বাসাবাড়ির গ্যাস ব্যবহারে ডাবল খরচ

ওমর ফারুক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২২, ২৩:১৩ | প্রকাশিত : ২৩ জুলাই ২০২২, ২৩:১১

নিত্যপণ্যের খরচের পাশপাশি বেড়েছে বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাসের খরচ। আবাসিক বাড়িতে গ্যাসের সংযোগ থাকলেও দিনের অধিকাংশ সময়েই গ্যাস থাকছে না। বিশেষ করে ঢাকার আশেপাশের এলাকায় এ সমস্যা সবচেয়ে বেশি। তিতাসের গ্যাসের স্বল্পতার কারণে সিলিন্ডার গ্যাস কিনে প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করতে হচ্ছে হাজার হাজার পরিবারকে।

সর্বশেষ জুনে পাইপলাইনে সরবরাহ করা গ্যাসের দাম বাড়ায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের পাইকারি দাম ৯ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ১১ টাকা ৯১ পয়সায়। ফলে খুচরা পর্যায়ে বেড়ে যায় গ্যাসের দাম।

রান্নার জন্য সিঙ্গেল বার্নার চুলার মাসিক বিল ৯২৫ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৯৯০ টাকায়। ডাবল বার্নার চুলার মাসিক বিল ৯৭৫ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ১০৮০ টাকায়। আর প্রিপেইড মিটারের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটের খরচ ১২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ টাকায়। ২০১৯ সালের পরই জুন মাসে সর্বশেষ দাম বাড়ে।

এদিকে দাম বাড়লেও প্রত্যাশা মাফিক গ্যাস পান না অনেক গ্রাহক। আবাসিক এলাকায় তেমন গ্যাস সংকট না থাকলেও শিল্পাঞ্চল এলাকাগুলোতে চলে গ্যাসের সংকট। সকালে কিছুটা গ্যাসের দেখা মিললেও দিনের বাকি সময় থাকছে না গ্যাস। লাইনে গ্যাস ফিরে আসছে রাত ১১টার পর।

পাইপলাইন গ্যাসের এমন আচরণের জন্য বেশিরভাগ গ্রাহক বাসাবাড়িতে বাধ্য হয়ে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করে থাকেন। লাইনের গ্যাসের সংযোগের জন্য এক দিকে তার যেমন বিল পরিশোধ করতে হয়, অন্য দিকে টাকা খরচ করতে হয় সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে। ফলে গ্যাসের পিছনে খরচ দাঁড়াচ্ছে দ্বিগুন।

বর্তমানে ১২ কেজি সিলিন্ডার গ্যাসের দাম ১ হাজার ২৫৪ টাকা। জুন মাসে যার মূল্য ছিলো ১ হাজার ২৪২ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১২ টাকা।

বসিলা এলাকায় থাকেন গৃহিনী পারভীন আক্তার। স্বামী শাহজাহান হোসেন ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, দিনের অধিকাংশ সময়ই গ্যাস থাকে না। সকালে যা একটু আসে। বাকি সময় আর থাকে না। রাত ১০ টা বা ১১ টার পর লাইনে গ্যাস আসা শুরু হয়। মূলত গ্যাস তো বেশি দরকার পড়ে সকালে আর দুপুরে। তাই বাধ্য হয়ে সিলিন্ডারে রান্না করতে হয়।

টঙ্গীতে বসবাস করেন গৃহিনী ফিরোজা বেগম। তিনি বলেন, গ্যাস তো থাকেই না। যদিও রাতে গ্যাস পাওয়া যায়।কিন্তু রাতে গ্যাস দিয়ে করবো কি? এখন খরচ দুইদিকেই বাড়লো। গ্যাসের বিল ও দিতে হয়, সিলিন্ডার খরচ তো আছেই।

মূলত, শিল্পাঞ্চল হওয়ায় কারখানাগুলোতে প্রচুর পরিমান গ্যাসের দরকার পড়ে। ফলে দিনের বেলায় আশেপাশের আবাসিক সংযোগে গ্যাস সংকট দেখা যায়। অগত্যা সিলিন্ডারমুখী হতে হয় গ্রাহকদের।

তবে ২০২০ সাল থেকে সরকার বাসাবাড়িতে স্থায়ী ভাবে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেবার ফলে সিলিন্ডার ব্যবহারের সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। নতুন করে তৈরি হওয়া বাড়িতে যারা থাকছেন, তারা সবাই সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করছেন। এতে বিশাল অঙ্কের ব্যবসা হচ্ছে সিলিন্ডার গ্যাস কোম্পানীদের।

বাংলাদেশে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ২৫ টি কোম্পানি আমদানীকৃত সিলিন্ডার গ্যাস বাজারজাত করছে। যারা প্রতি বছর প্রায় ১২ লাখ টন এলপি গ্যাস গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রি করে থাকে।

কেন গ্যাসের চাপ এতো কম এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লাহ ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমাদের মোট চাহিদা প্রায় ১ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের। বর্তমানে গড়ে পাচ্ছি ১ হাজার ৬২৬ মিলিয়নের মতো। যা চাহিদার তুলনায় কম। শিল্পকারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র সহ নানা জায়গায় গ্যাস সাপ্লাইয়ের ফলে আবাসিক এলাকা গ্যাস কিছুটা কম পাচ্ছে। এটি সাময়িক। সকালে কম থাকলেও বিকাল নাগাদ বেড়ে যাবে বলে আশা করছি।

গ্যাসের এমন সংকটের কারনে সরকার ইতোমধ্যে বিদ্যুতের মতো গ্যাসও রেশনিংয়ের কথা চিন্তা করছে। সঙ্কট সামাল দিতে এখন গ্যাসও শিডিউল করে ১ থেকে ২ ঘণ্টা বন্ধ রাখার কথা ভাবা হচ্ছে।

দেশের ৫১ ভাগ বিদ্যুত উৎপাদিত হয় গ্যাস দিয়ে। বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় অর্থ সাশ্রয়ে স্পট মার্কেট থেকে গ্যাস কেনা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দিন দিন কমছে গ্যাসের নিজস্ব উৎপাদন। ফলে গ্যাস সঙ্কটে অনেক বিদ্যুতকেন্দ্র বসে থাকছে, উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে ক্যাপটিভ কেন্দ্রগুলোতে। আবাসিকেও দেখা দিয়েছে গ্যাস সঙ্কট। এ অবস্থায় শিডিউল করে ১ থেকে ২ ঘণ্টা জোনভিত্তিক গ্যাস বন্ধ রাখার চিন্তা করছেন জ্বালানি সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে শনিবার পেট্রোবাংলার উৎপাদন ও বিপণনের মহাপরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, বিদ্যুতের মতো গ্যাসেও শিডিউল করার কথা চলছে। বিষয়টা পর্যবেক্ষণে রয়েছে। তবে সব কিছু নির্ভর করছে মন্ত্রণালয়ের ওপর। মন্ত্রণালয় চাইলেই করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৩জুলাই/আরকেএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :