এবার মাগুরার ডিসি ফুড বরখাস্ত

মাগুরা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৮ জুলাই ২০২২, ১৩:৪৮ | প্রকাশিত : ১৮ জুলাই ২০২২, ১৩:২১

মাগুরা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের আয়ন ব্যয়ন কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত (প্রাক্তন) ও মাগুরা সদর উপজেলার প্রাক্তন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. হাফিজুর রহমানকে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

তাকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি- ৩ এর (খ) ও (ঘ) ধারার আওতায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে একই বিধিমালা এর ১২ (১) বিধি মোতাবেক ০৬/০৭/২০২২ ইং তারিখ থেকে চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং সাময়িক বরখাস্তকালে তিনি বিধি মোতাবেক জীবনধারণ ভাতা প্রাপ্য হবেন।

জানা যায়, মাগুরা সদর এলএসডিতে আমন ২১/২২ সংগ্রহ মৌসুমে মাগুরা সদর এলএসডিতে সংগৃহীত ধান ছাঁটাইয়ের বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় ৪টি মিলের অনুকূলে বরাদ্দ প্রদানের ক্ষেত্রে অনিয়ম সংগঠিত হয়েছে।

মেসার্স ওসমান রাইস মিল, প্রোপাইটর মো. সাব্বির আহমেদ নাজমুল, বড় বেরইল, মাগুরা ও মেসার্স রবীন্দ্র অনিমা রাইস মিল, প্রোপাইটর, রথীন্দ্রনাথ দত্ত, গাংনালিয়া, মাগুরা এর অনুকূলে যথাক্রমে ৫৫,০০০ মেট্রিকটন করে মোট এক লাখ ১০ হাজার মেট্রিকটন আমন/২০২১-২০২২ ধানের জমানতের ৩২, ৬৭, ০০০০/- টাকার পে-অর্ডার গ্রহণ না করে ও চুক্তিপত্রে কাল্পনিক/ভূয়া পে অর্ডার নম্বর, তারিখ, ব্যাংকের নাম ও টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে ধান ছাটাইয়ের বরাদ্দ আদেশ প্রদান করা হয়েছে।

এছাড়াও মেসার্স ভাই ভাই রাইসমিল, প্রোপাইটর, তৈয়েবুর রহমান, কুশাবাড়িয়া, মাগুরা ও মেসার্স শহীদ রাইসমিল, প্রোপাইটর. মো. শহিদুল ইসলাম, কাটাখালি, মাগুরা এর অনুকূলে যথাক্রমে ৪৫০০০ ও ১৫০০ মেট্রিক টন মোট ৬০ হাজার মেট্রিক টন আমন/২০২১-২০২২ ধানের জমানত হিসাবে কয়েকটি পে-অর্ডার জমা দিয়ে চুক্তিপত্র সম্পাদন করে এলএসডিতে ফলিত চাল জমা দানের পূর্বেই জমানত অবমুক্ত করে নেওয়া হয়েছে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, কুষ্টিয়া এর ৩০/০৬/ ২০২২ তারিখের ১৫১৯ নং এবং আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক, খুলনা এর ৩০/৬/২০২২ তারিখের ১৫৬৪ নং স্মারকের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী মো. হাফিজুর রহমান উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, কালিয়া, নড়াইল (প্রাক্তন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, মাগুরা সদর ও আয়ন ব্যায়ন কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, মাগুরা) হিসাবে কর্মকালে চুক্তিপত্রের সঙ্গে পে-অর্ডার সংযুক্ত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত না হয়নি। এবং দুটি মিলের অনুকূলে ধান ছাঁটায়ের চুক্তিপত্র সম্পাদনপূর্বক বরাদ্দ আদেশ প্রদান করেন।

এছাড়া তিনি জামানতের পে-অর্ডার যাচাই না করে ধানের বরাদ্দ আদেশ প্রদান, সংগ্রহ কার্যক্রমের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ কাজের সরকারি অর্থ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র, জামানতের পে-অর্ডার, চুক্তিপত্র, বরাদ্দ আদেশ তথা ছাঁটাই সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্র অফিস সহায়কের জিম্মায় রেখে ফলিত চাল জমাদানের পূর্বে জমাদান ফেরত প্রদানের সুযোগ প্রদান করে সরকারি দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা প্রদর্শন করেছেন মর্মে জানা যায়।

যেহেতু তিনি চুক্তিপত্রের সঙ্গে পে-অর্ডার সংযুক্ত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত না হয়ে দুইটি মিলের অনুকূলে ধান ছাঁটাইয়ের চুক্তিপত্র সম্পাদনপূর্বক বরাদ্দ আদেশ প্রদান করেন।

এছাড়া জামানতের পে-অর্ডার যাচাই না করে ধান বরাদ্দ আদেশ প্রদান, সংগ্রহ কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ কাজের সরকারি অর্থ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র, জামানতের পে-অর্ডার, চুক্তিপত্র, বরাদ্দ আদেশ তথা ছাঁটাই সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্র অফিস সহায়কের জিম্মায় রেখে ফলিত চাল জমাদানের পূর্বে জামানত ফেরত প্রদানের সুযোগ দেওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি-৩ এর (খ) ও (ঘ) ধারার আওতায় অসদাচারণ ও দুর্নীতির অভিযোগে একই বিধিমালা এর ১২ (১) বিধি মোতাবেক চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্তযোগ্য।

সদ্য বহিস্কৃত সৈয়দা সানিয়া আক্তার জানান, ডিসিফুড স্যার (মো. হাফিজুর রহমান) আমাকে দিয়ে মিল, স্ট্যাম্প, পে-অর্ডার সংক্রান্ত কোন কাজ করাতো না। তিনি এগুলো অফিস সহায়ক মো. আলমগীর হোসেনকে দিয়ে করাতো। আমার নামে এ সংক্রান্ত দাপ্তরিক কোন অর্ডার ছিল না। আমাকে ডিসিফুড স্যার যখন যে কাজ করতে বলতো, আমি কম্পিউটারে সে সকল কাজের চিঠিপত্র টাইপ করতাম। মিলারদের এই চুক্তিপত্র আমার মাধ্যম ছাড়া ডিসিফুড স্যার স্বাক্ষর করতো। এগুলো আমার মাধ্যমে তিনি কখনও করতেন না। তিনি আমার উধ্র্বতন কর্তৃপক্ষ যখন যে সব চিঠি করতে বলেছেন আমি বাধ্য হয়ে তাই করেছি। তিনি অফিস সহায়ককে দিয়ে কাজ করাতে পছন্দ করতেন। অফিস সহায়ক যদি কম্পিউটারে টাইপ করতে পারতেন তাহলে ডিসিফুড স্যারের আমাদেরকে দিয়ে কাজ করানোর দরকার হতো না। এখন যে অনিয়ম ধরা পড়েছে তা আমার উপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। আমার মত মহিলা কর্মচারীর সুনাম নষ্ট করলো। এমনকি আমাকে বিনা দোষে চাকরি হতে সাময়িক সাসপেন্ড হতে হলো। নিরপেক্ষ তদন্ত হলে প্রকৃত ঘটনাসহ আরও অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে।

নাম প্রকামে অনিচ্ছুক মাগুরা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে কর্মরত একজন জানান, ডিসিফুড হাফিজ স্যার দারোয়ানদের বদলি করে টাকা নেন। আমাদের মতো ছোট কর্মচারীদের নিকট উচ্চতর গ্রেডের জন্য টাকা নেন। শুধু তাই নয়, তিনি মিলার, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাজার করার টাকা নেন। আমাদের সাথে অমানবিক আচরণ করেন। বকাবকি করে, কুত্তার বাচ্চা, বাসপার্ড,বেজন্মা এসব আজেবাজে কথা বলে গালিগালাজ করতো। সে অফিসে শুধু একজনকে বুঝতো সে হচ্ছে আলমগীর। তার মাধ্যমে তিনি অবৈধভাবে টাকা পয়সা উঠাতো। আর কাউকে মানুষ মনে করতো না। আলমগীর ছিল তার আস্থাভাজন।

তিনি বউকে দিয়ে অফিসের কর্মচারীদের বদলি করে টাকা পয়সা নিতো। তার বউকে সবাই গিফট করতো। তিনি এতটা লোভী ছিলেন যে দুই এক টাকার জন্য হাত পাততেন। তার এই লোভের কারণে আজকে অফিসের এই অবস্থা। তিনি আসার পর যেসব মিল তালিকা থেকে বাতিল ছিল সেগুলি আবার তালিকায় ঢুকিয়ে বরাদ্দ দিয়েছেন। আর এসব করাতেন আলমগীরকে দিয়ে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মো. হাফিজুর রহমানের ব্যবহৃত মুঠেফোনে কল দেয়া হয়। ঢাকা টাইমস এর জেলা প্রতিনিধি (সাংবাদিক) পরিচয় দিলে পরে কথা বলবেন বলে লাইন কেটে দেন। লাইন কেটে দেয়ার পরবর্তী ১২ ঘণ্টায় ১৫ বার ফোন দেয়া হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।

এ বিষয়ে মাগুরা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনোতোস মজুমদার জানান, এখানে আমি গত ১৯ জুন ২০২২ ইং যোগদান করছি। আমার পূর্ববর্তী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমানের দায়িত্ব কালিন কিছু অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় মাগুরা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের আয়ন ব্যায়ন কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত (প্রাক্তন) ও মাগুরা সদর উপজেলার প্রাক্তন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, জনাব মো. হাফিজুর রহমান, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, কালিয়া, নড়াইল সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। গত ৩০/০৬/২০২২ ইং তারিখে মাগুরা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের প্রধান সহকারী সৈয়দা সানিয়া আক্তার ও পিয়ন মো. আলমগীর হোসেন বরখাস্ত হয়েছে।

তিনি আরও জানান, আমি এমপি মহোদয় মাগুরা-০১ এর সাথে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন যেখানে সরকারের বিন্দু মাত্র স্বার্থ জড়িত আছে সেখানে কোন ছাড় দিবেন না। এক কথায় দুর্নীতির সাথে নয়। কেউ যদি আমার নামে দূর্নীতি করার চেষ্টা করে তাহলে সরাসরি আপনি আমাকে ফোন দিবেন।

(ঢাকাটাইমস/১৮জুলাই/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :