হুমায়ূন আহমেদের নাটকের শিল্পীরা কে কোথায় (পর্ব-৪)

প্রকাশ | ০৫ জুলাই ২০২২, ১৭:৪০

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

কিংবদন্তি নাট্য ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে কাজ করে পরিচিতি পেয়েছিলেন অনেক অভিনয়শিল্পী। হুমায়ূন আহমেদ নেই। তার নাটক ও সিনেমার সেই শিল্পীরা কে কোথায়-এর গত তিন পর্বে আমরা খুবই জনপ্রিয় কয়েকজন তারকাকে নিয়ে আলোচনা করেছি। এ পর্বে আমরা জানাবো আরও তিনজন অভিনেয়শিল্পী সম্পর্কে, যারা একসময় নিয়মিত কাজ করতেন হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে।

মেহের আফরোজ শাওন: নৃত্যশিল্পী হিসেবে শাওন বাংলাদেশি শিশুশিল্পীদের রিয়েলিটি শো প্রতিযোগিতা ‘নতুন কুঁড়ি’তে বিজয়ী হন। ১৯৯৬ সালে হুমায়ূন আহমেদের ‘নক্ষত্রের রাত’ ধারাবাহিক নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিনয় জীবন শুরু করেন। তখনও তিনি শিশু। এরপর তিনি হুমায়ূন আহমেদের নাটক-সিনেমার নিয়মিত শিল্পী হয়ে ওঠেন। এই নির্মাতার জন্যই দেশব্যাপী পরিচিতি পান শাওন।

হুমায়ূন আহমেদ রচিত ও পরিচালিত আজ রবিবার, এনায়েত আলীর ছাগল, টোয়েন্টিফোর ক্যারেট ম্যান, পুষ্প বিলাস, তারা তিনজন, হাবলঙ্গের বাজারে, উড়ে যায় বকপক্ষী, সমুদ্র বিলাস প্রাইভেট লিমিটেড, এই বর্ষায়, চৈত্র দিনের গান, যমুনার জল দেখতে কালো’সহ অনেক নাটকে অভিনয় করেন শাওন। এছাড়া হুমায়ূন আহমেদের শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, শ্যামল ছায়া এবং আমার আছে জল সিনেমাগুলোতেও তাকে দেখা গেছে।

দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাজ করতে করতে একসময় হুমায়ূন আহমেদের এতটাই প্রিয় হয়ে ওঠেন শাওন যে, তাকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী বানিয়ে ফেলেন। এ সংসারে নিশাদ ও নিনিত নামে অভিনেত্রীর দুটি ছেলেসন্তানও হয়। শাওন বর্তমানে অভিনয়ে একেবারেই অনিয়মিত। গানেও তাকে দেখা যায় কালেভদ্রে। বর্তমানে স্থাপত্য প্রকৌশলী হিসেবে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন শাওন।

শীলা আহমেদ: হুমায়ূন আহমেদের মেঝো মেয়ে তিনি। বাবার রচনা ও পরিচালনায় শীলা আহমেদ প্রথম কাজ করেন ‘বহুব্রীহি’ নাটকটিতে। পরবর্তীতে ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘প্রিয় পদরেখা’, ‘হিমু’, ‘আজ রবিবার’, ‘খোয়াব নগর’, ‘নক্ষত্রের রাত’ নাটকগুলোতে অভিনয় করেন শীলা। সবগুলো নাটকের রচয়িতা এবং পরিচারক তার বাবা হুমায়ূন আহমেদ।

নাটকের পাশাপাশি বাবার পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমনি’ সিনেমাটিতেও দেখা মিলেছে শীলা আহমেদের। সিনেমাটিতে অভিনয়ের জন্য ১৯৯৪ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী বিভাগে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ও জিতেছেন। শীলা অভিনয় ছেড়েছেন বহু আগে। ২০১৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও কলাম লেখক আসিফ নজরুলকে বিয়ে করে চুটিয়ে সংসার করছেন।

শামীমা নাজনীন: এই অভিনেত্রীর শোবিজ যাত্রা শুরু ১৯৯৬ সালে। সে সশয় তিনি নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে মঞ্চ নাটকে অভিনয় শুরু করেন। পরবর্তীতে কাজ শুরু করেন হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে। এই নির্মাতার হাবলঙ্গের বাজারে, গৃহসুখ প্রাইভেট লিমিটেড, সমুদ্র বিলাস প্রাইভেট লিমিটেড, চোরসহ বেশ কিছু নাটকে দেখা গেছে শামীমা নাজনিনকে।

এছাড়া হুমায়ূন আহমেদের শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী এবং ঘেটুপত্র কমলা সিনেমাগুলোতেও অভিনয় করেছেন শামীমা নাজনিন। এর মধ্যে ‘দুই দুয়ারী’ সিনেমার জন্য সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী হিসেবে ‘বাচসাস’ পুরস্কার পান তিনি। ২০১২ সালের ঘেটু পুত্র কমলা সিনেমায় অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে পান ‘মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার’। শামীমা নাজনিন এখনো সুনামের সঙ্গে টিভি নাটকে অভিনয় করে চলেছেন।

মনিরা মিঠু: হুমায়ূন আহমেদের অন্যতম সৃষ্টি অভিনেতা চ্যালেঞ্জারের ছোট বোন তিনি। বড় ভাইয়ের মতো মুনিরা মিঠুরও ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরে। প্রথম নাটক ‘অপেনটি বায়োস্কোপ’। পরবর্তীতে হুমায়ূন আহমেদের ‘বুয়া বিলাস’, ‘বৃক্ষ মানব’, ‘দুই দুকোণে চার’, ‘জুতা বাবা’সহ বেশ কিছু নাটকে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করেন।

এর পাশাপাশি হুমায়ূন আহমেদের চন্দ্র কথা এবং আমার আছে জল সিনেমা দুটিতেও অভিনয় করেছেন মনিরা মিঠু। হুমায়ূন আহমেদ নেই, তবে এই অভিনেত্রীর ক্যারিয়ারে একটুও ভাটা পড়েনি। এখনো তিনি সেই নব্বইয়ের দশকের মতো ব্যস্ত। নাটকে বর্তমানে নায়ক বা নায়িকার মায়ের চরিত্রে মুনিরা মিঠুর বেশ কদর। ২০২০ সালে চয়নিকা চৌধুরীর প্রথম সিনেমা ‘বিশ্বসুন্দরী’তেও তাকে দেখা যায়।

(ঢাকাটাইমস/০৫ জুলাই/এএইচ)