সেই বিতর্কিত হেলেনা জাহাঙ্গীর এখন...

প্রকাশ | ০৫ আগস্ট ২০২২, ১২:১০ | আপডেট: ০৫ আগস্ট ২০২২, ১৩:৩৯

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস

ব্যবসা থেকে রাজনীতিতে এসে আলোচিত। জুটিয়ে নেন আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য পদ। অপকর্মের অভিযোগে পরে দল থেকে বহিষ্কার, গেপ্তার, কারাবাস। কারাগার থেকে বেরিয়ে বেশ কিছুদিন অনেকটাই অন্তরালে। তবে আলোচিত সেই হেলেনা জাহাঙ্গীর এখন ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে সকাল-সন্ধ্যা ব্যস্ত। তিনি নিজেই ঢাকা টাইমসকে এই খবর দিলেন।

একসময় ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দারুণ সক্রিয় ছিলেন নামের আগে ‘সিস্টার’ লাগানো হেলেনা জাহাঙ্গীর। মূল নামের বদলে ব্যবহার করতেন ‘সিস্টার হেলেনা’। পোশাক কারখানাসহ নানা ব্যবসায় হেলেনা জাহাঙ্গীর বেশ সফল ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। যদিও নানা বিতর্ক আর সমালোচনাও ছিল তার সঙ্গী। এরই মধ্যে এক দুঃস্বপ্নের রাত নেমে আসে তার জীবনে।

২০২১ সালের ২৯ জুলাই রাতে তার গুলশানের বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। বিভিন্ন বিদেশি মদসহ তাকে আটক করা হয়। একই দিন অভিযান চালানো হয় তার মালিকানাধীন কথিত আইপিটিভিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে।

পরদিন ৩০ জুলাই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় হেলেনা জাহাঙ্গীরকে। ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ও ব্যক্তিদের সম্মানহানি করার অপচেষ্টার অভিযোগ আনা হয় মামলায়।

তার বিরুদ্ধে হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটিসহ মোট চারটি মামলা এখন বিচারাধীন। হেলেনা জাহাঙ্গীর জানান, তার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো এখন শেষের দিকে।

‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলে এটির সভাপতি হন হেলেনা নিজেই। এই সংগঠন নিয়ে বিপুল সমালোচনার মুখে তাকে মহিলাবিষয়ক উপকমিটি থেকে বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষণে ক্ষণে নানা আবেগপূর্ণ বক্তব্য আর কান্না দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। এরইমধ্যে ঘটে তার ঢাকার গুলশানের বাসায় অভিযান।

হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে করা মামলায় তাকে কয়েক দফা রিমান্ডে নেয় পুলিশ। চার মামলার মধ্যে দুটির তদন্ত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অন্য দুটির তদন্ত করে ডিবি ও পল্লবী থানার পুলিশ। সব কটি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে মামলাগুলো ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।

মামলাগুলোর সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু ঢাকা টাইমসকে বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে করা সব মামলার বিচার চলছে। তবে তিনি এখন জামিনে আছেন।

চার মামলায় জামিন মেলার পর কারাগার থেকে মুক্তি পান হেলেনা জাহাঙ্গীর। সবশেষ গত বছরের ২৪ নভেম্বর গুলশান থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জামিন পান তিনি। প্রায় চার মাস জেল খেটে গত বছরের ২৫ নভেম্বর সকালে হেলেনা জাহাঙ্গীর কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান।

কারামুক্ত হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায়নি। বলা যায়, নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন তিনি। এখন তার গুলশানের বাসায় বসবাস করছেন। খুব সকালে অফিসে যান, কাজ শেষে ফিরে আসেন বাসায়। এই তার বর্তমান জগৎ।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গুলশান ৩৬ নম্বর সড়কে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির ফটকে নিরাপত্তাকর্মী বসে আছেন। তিনি জানান, হেলেনা জাহাঙ্গীর খুব ভালো আছেন। তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সেখানে থাকা একজন নিরাপত্তাকর্মী বলেন, ‘হেলেনা ম্যাডামকে চিনি। ম্যাডাম খুব সকালে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যান। আসেন রাতের বেলায়। সারা দিন ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজে ব্যস্ত থাকেন বলে শুনেছি।’

নিরাপত্তাকর্মী ও গাড়িচালকের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, হেলেনা জাহাঙ্গীর কারাগার থেকে বের হওয়ার পর তার সব গাড়ির চালক পরিবর্তন করেছেন। নতুন যারা কাজে এসেছেন তারা এই বাড়ির অন্য গাড়িচালকদের সঙ্গে খুব একটা কথাবার্তা বলেন না।

তার বর্তমান কর্মব্যস্ততা সম্পর্কে জানতে ঢাকা টাইমস যোগাযোগ করে হেলেনা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত আছি। সকালে বাসা থেকে বের হয়ে কারখানায় যাই। এ ছাড়া অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যও দেখা-শোনা করি।’

মামলাগুলোর বর্তমান অবস্থা নিয়ে হেলেনা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে করা সবগুলো মামলা এখন শেষের দিকে।’

(ঢাকাটাইমস/০৫আগস্ট/ডিএম)