চমকে উঠবেন না, দুঃখী ছিলেন রবীন্দ্রনাথও!

শেখ সাদী
| আপডেট : ১২ জুলাই ২০২২, ১৪:৫৫ | প্রকাশিত : ১২ জুলাই ২০২২, ০৭:৫৫

রবীন্দ্রনাথ নামটা মনে উঁকি দিলেই চোখে ভাসে ঋষিকবির মুখ। তিনি কি শুধুই কবি?

তিনি কবি। গীতিকার। সুরকার। দার্শনিক। শিল্পী এবং জমিদার। এই সব কটি পরিচয় দ্রুত মনে আসে। মানে এই বিষয়গুলো সবার কমবেশি জানা। জানা নেই বা কম জানা পরিচয় তাহলো দুঃখী রবীন্দ্রনাথকে। যদিও এই দুঃখী শব্দটা কাজী নজরুলের ট্রেডমার্ক পরিচয়।

প্রিন্স দ্বারকানাথের নাতি। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের পুত্রের জীবনে যে দুঃখ-কষ্ট থাকতে পারে, এটা ভাবাটাও একটা কঠিন বিষয়।

প্রেমিক রবীন্দ্রনাথের অভিজাত চেহারায় ঢেকে যায় দুঃখী-দুঃখী মুখ। মৃত্যুতে দুঃখ পেয়েছেন বিস্তর। দুঃখ পেয়েছেন প্রেমে। কষ্ট সয়েছেন টাকার টানাটানিতে। মৃত্যুশোকের দুঃখে যাওয়ার আগে ভিন্ন বিষয়ে চোখ রাখা যাক।

চল্লিশ পেরোনো কবির দিনগুলো কাটছে পদ্মায় নৌকায় ভেসে ভেসে।

নির্জনতায় নিভৃতে মনটা হঠাৎ বিদ্রোহী হয়ে উঠল। ওই সময়ে ক্ষণিকের গান রচনায় ব্যস্ত। লিখছেন, ‘আমার প্রভু আমাকে তাঁর দেউড়িতে কেবলমাত্র বাঁশি বাজার ভার দেননি-শুধু কবিতার মালা গাঁথিয়ে তিনি আমাকে ছুটি দিলেন না। আমার যৌবন যখন পার হয়ে গেল, আমার চুল যখন পাকল, তখন তাঁর অঙ্গনে আমার তলব পড়ল। সেখানে তিনি শিশুদের মা হয়ে বসে আছেন। তিনি আমাকে হেসে বললেন, ‘ওরে পুত্র, এতদিন তুই তো কোন কাজেই লাগলি নে, কেবল কথাই গেঁথে বেড়ালি। বয়স গেল, এখন যে কটা দিন বাকি আছে, এই শিশুদের সেবা কর।’

শুরু হলো শান্তিনিকেতনের কাজ।

বসলেন শিক্ষাগুরুর আসনে। শুরু হলো টাকার টানাটানি।

টানাটানির সময়ে পাশে দাঁড়ালেন স্ত্রী মৃণালিনী।

‘কী দুঃখের সে-সব দিন গেছে যখন ছোটোবৌর গহনা পর্যন্ত নিতে হয়েছে। চারদিকে ঋণ বেড়ে চলেছে, ঘর থেকে খাইয়ে-পরিয়ে ছেলে যোগাড় করেছি, কেউ ছেলে তো দেবেই না-গাড়ি ভাড়া করে অন্যকে বারণ করে আসবে। এই রকম সাহায্য স্বদেশবাসীর কাছে পেয়েছি।’

এ রকম সময়ে চলেছে একটির পর একটি মৃত্যুশোক। সে বড়ই দুঃখের ইতিহাস।

মৈত্রেয়ী দেবী জানাচ্ছেন, ‘লোকে জানে উনি শৌখীন বড়োলোক। সম্পূর্ণ নিঃসম্বল হয়েছিলুম, আমার সংসারে কিছুমাত্র বাবুয়ানা ছিল না। ছোটোবৌকেও অনেক ভার সইতে হয়েছে।’

শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ের জন্য পরিশ্রম টানতে পারলেন না মৃণালিনী দেবী। অসুস্থ হয়ে পড়লেন।

বোলপুর থেকে কলকাতায় ফিরে অসুস্থতা আরও বাড়ল। অসুস্থ স্ত্রীর সেবা করা দায়িত্ব নিলেন রবীন্দ্রনাথ। নার্স নিযুক্ত করলেও ভরসা রাখতে পারলেন না। হেমলতা দেবী কথায় জানতে পারি, ‘তখন ইলেকট্রিক ফ্যানের সৃষ্টি হয় নাই দেশে। হাতপাখা হাতে ধরে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত পত্নীকে কবি বাতাস দিতেন এক মুহূর্ত হাতের পাখা না ফেলে। ভাড়াটে শুশ্রƒষাকারিনীর প্রচলন তখন ঘরে ঘরে; কবির ঘরে ব্যত্যয় ঘটল।’

সব চেষ্টা ব্যর্থ। পরপারে চলে গেলেন মৃণালিনী।

ব্যথায় জর্জরিত মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ বললেন, ‘রবির জন্য আমি চিন্তা করি না। লেখাপড়া নিজের রচনা নিয়ে সে দিন কাটাতে পারবে। ছোট ছেলেমেয়েগুলির জন্যই দুঃখ হয়।’ কী আশ্চর্য!

চলে গেলেন মৃণালিনী! মৃত্যু কত অনিশ্চিত।

শোকে পাথর রবীন্দ্রনাথ। ১১ দিন পর দীনেশ চন্দ্র সেনকে লিখলেন, ‘ঈশ্বর আমাকে যে শোক দিয়েছেন, তাহা যদি নিরর্থক হয়, তবে এমন বিড়ম্বনা আর কি হতে পারে। ইহা আমি মাথা নিচু করিয়া গ্রহণ করিলাম।’

স্ত্রীর মৃত্যুর পর নিরামিষভোজী হয়ে যান রবীন্দ্রনাথ। ভাত ছেড়ে ছোলা ও মুগ ডাল ভেজানো খেয়ে দিন পার করতে লাগলেন। অনেক বছর পর মৈত্রেয়ী দেবীকে বললেন, ‘সবচেয়ে কী কষ্ট হয় জানো?’ মৃত্যুশোকের দুঃখ নতুন নয়।

ছোট ভাই বুধেন্দ্রনাথ যখন মারা যান রবীন্দ্রনাথ তখন এতই ছোট যে সেই মৃত্যু স্মৃতিতে দাগ কাটেনি। দাগ কাটল মায়ের মৃত্যু। এ যেন শোকের সুনামি।

১৮৭৫। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে ১০ মার্চে পরপারে চলে গেলেন মা সারদা দেবী। রবীন্দ্রনাথের তখন সাড়ে ১৩ বছর, ‘প্রভাতে উঠিয়া যখন মা’র মৃত্যু সংবাদ শুনিলাম তখনো সে কথাটার অর্থ সম্পূর্ণ গ্রহণ করিতে পারিলাম না। বাহিরের বারান্দায় আসিয়া দেখিলাম, তাঁর সুসজ্জিত দেহ প্রাঙ্গণে খাটের উপর শয়ান। কিন্তু মৃত্যু যে ভয়ংকর সে-দেহে তাহার কোন প্রমাণ ছিল না।’ পরিণত বয়সে লিখছেন, ‘বড় হইলে যখন বসন্ত প্রভাতে একমুঠা অনতিস্ফুট মোটা মোটা বেলফুল চাদরের প্রান্তে বাঁধিয়া খ্যাপার মতো বেড়াইতাম, তখন সেই কোমল চিক্কন কুঁড়িগুলি ললাটের উপর বুলাইয়া প্রতিদিন আমার মায়ের শুভ্র আঙুলগুলি মনে পড়িত। আমি স্পষ্টই দেখিতে পাইতাম যে, স্পর্শ সেই সুন্দর আঙুলের আগায় ছিল, সেই স্পর্শই প্রতিদিন এই বেলফুলের মধ্যে নির্মল হইয়া ফুটিয়া উঠিয়াছে।’

মৃত্যুশোকের বড় ধাক্কা খেলেন ১৮৮৪ সালের ১৯ এপ্রিল।

২৩ বছরের শোক। নতুন বৌঠান কাদম্বরী দেবী আফিম খেয়ে আত্মহত্যা করলেন।

শোকগ্রস্ত রবীন্দ্রনাথের জীবনের এ এক বড় ধাক্কা।

৩৩ বছর পর, অমিয় চক্রবর্তীতে চিঠিতে লিখলেন নতুন বৌঠানের কথা, ‘তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে আমার পায়ের নীচে থেকে যেন পৃথিবী সরে গেল, আমার আকাশ থেকে আলো নিভে গেল। আমার জগৎ শূন্য হল। আমার জীবনের সাধ চলে গেলো। সেই শূন্যতার কুহক কোনোদিন ঘুচবে, এমন কথা আমি মনে করতে পারি নি। কিন্তু তারপরে সেই প্রচণ্ড বেদনা আমার জীবন মুক্তির ক্ষেত্রে প্রথম প্রবেশ লাভ করলে আমি ক্রমে বুঝতে পারলুম, জীবনকে মৃত্যুর জানালার ভিতর থেকে না দেখলে তাকে সত্যরূপে দেখা যায় না।’

৩ নতুন বৌঠানের মৃত্যুতে খুব একা হয়ে পড়েন কবি। এরপর বড় ধাক্কা খেলেন স্ত্রীর মৃত্যুতে।

ধাক্কাটা সামলে উঠতে না উঠতেই সামনে এলো আরও বড় দুঃখের দিন। স্ত্রী মারা যাওয়ার নয় মাস পরে চলে গেলেন মেজ মেয়ে রেণুকা। বাবা রবীন্দ্রনাথের আদরের ‘রানী’।

দশ বছর বয়সে রেণুকার বিয়ে হয় ১৯০১ সালের ১৫ জুনে। বিয়ের এক বছরের মাথায় অসুস্থতা বাড়তে থাকে। প্রথমে জ্বর। এরপর কাশি। মায়ের সঙ্গে রেণুকা অসুস্থ। চিকিৎসক ধরে নিলেন যক্ষ্মা। চিকিৎসা চলছে। আরোগ্যের লক্ষণ চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না।

আষাঢ় মাস। অঝোর ধারায় ঝরছে বৃষ্টি। ১৯০৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। বাবার হাত ধরে শুয়ে আছে রেণুকা। বাবার কাছে শেষ আবদার, বাবা একবার পিতা নোহসি বলো। অসহায় বাবা পাঠ করলেন, ‘ওঁ পিতা নোহসি, পিতা নো বোধি, নমস্তেহস্ত মা মা হিংসীঃ..।’

উপনিষদের এই মহামন্ত্র শুনতে-শুনতে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করলেন রেণুকা।

মা, নতুন বৌঠান আর স্ত্রীর পরে পেলেন সন্তান হারানোর শোক।

রেণুকার মৃত্যুর এক বছর এক মাস চার দিন পর পরপারে চলে গেলেন বাবা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর।

পরিবারের সার্বভৌম অভিভাবক মারা যাওয়ার পর প্রিয় বন্ধু মোহিতচন্দ্র মারা গেলেন।

বন্ধুর স্ত্রী সুশীলাকে লিখলেন, ‘সংসারে নিদারুণ শোকের পরিচয় পাইয়াছি সেই জন্য সান্ত্বনাবাক্য প্রয়োগের চেষ্টা করি নাÑঈশ্বর যথাকালে শান্তি বিধান করিয়া অসহ্য দুঃখকে নিজের হস্তে সার্থক করিবেন এই আমার প্রার্থনা।’

এবার আরও অনেক বড় শোকের সুনামি।

পুত্র হারানোর শোক। পুত্র শমীন্দ্রনাথকে হারাতে চলেছেন কবি। শমীর সঙ্গে কবির চেহারার মিল সবার চোখে পড়ত। মিল ছিল আচরণে। মিল ছিল স্বভাবে। আদর করে সবাই ডাকতেন শমী ঠাকুর। শমীন্দ্র পঞ্চম এবং শেষ সন্তান। জন্ম ১২ ডিসেম্বর। ১৮৯৬ সাল। জন্মের ১৪ মাস পর বিশাল আকারে অনুষ্ঠান হয়েছিল ঠাকুরবাড়িতে। এমন আয়োজন প্রথম সন্তান রথীন্দ্রনাথের বেলায় হয়নি। ওই সময়ে খরচ হয় ৫১৫ টাকা, নয় আনা, তিন পয়সা।

পুজোর ছুটি শুরু।

ছোট মেয়ে মীরা অসুস্থ। সন্তানদের মা নেই। চিন্তিত কবি। ভাবছেন, এই ছুটিতে শমী কোথায় থাকবে? প্রথমে ভাবা হলো দিল্লি পাঠাবেন। এই ইচ্ছা থেকে সরে এলেন। কারণ, দিল্লিতে এখন ম্যালেরিয়া ছড়াচ্ছে। আবার, কলকাতা পছন্দ হয় না শমীর। মা-হারা শমীর কাছে শান্তিনিকেতন বড়ই একলা লাগে। ১৬ অক্টোবর। সাল ১৯০৭। বিজয়া দশমীর দিন শ্রীশচন্দ্রের ছেলে শমীর বন্ধু সরোজচন্দ্রের সঙ্গে মুঙ্গেরে রওনা হয় শমী। সরোজের নানাবাড়ি। কয়েক দিন পর শান্তিনিকেতন ফেরার কথা। পথ চেয়ে আছেন কবি। খবর এলো, শমীর কলেরা হয়েছে।

অসহায় বাবা। চিকিৎসক সঙ্গে নিয়ে ছুটলেন মুঙ্গেরে। সব চেষ্টা ব্যর্থ। ১১ বছরের শমীন্দ্র চলে যায় পরপারে, ২৪ নভেম্বরে।

মায়ের সঙ্গে আশ্চর্য মিল শমীর। পাঁচ বছর আগের এই দিনেই মারা যান মা।

শেষকৃত্য হলো মুঙ্গেরের শ্মশানে। গেলেন না বাবা। অন্যরা শ্মশান থেকে ফিরে এসে দেখলেন পাথরের মতো স্তব্ধ হয়ে আছেন বাবা রবীন্দ্রনাথ। রাতেই ফিরে এলেন শান্তিনিকেতন। বড়দা দ্বিজেন্দ্রনাথ এলেন। ছোট ভাই রবির পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন আর নরম স্বরে বড়দা বলছেন রবি, রবি।

কাঁদলেন দুই ভাই। শব্দহীন কান্নায় ভারী হয়ে উঠল শান্তিনিকেতনের বাতাস।

এগিয়ে আসছে কন্যা মাধুরীলতার মৃত্যুক্ষণ। ঠাকুরবাড়ির আদলের বেলা।

জন্ম ২৫ অক্টোবর। ১৮৮৬।

১২ বছর বয়সে বেলা বিয়ে হয়। জামাই কবি বিহারীলাল চক্রবর্তীর তৃতীয় পুত্র শরৎচন্দ্র। শরৎ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্র। বিয়েতে পাত্রপক্ষের দাবি ২০ হাজার টাকা পণ। দুশ্চিন্তায় পড়লেন বাবা রবীন্দ্রনাথ। পণের এতগুলো টাকা দেবেন কীভাবে? বন্ধু প্রিয়নাথকে লিখলেন, ‘বেলার যৌতুক সম্বন্ধে কিছু বলা শক্ত। মোটের ওপরে ১০ হাজার পর্যন্ত আমি চেষ্টা করতে পারি। সে-ও সম্ভবত নগদ ও রহংঃধষসবহঃ-এ। রহংঃধষসবহঃ-ও অবশ্য আমার পক্ষে হিতকর নয় কিন্তু নিতান্তই যদি অনটন হয় তবে উপায় নেই। সম্ভবত পধংয-এ অতি অল্প টাকাই আছে, বাবামশাই কখনো ঋণের প্রস্তাবে সম্মত হবেন নাÑএতকাল পরে দুঃসময়ে কোনোমতে আমি বড় যৌতুকের প্রস্তাব তুলতে পারি না। সাধারণত বাবামশাই বিবাহের পরদিন ৪-৫ হাজার টাকা যৌতুক দিয়ে আশীর্বাদ করে থাকেনÑসে জন্য কাউকে কিছু বলতে হয় না। বিশ হাজার টাকার প্রস্তাব তাঁর কাছে উপস্থাপন করতেই পারব না।’

কন্যাদায়গ্রস্ত বাবা রবীন্দ্রনাথ। দুঃখের দিনে না পারছেন সইতে, না পারছেন যৌতুক জটিলতা থেকে বের হতে। অনেক যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে বেলার বিয়ে হয়। কিন্তু জামাই শরৎচন্দ্রের সঙ্গে কন্যার সুসম্পর্ক হলো না। প্রথম বিরোধের শুরু দুই জামাইয়ের মধ্যে। কবির ইচ্ছায় দুই মেয়ে-জামাই জোড়াসাঁকোর বাড়িতে বাস করছেন। কনিষ্ঠ জামাই নগেন্দ্রনাথকে দিলেন জমিদারি, আদি ব্রাহ্মসমাজ, জোড়াসাঁকোর বাড়ি ও তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার দায়িত্ব। পুত্র রথীন্দ্রনাথ ও জামাই শরৎচন্দ্রকে বিশেষ কিছু না দিয়ে বিদেশ ভ্রমণে যান কবি। এটাই বিরোধের প্রধান কারণ।

দুই জামাই ও মেয়েদের বিরোধে শাস্তি পেলেন বাবা রবীন্দ্রনাথ। দুঃখে ভারী হলেন নোবেলপ্রাপ্তির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে।

শান্তিনিকেতনের আম্রকুঞ্জের বিশাল আয়োজনে পরিবারের সদস্য ছাড়াও এলেন প্রায় সাতশ মানুষ। শুধু এলেন না দুই মেয়ে ও দুই জামাই। দুঃখের কথা জানিয়ে কন্যাকে চিঠি লিখলেন, ‘আমি কি তোদের মঙ্গল করি নি, মঙ্গল কামনা করি নি, স্নেহ করি নি-তার দাবী কি আজ সমস্ত ডুবে গিয়েছে? আমি তোদের ভর্ৎসনা করচিনে বেল্- সকারণ হোক অকারই হোক আমাদের সম্বন্ধে তোদের মনের সমস্ত গ্লানি ধুয়ে ফেলে দে-তাতে আমাদেরই মঙ্গল হবে।’

কিছুদিন পর অসুস্থ হলেন কন্যা মাধুরীলতা।

জ্বর দিয়ে শুরু। ধরা পড়ল যক্ষ্মা।

ছুটে গেলেন বাবা রবীন্দ্রনাথ। জামাই অসম্মান করলেন। এই দুঃখদিনের কথা মৈত্রেয়ী দেবীকে শুনিয়েছেন হেমলতা দেবী, ‘অসুস্থ কন্যাকে দেখতে গেলে ঘরেই শরৎ তখন টেবিলের উপর পা তুলে দিয়ে সিগারেট খেত। পা নামাত না পর্যন্ত, এমনি করে অপমান করত। উনি সব বুকের মধ্যে চেপে মেয়ের পাশে বসে থাকতেন।’

কয়েক দিনের অসুস্থতার পর মারা যান মাধুরীলতা। দিনটি ১৬ মে। সাল ১৯১৮। প্রতিবছরই কেউ না কেউ মারা যাচ্ছেন।

এদিকে দিনে-দিনে তীব্র হচ্ছে অর্থসংকট। কখনো বিজ্ঞাপনের মডেল আবার বিজ্ঞাপনের স্ক্রিপ্ট লিখে দিচ্ছেন শুধু টাকার জন্য। পত্রিকায় কবিতা ছাপতে চাইলে বলছেন, কত টাকা দেবে?

কন্যা মাধুরীলতা মারা যাওয়ার তিন বছরের মাথায় মারা যান দাদা সোমেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ১৯২২ সালের ৩০ জানুয়ারি।

পরের বছর ১৯২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মারা গেলেন স্নেহধন্য সুকুমার রায়। এ বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর মারা যান কাছের বন্ধু উইলিয়াম উইনস্ট্যানলি পিয়ারসন। বন্ধু পিয়ারসনের মৃত্যুর তিন দিনের মাথায় মারা গেলেন বড় দাদা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর।

এমন সিরিজ মৃত্যু শোকে লন্ডভন্ড কবি। দুঃখে জর্জরিত রবীন্দ্রনাথ।

সুকুমার হালদারকে লিখলেন, ‘বড় দাদাও চলে গেলেন-এখন আমিই শীতের গাছে শেষ পাতাটার মতো কাঁপছি-ঝরে পড়লেই হয়-বোঁটাও আলগা হয়েছে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :