দখল-দূষণে ভরে গেছে বামনডাঙ্গা নদী

নুর আলম বাবু, নীলফামারী
 | প্রকাশিত : ০৩ আগস্ট ২০২২, ১৫:৪৮

প্রায় শত বছরের পুরানো বামনডাঙ্গায় একসময় বানিজ্যিক নৌ-চলাচলে ব্যস্ত ছিলো। নদীর কুল ঘেঁষে গড়ে উঠেছিল শাঁখামাচা বন্দর। সেই বন্দর বর্তমানের নীলফামারী শহর।

কালের বিবর্তনে ইতিহাস ঐতিহ্যের খরস্রোতা নদী এখন হারিয়েছে নাব্যতা। দখল আর দূষণে নদী পরিণত হয়েছে মৃত নালা বা ডোবায়। নেই পানির স্রোত, দখল দূষণে ভরাট হয়ে গেছে নদী। নদীর দু’পাশ জুড়ে প্রভাবশালীদের বিস্তার। গড়ে উঠেছে নানান স্থাপনা। নদী বাঁচাতে সরকারে ডেল্টা প্লানের আওতায় বামনডাঙ্গার ৭কিলোমিটার খনন কাজ শুরু হলেও থেমে গেছে প্রভাবশালী মহলের দাপটে।

নকশা অনুযায়ী বামনডাঙ্গার খনন কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ব্যর্থ হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে নদীর নাব্যতা ফেরাতে দ্বিতীয় পর্যায়ে আবারও খনন প্রক্রিয়া চলবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

খরস্রোতা বামনডাঙ্গা কালের সাক্ষী হওয়ায় অভিযোগের শেষ নেই স্থানীয়দের।

সরজমিনে গাছবাড়ি এলাকার কৃষি খামার থেকে শুরু করে পাঁচমাথা পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও ময়লা আবর্জনার স্তুপ। আবার কোথাও নদীর মাঝখানে বসত বাড়ির ওয়াল। আবার কোথাও গড়ে উঠেছে বড় বড় বিল্ডিং। কোনো কোনো এলাকায় পানির দূর্গন্ধে নাক ধরে রাখা যাচ্ছে না। শহরের একমাত্র পানি নিষ্কাশনের পথ এই নদীটি হওয়ায় বিভিন্ন ড্রেনের লাইন দেয়া হয়েছে নদীতে। এ নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই স্থানীয়দের।

নদীর তীরবর্তী মাস্টার পাড়া এলাকার আব্দুল কাদের বলেন, এই নদীতে দেবী চৌধুরানীর বজরা চলতো। প্রতিনিয়ত চলতো বানিজ্যিক নৌযানও। কিন্তু দখলবাজরা দখল করে নদীটিকে মৃত নালায় পরিণত করেছে। অনেকে নিজের নামেই রেকর্ড করেছে নদীটিকে। চতুর দিকে নদীর জায়গা দখল করে বড় বড় বিল্ডিং গড়ে উঠেছে। তবে এই ঐতিহ্যবাহী নদীটি খনন করা খুবই জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ যাতে এই শহরের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে নদী খননে ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়া হয়।

শহরের বাড়াই পাড়া এলাকার হাফিজ সোহেব বলেন, আশির দশকে এই নদীটিতে আমি মাছ ধরেছি। অনেক প্রস্ত ছিলো নদীটি। অনেক প্রভাবশালী এই নদীটিকে নিজের পৌত্রিক মনে করে দখলে নিয়েছে। শহরের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ এই নদীটি। কিন্তু দখলবাজদের কারণে পানি বের হতে পারে না। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এমনকি পানি জমে চরম দূর্গন্ধের সৃষ্টি হচ্ছে। গন্ধে নদীর তীরবর্তী হাজার হাজার মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আমরা চাই নদীর আশেপাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে পূনরায় নদী খনন করা হউক।

নদী তীরবর্তী এলাকার জামিল উদ্দিন বলেন, নদী বলতে হয় না, খালও বলা যায় না। বাবা-দাদার কাছে শুনেছি, এই বামনডাঙ্গা নদীতে এক সময় ব্যবসায়ীরা নৌকা নিয়ে ব্যবসা করতো। কিন্তু এখন সেই নদী হারিয়ে গেছে দখলের কবলে। পানি বের হওয়ার কোন পথ নেই। অনেকেই নদীতে বড় বড় বিল্ডিং বানিয়েছে। কেউ বা বানিয়েছে কল-কারখারনা। কল-কারখানার পানি জমে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হচ্ছে। এখানে মশা-মাছির উৎপত্তি ছাড়া কিছুই নাই। যেটুকু নদী আছে কচুরিপানায় ভরে গেছে। একসময় নদী খনন করতে দেখা গেছে। কিন্তু প্রভাবশালীদের দাপটে থমকে গেছে। নীলফামারী শহর রক্ষার্থে বামনডাঙ্গা নদী খুবই গুরুত্ব পূর্ণ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাই যাতে এই নদীটির উপরে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে যাতে খনন করা হয়।

নীলফামারী পওর বিভাগের (বাপাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণ কমল সরকার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ১ম পর্যায়ে ৬৪ জেলার ন্যায় নীলফামারীতেও ৪’শ কি:মি: ছোট নদী, খাল-জলাশ্বয় পূর্ণ খনন করা হয়েছিলো। তার মধ্যে খননের আওতায় আনা হয়েছিলো বামনডাঙ্গা নদীটিও। কিন্তু প্রভাবশালীদের দখল আর সীমানা জটিলতায় নদী খনন সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছিলো পানি উন্নয়ন বোর্ড।

তবে নদীটিকে আবারও খনন করার বিভিন্নভাবে আমাদের কার্যক্রম চলছে। ২য় পর্যায়ের বরাদ্দ পেলেই বামনডাঙ্গা নদীটিকে কার্যক্ষম করে তুলতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলবে।

(ঢাকাটাইমস/৩আগস্ট/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :