেশের স্বপ্নের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ মেগা প্রকল্পগুলো দেখে আজ দেশবিরোধী কুচক্রী মহলের আঁতে ঘা লেগে যেন উন্মাদ হয়ে গেছে। একের পর এক মিথ্যা তথ্য ও সমালোচনা করে গুগলে রেকর্ড গড়েছেন ওই মিথ্যাবাদীরা, যা আজ পুরো জাতির কাছে স্পষ্ট।

অত্যন্ত উদ্বেগ ও দুঃখের সঙ্গে পরিলক্ষিত হচ্ছে, বিএনপির নেতারা স্বয়ং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পদ্মা সেতু নিয়ে একের পর এক মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ করছেন যা অতি নিন্দনীয়। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। কিন্তু বেগম জিয়া ও তার দলের মিথ্যাচার আজ বাংলাদেশের মানুষের কাছে প্রমাণিত। বহুমাত্রিক বিদেশি ষড়যন্ত্র ভেদ করে দৃঢ় মনোবল নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে এদেশের আপামর জনতা তার পাশে থেকে এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেছে এবং আজ পদ্মা সেতু আমাদের গর্বের প্রতীক।

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির নেতাদের গায়ের জ্বালা আরও বেশি স্পষ্ট হয় তাদের প্রতিনিয়ত মিথ্যাচারে। স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত প্রকল্পের মাধ্যমে পদ্মা সেতু বাস্তবে পরিণত হয়েছে এবং উল্লেখ্য যে বিশ্বব্যাংকও পরবর্তীতে তাদের ভুল স্বীকার করেছে তা আমাদের সবারই জানা। কিন্তু ওই সব দেশবিরোধীরা, পাঁচ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েও যাদের লজ্জা নেই, তারাই আবার আজ পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, যা নিতান্তই হাস্যকর।

আজ পদ্মা সেতু দেশবিরোধী ওই সব নির্লজ্জ চক্রের জন্য ঈর্ষা ও বিদ্বেষের উপলক্ষ। পদ্মা সেতুর সফল বাস্তবায়ন দেখে তারা জ্বলে-পুড়ে মরছে ঈর্ষায়। কারণ শত চেষ্টা করেও, নানাভাবে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের পালে হাওয়া দিয়েও তারা সেতুর কাজ থামাতে পারেনি। তারা কখনো পারবেনও না। বাংলাদেশকে আর কখনোই পেছনের দিকে টানতে পারবে না এই কুচক্রী মহল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও জননেত্রী শেখ হাসিনা তা কখনোই হতে দেবেন না।

সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান অধ্যাপক শামীম জেড অসমীয়া পদ্মা সেতু নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করেছেন। সেখানে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন ২০১২ সালের শেষের দিকে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঋণদানে অস্বীকৃতি জানানোর সময়ে একটি অনুষ্ঠানে তাঁকে এবং প্রয়াত অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করার নির্দেশনা দেন। ক্রমাগত দেশি-বিদেশি চক্রান্তকে পেছনে ফেলে মাত্র ছয় মাসের মাথায় অর্থাৎ ২০১৩ সালের মার্চে দাপ্তরিকভাবে পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্মাণকাজ যাত্রা করে। কিন্তু ওই সব ষড়যন্ত্র না থাকলে সেতুর কাজ আরও আগে শুরু করা যেত।

অধ্যাপক শামীম জেড অসমীয়া আরো উল্লেখ করেন, সম্প্রতি বাংলাদেশের বৃহৎ প্রকল্পগুলোতে আধুনিক নির্মাণসামগ্রী ব্যবহৃত হচ্ছে যা সরবরাহ করা আমাদের দেশীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা নেই এবং তারা কেবল রাস্তা নির্মাণের জন্যই উপযুক্ত। এ কারণে বিদেশি বৃহৎ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তাদের বিশাল কর্মযজ্ঞে আমাদের দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো উপ-ঠিকাদার হিসেবে যোগ দিয়ে কাজ শুরু করে। এই অত্যাধুনিক নির্মাণসামগ্রী ও সময়ের দীর্ঘ ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে সব পণ্যের দাম বাড়তে থাকায় মূলত পদ্মা সেতুর ব্যয় প্রাক্কলিত হিসেবের চেয়ে বেশি প্রয়োজন হয়, যা অত্যন্ত যৌক্তিক।

কিন্তু দুঃখজনক হলো বিএনপি ও কিছু কুচক্রী মহল পদ্মা সেতু প্রকল্পে অধিক ব্যয় করা হয়েছে বলে গলা ফাটাচ্ছে। তারা জেনে বুঝেই এ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে আমরা মনে করি। কারণ এই প্রকল্পে একটি বৃহৎ অংশের জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন, নদী শাসন, মূল সেতুতে রেললাইন সংযোজন ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার সেতুর ব্যয় সংগত কারণই সামান্য বাড়িয়েছে। ব্যয় কিছু বাড়লেও মানের সাথে কোনো আপস করা হয়নি পদ্মা সেতুতে। বিশ্বমানের সর্বোচ্চ মানসম্মত উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে এখানে।

সম্প্রতি বিএনপি থেকে বলা হয়েছে ঋণ করে সেতু তৈরি করলে কী সমস্যা হতো? কিন্তু পাগলেও বোঝে ঋণ কতটা ভয়ানক। একটি উদাহরণ দেয়া যাক, গ্রামীণ ব্যাংকের পল্লী ঋণের খপ্পরে পড়ে দেশের তৃণমূলের কত মানুষ যে সর্বস্বান্ত হয়েছেন, তার হিসাব আমরা কেউ সঠিকভাবে দিতে পারব না। বরং আমরা জানি ওই সব ভুক্তভোগীর কথা, যারা তাদের নাকের ফুল, কানের দুল, বাড়ির টিন, গবাদিপশু বিক্রি করে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে পথে বসেছেন। যার পরিণতি ছিল অত্যন্ত নিন্দনীয়।

এরপরেও এটা বাস্তব যে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মেগা প্রকল্প তৈরি করতে বিদেশি ঋণ প্রয়োজন হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে পদ্মা সেতু তৈরি করতে বিশ্বব্যাংকের কাছে সরকার যৌক্তিকভাবে ঋণ সহায়তা চেয়ছিল। কিন্তু তারা বিশেষ কোনো একজন ব্যক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পদ্মা সেতুতে দূর্নীতি হয়েছে বলে উল্টো মামলা দায়ের করে কানাডার একটি আদালতে। ফলে প্রাথমিকভাবে পদ্মা সেতু প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ে। কিন্তু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সব বাধা এবং মিথ্যা মামলার প্রতিবন্ধকতা দূর করে কোনো ধরনের আর্থিক ঋণ সহায়তা ছাড়াই আজ পদ্মা সেতু সচল। রাত-দিন তার ওপর দিয়ে চলছে যানবাহন।

মনে করতে পারি, কানাডার আদালতে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এরপরেও বিএনপির নেতারা বলেন পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে! কিন্তু এই জাবরকাটা মিথ্যা বুলি তারা আজ অবধি কোনো তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রমাণ করতে পারেনি। পারবেও না কোনোদিন। যা ঘটেইনি, তা প্রমাণ করবে কীভাবে!

একটা দেশের উন্নতির জন্য তার অবকাঠামোর উন্নয়ন সবচেয়ে জরুরি। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সঙ্গে রাজধানীসহ পুরো দেশের যোগাযোগ স্থাপন করার পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে পদ্মা সেতু কতটা ভূমিকা রাখতে পারে, আজ তা একজন সাধারণ মানুষও বলতে পারেন। পদ্মা সেতুর সঙ্গে রেলসেতু প্রকল্প যুক্তকরণ আরেকটি মাইল ফলক। আমরা জানি ওপারের মানুষ যারা প্রতিনিয়ত সারাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য, চলাচল করবেন তাদের জন্য রেল যোগাযোগ কতটা সাশ্রয়ী।

পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিদেশি ঋণ না পাওয়াকে বিএনপি ব্যর্থতা হিসেবে বলছে। কিন্তু এই না পাওয়া কোনো ব্যর্থতা নয় বরং এই ষড়যন্ত্রের ঋণ না পেয়েই আমরা শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে নিজস্ব অর্থায়নে আত্মমর্যাদার প্রতীক হিসেবে সারা বিশ্বের মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি এবং পেয়েছি আমাদের স্বপ্বের সেতু।

পদ্মা সেতু নিয়ে বিএনপির নতুন কিছু বলার নাই। কারণ তারা আগেও কখনো পারেনি সঠিক তথ্য-উপাত্ত দিয়ে প্রমাণ করতে এ প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়েছে, আর এখনো পারছে না। তাই তারা প্রতিনিয়ত পাগলের প্রলাপ বকছে। তাদের ষড়যন্ত্র সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে।

কথায় কথায় তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু তারা এটা দেখেন না বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়েও এখনো বুক উঁচিয়ে হুমকিদাতা ও তার দোসররা ঘুরে বেড়ায়। টেলিভিশন টকশো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা ফেসবুকে ঢুকলেই দেখা যায় তাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সর্বোচ্চ নমুনা। আসলে চোরের মায়ের বড় গলা এটাই সত্য।

অথচ পদ্মা সেতুর প্রতিটি ইঞ্চি তৈরি হয়েছে জনগণের টাকায় আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ ও মেধাবী বলিষ্ঠ নেতৃত্বে, যা আজ পুরো বিশ্বে সমাদৃত। পদ্মা সেতু আজ আার শুধু সেতু নয়, এ সেতু বাঙালির আত্মমর্যাদা ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রতীক। বিশ্ববাসী আজ চেয়ে চেয়ে দেখছে বাংলাদেশের উন্নয়ন। তারা দেখছে কীভাবে শূন্য থেকে শুরু করে মহাশূন্যে উড্ডয়ন করতে হয়। তারা দেখছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কীভাবে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

দেশের এত উন্নয়ন, এত অর্জন, এত সক্ষমতা তাদের (বিএনপি) সহ্য হয় না। শুধু এই উন্নয়ন দেখেই পদ্মা সেতু নিয়ে বিএনপির এত গা জ্বলে। দেশের সক্ষমতায় তারা ঈর্ষান্বিত হয়। তাদের গা জ্বলুক, তাদের ঈর্ষা হোক, এ নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।

পরিশেষে এটাই বলা যায়, এটাই প্রমাণিত হয়- যত দিন শেখ হাসিনার হাতে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ।

লেখক: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপকমিটির সদস্য।

(ঢাকাটাইমস/৪জুলাই/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :