হেনোলাক্স গ্রুপের এমডি ফাতেমার ফাঁদে পড়েছিলেন ব্যবসায়ী আনিস!

আবদুল হামিদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২২, ১৫:৫৬ | প্রকাশিত : ০৫ জুলাই ২০২২, ২২:৫৫
গাজী আনিস (বামে) ও সাদা পোশাক পরা আমিন দম্পতি। ছবি: সংগৃহীত

হেনোলাক্স গ্রুপের এমডি ফাতেমা আমিনের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয়ের একপর্যায়ের সখ্য গড়ে ওঠে ব্যবসায়ী গাজী আনিসের। পরে হেনোলাক্স গ্রুপে বিনিয়োগ করার প্রলোভন দেখিয়ে ওই নারী জুয়া খেলার টাকা নিতেন তার কাছ থেকে। এভাবে ফাতেমার জুয়া খেলার টাকা জোগান দিতে গিয়ে দেনার জাতাকলে পড়েন এই ব্যবসায়ী।

আনিসের ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপে এসব কথা উঠে এসেছে।

গাজী আনিস সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। মঙ্গলবার সকালে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

আনিসের মৃত্যুর ঘটনায় দুপুরে শাহবাগ থানায় আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলা করেন আনিসের বড় ভাই। সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরা থেকে হেনোলাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান নূরুল আমিন ও এমডি ফাতেমা আমিনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

আনিস তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া সর্বশেষ স্ট্যাটাসে জানান, হ্যানোলাক্স গ্রুপের নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী এমডি ফাতেমা আমিন তার কাছ থেকে ব্যবসায় বিনিয়োগ ও লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা নেন। কিন্তু টাকা নিয়ে তারা পরে আর কথা রাখেননি।

এর আগে আনিসের সঙ্গে হ্যানোলাক্স পরিবারের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের বাসায় নিয়মিত যাওয়া-আসা এমনকি দেশের বাইরে ঘুরতে তাদের সেঙ্গ ঘুরতে গেছেন আনিস।

হেনোলাক্স গ্রুপের কর্ণধারের বাসায় আসা-যাওয়া নিয়ে কিছুদিন পরপর ঢাকায় আসা, তাদের সঙ্গে দেশের বাইরে যাওয়া- এসব বিষয় নিয়ে আনিসের দাম্পত্য জীবনে অশান্তি তৈরি হয়। একপর্যায়ে আনিসের স্ত্রী তিন সন্তান নিয়ে আলাদা থাকতে শুরু করেন। পরে তা বিবাহবিচ্ছেদে গড়ায়।

তবে আনিসের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, কয়েক মাস ধরে আবার আগের স্ত্রীর কাছে যাওয়া-আসা করতে থাকেন আনিস।

আনিসের ভবনের পাশের ফ্ল্যাটে আনোয়ার নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘গাজী আনিস এবার ঢাকায় যাওয়ার আগে কুষ্টিয়ায় নিজের ফ্ল্যাটের পাশের একজনের মাধ্যমে তার ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল বিক্রি করে দেন। তার কাছে জানতে চাইলে আনিস জানান, দেশের বাইরে যাবেন বলে সব বিক্রি করে দিচ্ছেন।’

আনোয়ার বলেন, ‘গত রবিবার মোটরসাইকেল বিক্রি করা টাকা নিতে আসেন আনিস। টাকা নিয়ে যশোরে স্ত্রী ও মেয়েদের সঙ্গে দেখা করে ঢাকায় যান বলে শুনেছি। আনিস ভাই বাসায় একাই থাকতেন। আমি একবার ভাবিকে দেখেছি কুষ্টিয়ার এই বাসায় আসতে।’

আনিস পেশাজীবনের শুরুতে দশ বছর গ্রামীণ ব্যাংকে অফিসার পদে চাকরি করেন বলে জানান তার মামাতো ভাই কে এম তানভীর ঈমাম। পরে দুটি ট্রাক কিনে ব্যবসা শুরু করেন আনিস। পরবর্তী সময়ে কুষ্টিয়া শহরে আনিস ক্লিনিক, ট্রাক, ঠিকাদারি, রেন্ট এ কার ও নার্সিং হাউজের ব্যবসা গড়ে তোলেন। এতে তার শেয়ার হোল্ডার ছিলেন ডা. রতন নামের একজন।

ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করতেন আনিস। কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদ থেকে ছাত্ররাজনীতির ইতি টানেন তিনি। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদে ছিলেন। গাজী আনিস মারা যাওয়ার পর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইউনিটে মরদেহ দেখতে যান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।

গাজী আনিস নিজের শেষ ফেসবুক পোস্টে তুহিন আহমেদ নামের একজনের কথা উল্লেখ করেন, যিনি তার সবকিছু জানেন বলে বলে লিখে যান।

তুহিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ফাতেমা আনিসকে প্রলুব্ধ করেন এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতি মাসে মুনাফা হিসাবে তিন লাখ টাকা পাবেন। আনিস টাকা দেওয়ার পর দুই মাস লভ্যাংশ দেওয়া হয় তাকে। তিন মাসের মাথায় তাকে আরও বিনিয়োগ করতে বলেন ফাতেমা। এ সময় আরও ২৬ লাখ টাকা দিতে বলেন, তাতে এ টাকার বিপরীতে প্রতি মাসে দুই লাখ টাকা লভ্যাংশ দেওয়া হবে। আর দুই বছর পরে এক কোটি ২৬ লাখ টাকার জন্য তিন কোটি টাকা পাবেন।

আনিস এই টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে দিতে চাইলে ফাতেমা জানান, তার কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। তা ছাড়া ব্যাংকের মাধ্যমে দিলে তার স্বামী জেনে যাবেন।

তুহিন আহমেদ বলেন, ‘আনিসের দেওয়া টাকা নগদে লেনদেন হয়। টাকা নেয়ার পরে তাদের সঙ্গে আনিসের সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। তবে ফাতেমার স্বামী হেনোলাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান নূরুল আমিন জানতে পারেন। আর আনিস যে টাকা দিয়েছেন সেটার কোনো আইনি প্রমাণ নেই।’

তিন ধাপে ৬৭ লাখ টাকা উদ্ধার করতে পারেন আনিস। পাঁচ লাখ টাকার চেক ডিজঅনার মামলাসহ দুটি মামলা চলছে। এই দুই মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিনে ছিলেন হেলোনাক্স আমিন দম্পতি।’ আনিস কিছু টাকা ফেরত পেয়েছেন বলেও জানান তুহিন।

সোমবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যাডমিন্টন কোর্টে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গাজী আনিস। মঙ্গলবার ভোরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। বিকালে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। তাকে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হবে বলে জানা গেছে।

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি গ্রামের বাসিন্দা আনিস। তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে থাকেন যশোরে, আর আনিস থাকতেন কুষ্টিয়া শহরে। ঠিকাদারি ব্যবসা করতেন। মাঝেমধ্যে ঢাকায় আসতেন। হেনোলাক্স নামের একটি কোম্পানির কাছে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা পান গাজী আনিস। পাওনা টাকা না পেয়ে ২৯ মে সংবাদ সম্মেলনও করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরের লন টেনিস মাঠে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন গাজী আনিস। এ সময় তার শরীরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকলে আশপাশের লোকজন ছুটে গিয়ে পানি ঢেলে আগুন নেভান।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ আলী নামের একজন সাংবাদিক জানান, এক ব্যক্তিকে হঠাৎ নিজের গায়ে আগুন দিতে দেখতে পান তিনি। দ্রুত ছুটে গিয়ে পানি ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। এ সময় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিলে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

ঢাকাটাইমস/০৫জুলাই/এএইচ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

উইমেন্স ওয়ার্ল্ড: স্পর্শকাতর ভিডিও পর্নোগ্রাফিতে গেছে কি না খুঁজছে পুলিশ

জাবির হলে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে জঙ্গলে ধর্ষণ, কোথায় আটকে আছে তদন্ত?

নাথান বমের স্ত্রী কোথায়

চালের বস্তায় জাত-দাম লিখতে গড়িমসি

গুলিস্তান আন্ডারপাসে অপরিকল্পিত পাতাল মার্কেট অতি অগ্নিঝুঁকিতে 

সিদ্ধেশ্বরীতে ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু: তিন মাস পেরিয়ে গেলেও অন্ধকারে পুলিশ

রং মাখানো তুলি কাগজ ছুঁলেই হয়ে উঠছে একেকটা তিমিরবিনাশি গল্প

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :