যেসব রোগ শরীরে বাসা বাঁধলে চুল পড়া বেড়ে যায়

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২২, ১১:৩১ | প্রকাশিত : ১৭ জুলাই ২০২২, ০৯:২৪

আপনি যতই সুন্দর বা পরিপাটি হোন না কেন, চুল যদি সুন্দর না হয় সব মিলিয়ে স্মার্ট লাগবে না। চেহারার সৌন্দর্য অনেকটায় নির্ভর করে চুলের সৌন্দর্যের ওপর। আপনার পরিশ্রমের সাজটাও বৃথা হয়ে যাবে। যখন চুল ঠিকঠাক থাকবে না বা যখন চুল ঝরে পড়ে যায়। চুল পড়া, চুল উঠে যাওয়া বা চুল পাতলা হয়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তার অন্ত নেই। চুল ঝরে পড়া প্রাকৃতিক একটি প্রক্রিয়া। চুল পড়ে যাবে এবং আবার নতুন চুল গজাবে, এটাই তো স্বাভাবিক।

চুল কেরাটিন নামের একরকম প্রোটিন দিয়ে তৈরি হয়। চুলে ৯৭ ভাগ প্রোটিন ও ৩ ভাগ পানি রয়েছে। চুলের যেটুকু আমরা দেখি সেটি মৃত কোষ। কারণ এতে অনুভূতিশীল কোনো কোষ নেই। চুল প্রতি মাসে আধা ইঞ্চি করে বড় হয়। স্বাভাবিকভাবে একটি চুল দুই থেকে চার বছর পর্যন্ত বড় হতে থাকে। এরপর বৃদ্ধি কমে যায়।

গ্রীষ্মকালে চুল দ্রুত বড় হয় কিন্তু শীতকালে কম বড় হয়। একটি চুলের গড় আয়ু দুই-আট বছর। সুতরাং চুল কিছু না কিছু প্রতিদিন স্বাভাবিকভাবেই ঝরে যায়। কিন্তু গরমের সময় অনেকেই খুব বেশি চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন। আবার অনেকে চুল ঝরে গিয়ে টাক পড়ে যাওয়ার ভয়েও থাকেন। আবার শরীরে যদি রোগ বাসা বাঁধে তাহলেও চুল পড়া বেড়ে যায়।

অত্যধিক মানসিক চাপ, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ার অভ্যাস ও দূষণের কারণে চুলের বারোটা বাজে। হরমোনের কমবেশি হওয়ার কারণেও চুল উঠে যেতে পারে।

চিকিৎসকের মতে, যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চুল পড়ার ঘটনায় পুষ্টির ঘাটতি, হরমোনের পরিবর্তন, মানসিক চাপ, পরিবেশগত কারণ এবং জেনেটিক কারণ থেকে শুরু করে একাধিক কারণ দায়ী থাকে। অ্যানিমিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস, ম্যালেরিয়া, ডায়াবেটিস ইত্যাদিতে চুল পড়ে যেতে পারে। অনেক সময় অসুখ ভালো হওয়ার পরও চুল আর আগের অবস্থায় ফিরে যায় না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কেবল স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেয়ার পাশাপাশি চুলের দিকেও নজর দেয়া প্রয়োজন। চুল পড়ার লক্ষণ অনেক সময়ই কোনো না কোনো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। তাই চুল পড়ার সমস্যাকে একেবারেই হালকাভাবে নেয়া উচিত নয়। যেসব অসুখ শরীরে বাসা বাঁধলে অত্যধিক হারে চুল পড়তে শুরু করে, জেনে নিন-

করোনাভাইরাস

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর চুল ঝরে পড়ার লক্ষণ দেখা দেয়। করোনায় চুল পড়াকে 'টেলোজেন এফ্লুভিয়াম' হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। এর কারণগুলো হলো: মানসিক চাপের পাশাপাশি সংক্রমণের ভয়। ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রতিক্রিয়া হিসাবে প্রোইনফ্ল্যামেটরি সাইটোকাইন নিঃসরণ চুলের ফলিকলগুলোকে ক্ষতি করে।

থাইরয়েড

শরীরে থাইরয়েড রোগ বাসা বাঁধলে এমনটা হতে পারে। থাইরয়েড হরমোন, আয়রন, ক্যালশিয়ামের মতো খনিজ শোষণ করে। এই খনিজগুলো চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। হাইপোথাইরয়েডিজম এবং হাইপারথাইরয়েডিজম— উভয় রোগের ক্ষেত্রেই রোগীর চুল ঝরতে শুরু করে।

ক্যানসার

ক্যানসার চিকিৎসায় কেমোথেরাপি দেওয়ার পর চুল উঠে যায়। কেমোথেরাপির প্রথম ডোজ দেওয়ার দুই-তিন সপ্তাহ পর চুল পড়া শুরু হয় এবং কেমোর সর্বশেষ ডোজের তিন-চার মাস পর পুনরায় চুল গজানো শুরু হয়।

অ্যালোপেসিয়া

যখন শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা চুলের ফলিক্‌লগুলো আক্রমণ করে, তাকে বলা হয় অ্যালোপেসিয়া অ্যারেটা। মাথার তালু এবং মুখেই এই রোগের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে। এ রোগে আক্রান্ত হলে মাথার তালুতে গোল গোল চাকতির মতো টাক হয়ে যায়। এমনকি, ভ্রুর রোমও ঝরতে শুরু করে।

পিসিওডি

অনেক মহিলাই পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমের সমস্যায় ভোগেন। হরমোনের সাম্যতা বজায় না থাকার কারণেই মূলত এই সমস্যা হয়। এই রোগে আক্রান্ত হলে অত্যধিক চুল পড়া এবং চুল রুক্ষ, শুষ্ক, নিষ্প্রাণ হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলো দেখা দেয়।

এক্সিমা এবং পোরিওসিস

প্রদাহজনিত এই দুই রোগের কারণে চুলকানি, র‌্যাশ হতে পারে। লাল ছোপ সারা মুখে ছড়িয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, এই দুই রোগের কারণেও চুলের ঘনত্বও কমে যেতে পারে।

চুল পড়া রোধে করণীয়

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও পুষ্টিকর খাবার খান। প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ গ্রহণ করুন। দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করতে হবে। চুল খুশকিমুক্ত ও পরিষ্কার রাখুন। বয়সের সঙ্গে চুলের রং পরিবর্তন হয়, এটা মেনে নিতে হবে। কলপ, কৃত্রিম রং যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।

কোঁকড়া চুল সোজা করার চেষ্টা না করাই ভালো। প্রয়োজনে রাসায়নিকের পরিবর্তে রোলার ব্যবহার করুন। টেনে চুল বাঁধা ঠিক নয়। আস্তে চুল আঁচড়াবেন এবং ভেজা চুল বেশি আঁচড়াবেন না। নরম থাকতে চুল ঠিক করুন। ব্রাশের চেয়ে দাঁতওয়ালা চিরুনি ব্যবহার করা ভালো।

চুলের ধরন বুঝে শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন। যেকোনো ওষুধ গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

চুল পড়া রোধ করে মেথি আর নারকেল তেল। নারকেল তেলের মধ্যে পরিমাণমতো মেথি দিয়ে ফুটিয়ে নিন। তেল ঠান্ডা হলে চুলের গোড়ায় ভাল করে তেল মেখে হালকা হাতে মাসাজ করুন। ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে নিন। এটি সপ্তাহে একদিন করতে পারেন।

ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুল পড়ে যাওয়ার যুগান্তকারী ওষুধ মধু ও ডিম। এই দুইয়ের দ্রবণ ৩০ মিনিট করে মাথায় লাগিয়ে ধুয়ে ফেলার পর চুল অনেকটা ভালো থাকে। উজ্জ্বলতাও বাড়ে। এটুকু করলেই আপনার চুলের ঝরে যাওয়া আটকাতে পারবেন।

চুল পড়া নিয়ে দুনিয়াজুড়েই অনেকে মনোকষ্টে ভোগেন। সঠিক সময়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া, চিকিৎসা নেয়া এবং কিভাবে এর সঙ্গে খাপ খাওয়ানো যায় সে ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।

(ঢাকাটাইমস/১৭ জুলাই/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :