বিএনপি-জামায়াতপন্থী ডিইউজের বৈঠকে নারী সাংবাদিককে লাঞ্ছনার অভিযোগ

প্রকাশ | ০৪ জুলাই ২০২২, ২০:২৮ | আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২২, ২০:৪৮

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বিএনপি ও জামায়াতপন্থী অংশের ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নে (ডিইউজে) ভুয়া ভোটার তালিকা নিয়ে প্রতিবাদ করায় এক নারী সাংবাদিককে মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামকে প্রধান অভিযুক্ত করে শাহবাগ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।

জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিইউজের অফিসে আজ সোমবার দুপুরে ওই হামলার ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী নারী সাংবাদিকের নাম জিয়াসমিন আক্তার জুঁই ওরফে জেসমিন জুঁই।

জুঁই ডেইলি ট্রাইবুনালের ফটোসাংবাদিক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।

জুই ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন। আমি শাহবাগ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। পুলিশ বলেছে, তদন্তের পর চাইলে মামলা হবে।’

তবে শহিদুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তিনি কাউকে আঘাত করেননি। তার ওপরে হামলা হয়েছে। বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে।

এদিকে জানা গেছে, আজ ডিইউজের নির্বাহী কমিটির সভাকে ঘিরে জাতীয় প্রেসক্লাবে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। জামায়াত সমর্থিত সাংবাদিক ও ছাত্র শিবিরের কর্মীরা সেখানে ব্যাপকভাবে অবস্থান নেয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

ডিইউজের এই অংশের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী বিএনপিপন্থী। সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম জামাতের রুকন বলে প্রচলিত আছে। নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্যদের মধ্যে অনেকে জামায়াতপন্থী।

জানা গেছে, ডিইউজের গত দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, ভুয়া সদস্যদের শনাক্ত করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। কিন্তু ওই সিদ্ধান্তের ১৪ মাস পর কমিটি গঠন করা হয়, যা নিয়ে সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এর মধ্যে ভুয়া সদস্য তালিকা নিয়ে, যাদের অধিকাংশ জামায়াত-শিবির কর্মী, নির্বাচন করার জন্য জামায়াতের অংশটি ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে ওই দলের সদস্যরা দ্রুত ভোট করার উদ্যোগ নিলে বিএনপি সমর্থিত কর্মকর্তা ও সদস্যরা আপত্তি করেন এবং আগে ভুয়া সদস্যদের চিহ্নিত করে বাদ দেওয়ার দাবি জানান।

সোমবারের সভা ঘিরে প্রেসক্লাব এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

থানায় জুঁইয়ের লিখিত অভিযোগ

শাহবাগ থানায় করা লিখিত অভিযোগে জেসমিন জুঁই বলেন, ‘কিছুদিন ধরে আমাদের ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন কিছু অসাংবাদিককে সংযোজন করে ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা তৈরি করেছে। আমিসহ সংগঠনের অন্য কার্যনির্বাহী সদস্যরা বিগত কয়েকটি মিটিংয়ে আপত্তি জানাই এবং এটি সংশোধন করার জন্য দাবি জানাই।’

‘সোমবার দুপুর সোয়া একটার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংগঠনের অফিসে একক সিদ্ধান্তে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার চেষ্টা করলে সেখানে উপস্থিত সব নির্বাহী সদস্যসহ আমি এর প্রতিবাদ করি। এতে প্রধান অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম, গিয়াস উদ্দিন রাকিব এবং ইকবাল মজুমদার তৌহিদসহ অজ্ঞাতনামা আরো তিন-চারজনের একটি দল আমাদের ওপর মারমুখী আচরণ করে।’

লিখিত অভিযোগে জুঁই আরও উল্লেখ করেন, ‘তখন আমি সেখান থেকে চলে যাওয়ার চেষ্টা করি। ওই সময়ে তারা আমাকে গতিরোধ করে আমার উপর অতর্কিত হামলা করে। শহিদুল ইসলাম আমাকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে কিল, ঘুষি মারেন। আমার স্পর্শকাতর অঙ্গে স্পর্শ করে শ্লীলতাহানি করে এবং আমার গলায় থাকা আট আনা ওজনের একটি স্বর্ণের চেইন, যার দাম ৩৫ হাজার টাকা, খুলে নিয়ে যায়।’

‘গিয়াস উদ্দিন রাকিব আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কিল, ঘুষি মেরে জখম করে। ইকবাল মজুমদার তৌহিদ আমার পিছন দিক দিয়ে জামাকাপড় টেনে হেঁচড়ে ছিঁড়ে ফেলে। তখন সেখানে উপস্থিত লোকজন এগিয়ে এলে এই তিনজন আর অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়।’

অভিযুক্তরা ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন অফিসের রেজুলেশন খাতাসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে চলে যায় বলে অভিযোগ করেন জেসমিন জুঁই।

সংগঠনের এ অপ্রীতিকর ঘটনার ব্যাপারে বক্তব্য জানতে ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।

হামলার প্রধান অভিযুক্ত ও ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম  ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এটা একটি সাজানো নাটক। এখানে একটি নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হচ্ছিল। তারা নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনে্ ইচ্ছে করে হট্টগোল বাঁধিয়েছে। এক পর্যায়ে আবদুল হালিম, শাহজাহান সাজু এবং জেসমিন জুঁই ইউনিয়নের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তখন তাদের বাধা দেওয়া হয়।’

জেসমিন জুঁইয়ের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে মামলা নথিভুক্ত করা হবে।’

(ঢাকাটাইমস/০৪জুলাই/এএ/মোআ)