গুরু এন্ড্রু কিশোরের উদ্দেশে শিষ্যর আবেগঘন খোলাচিঠি

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২২, ১১:৩৮ | প্রকাশিত : ০৫ জুলাই ২০২২, ১১:৩১

প্রয়াত কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোরের উদ্দেশে আবেগঘন এক খোলাচিঠি লিখেছেন এই সময়ের শ্রোতাপ্রিয় গায়ক মোমিন বিশ্বাস। সেটি তিনি পোস্ট করেছেন ফেসবুকের পাতায়। এই মোমিন বিশ্বাস একসময় এন্ড্রু কিশোরের শিষ্য ছিলেন। তার কাছে গানের তালিম নিয়েছেন। একসঙ্গে অনেক স্মৃতি তাদের। চলুন তবে দেখে আসি চিঠিতে কী লিখেছেন মোমিন-

‘দাদা নমস্কার,

আমি জানি এবং প্রচন্ড বিশ্বাস করি আপনি যেখানে আছেন নিশ্চয়ই ভালো আছেন! দাদা আপনার মনে আছে একবার কিছু কথা আপনাকে সামনাসামনি বলতে সাহস না পেয়ে চিঠি লিখে জানিয়েছিলাম, আজকে বহুদিন বাদে আপনাকে আবার চিঠি লিখছি...

দেখেছেন কিশোর দা, দেখতে দেখতে ৬ জুলাই চলে এলো! গুণে গুণে ঠিক ৭২৯ দিন হয়ে গেল! ৬ জুলাই ২০২০ সন্ধ্যাবেলায় আপনাকে শেষবারের মতো নিজের হাতে যে সাবান দিয়ে গোসল করিয়েছিলাম এখনো হাত শুঁকলে সেই সাবানের গন্ধ পাই! সেদিন গোসল করানোর সময় বারবার ভেবেছিলাম এই বুঝি আপনি আমার হাত চেপে ধরবেন। কিন্তু আপনি ধরেননি দাদা, এতবার ডেকেছি একটা কথাও বলেননি।

হিমঘরে গিয়ে ৯টা দিন আপনাকে কত ডেকেছি কিন্তু কোন সাড়া দেননি দাদা?? অথচ আপনি তো এমন না, জীবনে কোনোদিন আপনাকে একবারের বেশি দুবার ডাকতে হয়নি, না ফোনে না সামনাসামনি!!

দাদা, ৩ জুলাই ২০২০ সকালবেলা আপনি কাছে ডেকে অনেক কথা বলে গেছেন! আমি যখন কাঁদতে কাঁদতে আপনাকে বলছিলাম-‘দাদা আমি তো এতিম হয়ে যাব, আপনাকে ছাড়া আমি কী নিয়ে থাকব? আপনি তখন শিখা দিদি এবং বউদির সামনে বলেছিলেন- ‘কাঁদবিনা পাগল কাঁদবিনা, আমার পাঞ্জাবীগুলো পরে আমার গান গাবি আমি তো তোর মাঝেই আছি।

দাদা, এই কথাটা বলে আপনি অনেক বড় ভুল করেছিলেন!! কিছু মানুষ আপনাকেই মিথ্যা বানিয়ে দিয়েছে, যদিও তাদের সম্পর্কে আগেই বলেছেন, আমিই বিশ্বাস করতে চাইনি।

দাদা, আমি আজও পারিনি আপনার কাপড় চোপড় পরে আপনার গান গাইতে! আমার আলমারিতে রাখা আপনার কাপড়গুলো প্রতিদিন হাত দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে আবার রেখে দিই। কিন্তু কোনোদিন পরে আপনার গান গাইতে পারি না। আপনি আদেশ না করে গেলে হয়তো আপনার গানই কখনো আর গাইতাম না!

আমাকে ক্ষমা করবেন দাদা, আমি আপনার কিছু আদেশ পালন করতে পারিনি। কেন পারিনি সেই উত্তরটা মহাকালের কাছেই রেখে দিলাম!

আমাকে ক্ষমা করবেন দাদা, আমি আরও অনেক কিছুই পারিনি! জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত আপনি সবাইকে আগলে রেখে একসাথে বাঁচতে শিখিয়েছেন। কিন্তু আপনার শূন্যতায় অকৃতজ্ঞ মানুষরা নিজের মতো করে আমাকে বাঁচতে শিখিয়েছে!!

দাদা, আপনার বলা প্রতিটি ভবিষ্যত বাণী সঠিক হয়েছে এবং হচ্ছেও! এখন আমি সবাইকেই চিনে গেছি দাদা! অথচ এই মানুষগুলোকে নিয়ে আপনার সাথে তর্ক করেছি! দিনশেষে আপনার সব কথাই সঠিক হয়েছে, আমি হেরে গেছি দাদা! আপনাকে অনেকেই ভুলে গেছি আমরা।

দাদা, এক বছর হতে চলল আমি বিয়ে করেছি! অথচ আমার বিয়ে নিয়ে আপনার সে কী মস্ত পরিকল্পনা ছিল! আপনার আশীর্বাদে আমরা ভালো আছি দাদা।

দাদা, ৩ জুলাই ২০২০ আপনি বলেছিলেন খুব তাড়াতাড়ি যেন আম্মার অপারেশনটা করাই! আমি তাই করেছি দাদা! এবং অপারেশন শেষে আমি অবচেতন মনে আপনাকেই ফোন দিয়ে ফেলেছিলাম! অনেক পরে মনে হয়েছিল আপনি তো এখন সমস্ত যোগাযোগের বাইরে।

ক্ষমা করবেন দাদা, আমি আপনার ফোন নম্বরটা ফোন থেকে ডিলিট করে দিয়েছি। কিন্তু মনের ভেতরে যেভাবে মুখস্থ গেঁথে আছে, সেটা তো ডিলিট করার কোনো উপায় জানি না দাদা! আমি কী করব?

আপনি আছেন দাদা, আমার সমস্ত প্রার্থনায়, আমার শ্রদ্ধায়, আমার ভালোবাসায়, আমার সবকিছু জুড়েই আছেন। শুধু দেখা হয় না কথা হয় না, এইটুকুই পার্থক্য। আবার দেখা হবে দাদা, নিশ্চয়ই দেখা হবে! এই গ্রহের বাইরে অন্য কোথাও নিশ্চয়ই দেখা হবে......।

(ঢাকাটাইমস/০৫ জুলাই/এএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিনোদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :