হোমিও চিকিৎসক থেকে কোম্পানির মালিক হেনোলাক্স দম্পতি

প্রকাশ | ০৬ জুলাই ২০২২, ১৬:৪৩

নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকাটাইমস

আমিন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের জীবনের শুরু হোমিও চিকিৎসক হিসেবে। পরে তারা হেনোলাক্স কোম্পানি গড়ে তোলেন। পরে ওই ব্যবসায় মন্দা হওয়ায় আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি দাঁড় করান।

হেনোলাক্স গ্রুপের পরিচালক ফাতেমা আমিনের সঙ্গে নুরুল আমিনের পরিচয় এবং সখ্যতা তৈরি হয় সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ২০১৭ সালে।

পাওনাদার গাজী আনিস শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার পর আত্মগোপনে যান আমিন দম্পতি। পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় র‌্যাবের অভিযানে রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি নুরুল আমিন ও ফাতেমা আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আনিসের মৃত্যুর পর তার ভাই আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলাটি করেন।

বুধবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ, উপ-অধিনায়ক মেজর রাহাত হারুন খান ও স্টাফ অফিসার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বীণা রাণী দাস উপস্থিত ছিলেন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার নুরুল আমিন ১৯৮১-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ঢাকার গোপীবাগ এলাকায় কাদের হোমিও হল নামে একটি প্রতিষ্ঠানে ১৫ বছর চাকরি করেন। ওই সময়ে তার একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার কথা মাথায় এলে ১৯৯১ সালে হেনোল্যাক্স কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। পরে কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে ‘আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি’ নাম দেন।

সেই কোম্পানির অধীনে হেনোলাক্স কসমেটিকস্ পণ্য, যেমন: হেনোলাক্স কমপ্লেকশান ক্রিম, হেনোলাক্স স্পট ক্রিম, হেনোলাক্স মেছতা আউট ক্রিম ও হেনোলাক্স হেয়ার অয়েল ও পোল্ট্রি ফার্মের ব্যবসা করেন। পরে বাজারে হেনোলাক্সের চাহিদা কমে গেলে ২০০৯ সালে তিনি ‘আমিন হারবাল’ নামে আরেকটি কোম্পানি করে ব্যবসা শুরু করেন এবং ২০১৬ সালে হেনোলাক্সের ব্যবসা বন্ধ করে দেন।

র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, ২০১৭ সালে আমিন গ্রুপের কর্ণধার নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের সঙ্গে ভুক্তভোগীর পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে তাদের সঙ্গে ভিকটিমের সখ্যতা এবং আন্তরিকতা গড়ে ওঠে। গ্রেপ্তাররা ২০১৮ সালে চিকিৎসার জন্য পাশবর্তী একটি দেশে গেলে সেখানে স্থানীয় একটি আবাসিক হোটেলে একইসঙ্গে অবস্থানকালে আসামিরা ভুক্তভোগী গাজী আনিসকে হেনোলাক্স কোম্পানিতে বিনিয়োগের জন্য প্ররোচিত করে।

আনিস প্রথমে অসম্মতি জানালেও পরে রাজি হয় এবং প্রাথমিকভাবে এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। এরপর তাদের প্ররোচণায় ভুক্তভোগী আরও ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। অধিকাংশ টাকাই আনিস ঋণ হিসেবে আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবের কাছ থেকে ধার নিয়ে দেন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বিনিয়োগ করার সময় পরস্পরের প্রতি সম্মান ও বিশ্বাসের কারণে তাদের মধ্যে কোনো চুক্তিনামা হয়নি। বিনিয়োগ পরবর্তী চূড়ান্ত রেজিস্ট্রি চুক্তিপত্র সম্পাদন করার জন্য আসামিদের অনুরোধ করেন আনিস। কিন্তু আসামিরা গড়িমসি করতে থাকে। একপর্যায়ে আসামিরা প্রতি মাসে যে লভ্যাংশ দিত, সেটাও বন্ধ করে দেন। পরে কয়েকদফা আসামিরা লোকজন দিয়ে ভুক্তভোগীকে হেনস্তা ও ভয়ভীতি দেখায়। বর্তমানে লভ্যাংশসহ ভিকটিমের ন্যায্য পাওনা তিন কোটি টাকার বেশি।

র‌্যাব পরিচালক বলেন, বিনিয়োগের ওই টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ভিকটিম আসামিদের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়ার আদালতে দুটি মামলা করেন। এছাড়াও ওই টাকা ফিরে পাওয়ার জন্য ২৯ মে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। গত ৩১ মে ভিকটিম তার ফেসবুক আইডি থেকে পাওনা টাকা আদায় সংক্রান্তে মামলার বিষয়টি পোষ্ট করেন এবং বন্ধু-বান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিকট সহায়তা চান।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন আসামিরা ভুক্তভোগীর পাওনা টাকা পরিশোধের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ভুক্তভোগী ওই দিন বিকালে আসামিদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে আসামিরা ভুক্তভোগী টাকা দেয়নি। এতে ভুক্তভোগী আনিস আসামিদের আচরনে হতাশ হয়ে রাগে ক্ষোভে অভিমান করে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, ভুক্তভোগী কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ঠিকাদারী ব্যবসার পাশাপাশি একটি টেলিকম কোম্পানিতে চাকুষরি করতেন। পরে চাকরি ছেড়ে কুষ্টিয়ায় গাড়ির ব্যবসা শুরু করেন। ভুক্তভোগী সাহিত্য চর্চা করতেন এবং তার বেশ কয়েকটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে।

খন্দকার আল মঈন বলেন, আমিন দম্পতির কাকরাইলে একটি ফ্ল্যাট, পুরানো পল্টনে স্কাই ভিউ হেনোলাক্স সেন্টার নামে একটি ১০ তলা ভবন, পিংক সিটিতে একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি, মেরাজনগর কদমতলীতে হেনোলাক্স নামে ৪ তলা ভবন, মোহাম্মদবাগ কদমতলী এলাকায় হেনোলাক্স ফ্যাক্টরি রয়েছে। তারা বর্তমানে ঐ ফ্যাক্টরিতে খান ফুড প্রোডাক্টস, বন্যা ফুড প্রোডাক্টস ও জে কে এগ্রো ফুড নামে তিনটি ভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভাড়ায় তাদের উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে। 

আর গ্রেপ্তার ফাতেমা আমিন একটি বেসরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ থেকে ডিএইচএমএস সম্পন্ন করেন। পরে তার স্বামীর আমিন হোমিও হলে প্রথমে এক বছর হোমিও চিকিৎসা করেন। তিনি তার স্বামীর প্রতিষ্ঠিত আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি তার স্বামীর আমিন হারবাল কোম্পানির দেখাশোনা করেন।

গত ০৪ জুলাই বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে গাজী আনিস নিজের গাঁয়ে পেট্রোল জাতীয় দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। মুমুর্ষ অবস্থায় তাকে উদ্ধারপূর্বক শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারী ইনষ্টিটিউটে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। গাজী আনিসের শরীরের ৯০% দগ্ধ হয়ে যায়। ওই ঘটনার পরের দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

ওই ঘটনায় ভুক্তভোগীর ভাই বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেন। যার মামলা নম্বর-০৯।

(ঢাকাটাইমস/০৬জুলাই/এএইচ)