আরবের প্রথম নারী হিসেবে জাবেউরের ইতিহাস

প্রকাশ | ০৬ জুলাই ২০২২, ১৮:০২ | আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২২, ১৮:৩৩

ক্রীড়া ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন গত বছরেই। আরব বিশ্বের প্রথম নারী হিসেবে উইম্বলডনের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে। এবার ছাপিয়ে গেলেন নিজেকেই, উইম্বলডনের সেমিফাইনালে পৌঁছে। আরবভূমির প্রথম নারী টেনিস তারকা হিসেবে উইম্বলডন বা কোনো গ্র্যান্ডস্ল্যামের সেমিফাইনালে উঠে নতুন করে ইতিহাস লিখলেন ওন্স জাবেউর।

মঙ্গলবার রাতে কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচে চেক তারকা মারি বুজকোভাকে ৩-৬, ৬-১, ৬-১ গেমে হারান তিউনিশিয়ার এই টেনিস তারকা।

ম্যাচ শেষে আবেগাপ্লুত জাবেউর বলেন, ‘এই অনুভূতি বলে বোঝাতে পারব না। অনেকদিন ধরেই সেমিফাইনালে ওঠার চেষ্টা করছিলাম। কিছু দিন আগেই হিচার আরাজির (মরক্কোর প্রাক্তন খেলোয়াড়) সঙ্গে কথা বলেছিলাম। উনি আমাকে বললেন, আরবীয়রা বরাবর কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে যায়। আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। তুমি অন্তত এই ইতিহাসটা বদলাও। আমি বলেছিলাম, চেষ্টা করব। অবশেষে পেরেছি।’

ঠিক ১১ বছর আগে প্রথমবার কোনও গ্র্যান্ডস্ল্যাম ট্রফিতে হাত রেখেছিলেন জাবেউর। তাইতো ২০১১ সালটা স্মরণীয় হয়েই থাকবে তিউনিশিয় এই তারকার কাছে। হোক না সেটা জুনিয়র গ্র্যান্ডস্ল্যাম, মাহাত্ম্য তো আর কম নয়।

তার দেশের কাছেও ২০১১ সালটা বেশ তাৎপর্য্যপূর্ণ। কারণ, এই তিউনিশিয়া থেকেই শুরু হয়েছিল শাসকের বিরুদ্ধে বিপ্লব, গোটা বিশ্বের কাছে যা ‘আরব বসন্ত’ নামে পরিচিত।

নানা উত্থান-পতনের মধ্যে আরব বসন্ত শেষ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু টেনিস তারকা জাবেউরের জীবনে বসন্ত এখনও শেষ হয়নি। টেনিস র‌্যাকেটের সাহায্যে কোর্টে একের পর এক ফুল ফোটাচ্ছেন তিনি। যে বিপ্লব এখনই থামার নয়।

জাবেউর এমন একটা দেশ থেকে উঠে এসেছেন, যেখানে এখনও নারীদের ছোট পোশাক পরা নিষেধ। প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করা ছোটবেলা থেকেই তার স্বভাব। তাইতো কোনো চোখরাঙানি তার এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। পরিবারে সবার থেকে ছোট জাবেউর। বড় দুই ভাই ও এক বোন রয়েছেন তার।

মাত্র তিন বছর বয়সেই টেনিসে হাতেখড়ি। সেটাও মায়ের ইচ্ছাতেই। সবার ছোট মেয়েটা টেনিস খেলোয়াড় হোক- এটা শুরু থেকেই চেয়েছিলেন মা রিধা জাবেউর। তিনি নিজেও ছিলেন একজন শখের টেনিস খেলোয়াড়।

তেরো বছর পর্যন্ত স্থানীয় স্তরে কোচ নাবিল ম্লিকার অধীনে টেনিস শিখেছেন জাবেউর। উন্নতি করতে দরকার ছিল উন্নত পরিকাঠামোর। তাই মা রিধা তাকে নিয়ে চলে আসেন রাজধানী তিউনিসে। জাতীয় ক্রীড়া বিদ্যালয়ে ভর্তি হন জাবেউর। ততদিনে প্রতিভার বিকাশ ঘটতে শুরু করেছে এই চতুর্দশীর।

বেলজিয়াম ও ফ্রান্সের মতো দেশে খেলার ডাক পান তিনি। তবে নিজের দেশ ছেড়ে যেতে রাজি হননি জাবেউর। এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমার পরিবার অনেক কিছু ত্যাগ করেছে আমাদের জন্য। মা গোটা দেশে আমাকে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় খেলার জন্য। বিশেষ স্কুলে আমাকে পড়তে পাঠিয়েছিলেন। যদিও সাফল্য নিশ্চিত ছিল না। তা সত্ত্বেও মা ও পরিবারের এই আত্মত্যাগ ভোলার নয়। আমার উপর বিশ্বাস রেখেছিলেন সবাই।’

ধাপে ধাপে উন্নতি করেন জাবেউর। প্রথমে জুনিয়র সার্কিটে, এরপর ধীরে ধীরে বড়দের টেনিসে। ২০১৭ সালেই নারীদের টেনিসে প্রথম একশোতে ঢুকে পড়েন জাবেউর। পরের বছর অবশ্য প্রথম একশো থেকে ছিটকেও পড়েন।

জাবেউরের জীবনে এখনও পর্যন্ত সব থেকে কঠিন প্রতিযোগিতা হয়তো ২০২০ সালের অস্ট্রেলিয়ান ওপেন। প্রথম দুই রাউন্ডে জোহানা কন্টা এবং ক্যারোলিন গার্সিয়াকে হারানোর পর তৃতীয় রাউন্ডে হারান বিশ্বের প্রাক্তন এক নম্বর ক্যারোলিন ওজনিয়াকিকে। যা ছিল ওজনিয়াকির পেশাদার টেনিসের শেষ ম্যাচ।

এরপর ওয়াং কিয়াংকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে ইতিহাস সৃষ্টি করেন জাবেউর। আরবের প্রথম নারী হিসেবে কোনো গ্র্যান্ডস্ল্যামের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠেন তিনি।

পাঁচ বছর আগে প্রাক্তন ফেন্সার করিম কামুনকে বিয়ে করেন জাবেউর, যিনি আদতে একজন রুশ হলেও বর্তমানে তিউনিশিয়ার নাগরিক। স্বামী করিম কামুনই জাবেউরের ব্যক্তিগত ট্রেনার হিসেবে কাজ করেন।

২৭ বছর বয়সী জাবেউরের এখন একটাই স্বপ্ন, তাকে দেখে যেন এবার আরবের খুদে টেনিস খেলোয়াড়রা অন্তত অনুপ্রাণিত হয়। তিউনিশিয়া, মরক্কো, আলজেরিয়া থেকে আরও অনেক প্রতিভা উঠে আসুক- এটাই তার একমাত্র চাওয়া।

আজ বুধবার (৭ জুলাই) লন্ডনে উইম্বলডনের প্রথম সেমিফাইনালে জার্মান তারকা তাতজানা মারিয়ার মোকাবিলা করবেন জাবেউর। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়।

(ঢাকাটাইমস/০৬জুলাই/এনএস/এমএম)