বিদেশে পাঠানোর নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন কালাম
প্রকাশ | ১৮ জুলাই ২০২২, ২১:৪৬ | আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২২, ২২:০৮
তিন বছরে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানোর নামে প্রায় তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি মানবপাচারকারী প্রতারক চক্র।
র্যাব জানিয়েছে এই প্রতারকচক্রের পাঠানো লোকেরা বিদেশ গিয়ে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এই চক্র তিন শতাধিক লোককে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে জনশক্তি পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে জনপ্রতি পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে।
র্যাবের অভিযানে রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের হোতা মো. আবুল কালাম নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩। এ সময়ে তার কাছ থেকে ১৪টি পাসপোর্ট, ছয়টি নকল বিএমইটি কার্ড, আর্থিক লেনদেনের বিভিন্ন লেজার, রেজিস্ট্রার এবং ডায়েরি উদ্ধার করা হয়।
সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ একথা বলেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, র্যাব-৩এর উপ-অধিনায়ক মেজর রাহাত হারুন খান।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, র্যাব-৩-এর একটি দল রবিবার দিবাগত রাতে রাজধানীর পল্টন এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের হোতা মো. আবুল কালামকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃত আবুল কালামের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের অধিনায়ক আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, তিনি একজন সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের সদস্য। তার জনশক্তি রপ্তানির কোনো লাইসেন্স নেই। কিন্তু তিনি দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রপ্তানির নামে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে লোক পাঠিয়ে আসছেন। এছাড়াও এই চক্র মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে জনশক্তি পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক বেকার যুবক-যুবতীদের কাছ থেকে পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিতেন। পরে তাদের ভুয়া ভিসা এবং নকল বিএমইটিকার্ড ধরিয়ে দেন। ভুক্তভোগীরা ওই ভিসা এবং নকল বিএমইটিকার্ড নিয়ে বিমানবন্দরে গেলে ইমিগ্রেশন তাদের এই ভিসা এবং বিএমইটিকার্ড নকল হওয়ায় বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেন। ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে প্রতিকার চাইলে আবুল কালাম তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। গত তিন বছরে এই চক্রটি অবৈধভাবে অর্ধশতাধিক লোককে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠান। যারা বিদেশ গিয়ে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের এই অধিনায়ক বলেন, অন্যদিকে এই চক্র তিন শতাধিক লোককে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে জনশক্তি পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে জনপ্রতি পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে ভুয়া ভিসা এবং জাল বিএমইটিকার্ড সরবরাহ করে প্রায় তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তারকৃত মো. আবুল কালাম চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। তিনি ২০০৪ সালে ফ্রি ভিসায় দুবাই গিয়ে দর্জি হিসেবে কাজ শুরু করেন। মালিকের সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় ২০১১ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তারপর তিনি এলাকায় দর্জি ব্যবসা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এই ব্যবসায় সফল না হওয়ায় ২০১৯ সাল থেকে অবৈধভাবে জনশক্তি বিদেশে পাঠানোর নামের প্রতারণা শুরু করেন। তিনি প্রথমে ভুক্তভোগীদের ইউরোপে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাসপোর্ট এবং প্রাথমিক খরচ বাবদ ৫০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে থাকে। তারপর ভিসা, টিকেট, মেডিকেল, বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স ইত্যাদির খরচ দেখিয়ে ধাপে ধাপে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে থাকে। এক পর্যায়ে ভুক্তভোগীদের আস্থা অর্জনের জন্য দু-একজনকে ভ্রমণ ভিসায় দুবাই পাঠান। ভুক্তভোগীদের স্থায়ী ঠিকানা সংশ্লিষ্ট জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে নিবন্ধন করতে বলে। ওই নিবন্ধন বিএমইটিকার্ড পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা বহন করে না।
সংবাদ সম্মেলনে আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, কিন্তু ভুক্তভোগীরা তাদের অজ্ঞতার কারণে এই নিবন্ধনকেই বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স প্রাপ্তির চূড়ান্ত ধাপ হিসেবে মনে করে। তারপর ভিকটিমদের ভুয়া ভিসা ও নকল বিএমইটিকার্ড ধরিয়ে দিয়ে ফ্লাইটের জন্য পুনরায় টাকা দাবি করে। এভাবেই আবুল কালাম প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করে।
গ্রেপ্তারকৃত মো. আবুল কালাম ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানার দক্ষিণ সতর গ্রামের মো. নুরুল আলমের ছেলে।
(ঢাকাটাইমস/১৮ জুলাই/এএ/এআর)