পবিত্র ঈদুল আজহা

ত্যাগের আনন্দোৎসব

প্রকাশ | ০৯ জুলাই ২০২২, ১৮:২২ | আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২২, ১৮:২৮

আরিফুর রহমান দোলন

গত দুটি কোরবানির ঈদ ছিল বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধের বেড়াজালে বন্দি। এক দমবন্ধ পরিবেশে মুসলমান সম্প্রদায় তাদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা উদযাপন করেছে। এবার যদিও ফের চোখ রাঙাচ্ছে করোনা সংক্রমণ, তবে তা এখনো বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছায়নি। তাই কোনো কঠোর বিধিনিষেধও নেই সরকারের তরফে। এই অবসরে দেশের মানুষ নতুন জীবনে ঈদ উৎসবের  প্রস্তুতি নিয়েছে পুরোদমে।
এরই মধ্যে নাড়ির টানে ঘরমুখো মানুষ পথের ভোগান্তি ঠেলে স্বজন-পরিজনের কাছে পৌঁছেছে। উৎসবের ছুটিতে দেশ। সকালে ঈদের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমান যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি দেবেন। এর মাধ্যমে ঘোষিত হবে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্য।
কোরবানি ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং অন্যতম ঐতিহ্য। ইসলামি পরিভাষায়, ১০, ১১, ১২ জিলহজের কোনো একদিন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হালাল পশু জবাই করাই হলো কোরবানি। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রিয় বস্তু উৎসর্গ করা কোরবানির অন্যতম তাৎপর্য।
প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে নবী হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নযোগে আল্লার কাছ থেকে আদিষ্ট হন তার প্রিয়তম বস্তু উৎসর্গ করার জন্য। তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য প্রিয় কনিষ্ঠ পুত্র ইসমাইলকে কোরবানি দিতে উদ্যত হন। প্রিয় বান্দার ত্যাগের সদিচ্ছায় সন্তুষ্ট হয়ে মহান রাব্বুল আলামিন হজরত ইসমাইলের পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি কবুল করেন।
সেই ঘটনার স্মরণে ইতিহাসের ধারাবাহিতায় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি দেওয়া হয়। ইসলামের এই ধর্মীয় ঐতিহ্য আসলে ত্যাগের একটি প্রতীকী প্রকাশ। এর মাধ্যমে আমাদের মনের পশুত্বকে বিসর্জন দিয়ে নিজেকে নৈতিক ও আত্মিকভাবে পরিশীলিত করা হয়। 
তাই কোরবানি যেন লোক দেখানো উৎসব না হয় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। কোরবানি হতে হবে শুদ্ধ নিয়তে। আসমানি কিতাব আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না এগুলোর গোশত ও রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।' (সূরা আল-হজ, আয়াত-৩৭)।
কোরবানির পশুর গোসত বণ্টনের ক্ষেত্রে শরিয়তের বিধান সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে। এক ভাগ দরিদ্রদের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনের জন্য এবং এক ভাগ নিজের জন্য রাখব আমরা। তা না হলে কোরবানির বিধান ক্ষুণ্ন হয়ে তা শুধু পশু জবাই হিসেবে পরিগণিত হবে।
ঈদের আনন্দ একা উদযাপনের বিষয় নয়। এই ধর্মীয় উৎসব ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব আর সাম্যেরও উপলক্ষ। সবার মাঝে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার মধ্যেই এর সার্থকতা নিহিত। আমাদের চারপাশে গরিব-অসহায় মানুষ আছে, এবারের বন্যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অনেকে, তাদের পাশে সাধ্যমতো দাঁড়াতে হবে প্রত্যেকে।
পশু কোরবানির পর আর একটি দায়িত্বের কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। যেখানে-সেখানে পশু জবাই ও কাটাকুটির কারণে পরিবেশ-দূষণের বড় আশঙ্কা থেকে যায়। আমরা যদি নিজ দায়িত্বে রক্ত ও বর্জ্য মাটিচাপা দিই তাহলে ওই আশঙ্কা থেকে অনেকটা রেহাই মিলবে।
আর সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলো তো তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকবেই। যত দ্রুত সম্ভব হাট ও পাড়া-মহল্লা থেকে কোরবানির পশুর বর্জ সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা জারি রাখতে হবে।
ঈদে নিরাপত্তা বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। নির্জন সড়ক এবং ছুটিতে যাওয়া নগরবাসীর তালাবদ্ধ বাসাবাড়ির নিরাপত্তার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষভাবে দেখা দরকার।
নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনার দাবি সব সময়ই থাকে। ঈদের ছুটিতে সড়কে বিপুল সংখ্যক মানুষের যাতায়াতে ঘটে। কারো বেপরোয়া গাড়ি চালনা যেন র্দ্ঘুটনা ও হতাহতের কারণ না হয়। অদিক মুনাফার তাড়নায় তাড়াহুড়োর নামে কারো জীবন বিপন্ন করার অধিকার কারো নেই। 
করোনার সতর্কতার কথা যেন আমরা ভুলে না যাই। কেননা এখনো সারা বিশে^ উপস্থিত এই অদৃশ্য ঘাতক। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। প্রতিদিন হাজারের বেশি মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে। বেশ কজন মারা যাচ্ছেন প্রতিদিন। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।  তা না হলে বড় দুর্ভোগ পোহানোর শঙ্কা মাথায় নিতে হবে। এ সংকটকালে সবাই যাতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পালন ও নিয়মশৃঙ্খলা মেনে ঈদ উদযাপন করি, এই আহ্বান রাখতে চাই।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকাটাইমসের পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।