ওলন্দাজ নর্তকী মাতা হারিকে চেনেন? জানুন তার করুণ পরিণতি

বিনোদন ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ০৭ আগস্ট ২০২২, ১০:০৬

মাতা হারি। প্রকৃত নাম মার্গারিটা গিরট্রুইডা জেলে। ১৮৭৬ সালের ৭ আগস্ট নেদারল্যান্ডসের ফ্রায়সল্যান্ড প্রদেশে তার জন্ম। বাবা এডাম জেলে, মা এন্টজে ভ্যান ডার মুলেন। চার ভাইবোনের মধ্যে মার্গারিটা ছিলেন সবার বড়। তার বাবা এডামের একটি টুপির দোকান ছিল। পরবর্তীতে তিনি তেল শিল্পে বিশাল অংকের টাকা বিনিয়োগ করে যথেষ্ট সম্পদশালী হন।

প্রচুর অর্থবিত্ত থাকায় মার্গারিটা তার শৈশবে বেশ বিলাসী জীবনযাপন করতেন। ১৩ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি খুব ব্যয়বহুল স্কুলে লেখাপড়া করেন। কিন্তু এর কিছুদিন পরেই ১৮৮৯ সালে মার্গারিটার বাবা দেউলিয়া হয়ে যান। তার মায়ের সঙ্গে ছাড়াছাড়িও হয়ে যায়। ১৮৯১ সালে তার মা মারা যান। ১৮৯৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তার বাবা সুসান্না ক্যাথারিনা নামে একজনকে বিয়ে করেন।

তবে তাদের কোনো সন্তান ছিল না। এরপর মার্গারিটা তার দাদার সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। এরপর একটি শিশু শিক্ষালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তীতে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন মার্গারিটা। যার ফলে তার দাদা তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নেন। কিছুদিন পর সেখান থেকে পালিয়ে হেগ শহরে তার চাচার বাড়িতে চলে যান মার্গারিটা।

মার্গারিটার যখন ১৮ বছর বয়স, তখন ডাচ সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি পাত্রী চাই বিজ্ঞাপনে সাড়া দিয়ে একজন সামরিক কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন রুডলফ ম্যাকলেওডকে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের পর ডাচ ইস্ট ইন্ডিজ উপনিবেশে, বর্তমান ইন্দোনেশিয়ায় বসবাস শুরু করেন। ১৮৯৫ সালের ১১ জুলাই আমাস্টারডামে তাদের বিয়ে হয়। ক্যাপ্টেন রুডলফকে বিয়ে করার সুবাদে তৎকালীন ডাচ সমাজের অভিজাত শ্রেণিতে প্রবেশ করার সুযোগ পান মার্গারিটা।

বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে পূর্ব জাভা দ্বীপের মালাঙে চলে যান মার্গারিটা। সেখানে তাদের দুই সন্তান, নরম্যান-জন ম্যাকলিওড (৩০ জানুয়ারি ১৮৯৭) এবং লুই জেনে ম্যাকলিওড (২ মে ১৮৯৮) জন্মগ্রহণ করে। তবে তাদের সংসার সুখের ছিল না। ম্যাকলিওড মদ্যপ ছিলেন। তিনি মার্গারিটার চেয়ে ২০ বছরের বড় ছিলেন। ক্যাপ্টেন ম্যাকলিওড প্রায়ই তার স্ত্রীকে মারতেন।

ম্যাকলিওডের ধারণা ছিল, মার্গারিটার কারণেই সামরিক বাহিনীতে তার পদোন্নতি হচ্ছে না। তার একজন রক্ষিতাও ছিল। তৎকালীন ডাচ ইস্ট ইন্ডিজে একজন রক্ষিতার সঙ্গে সম্পর্ক রাখা ছিল সাধারণ ব্যাপার। পরে মার্গারিটা তার স্বামীকে ত্যাগ করে ভ্যান রিড নামে আরেক সামরিক অফিসারের কাছে চলে যান।

কয়েকমাস ধরে সেখানে নিবিড়ভাবে ইন্দোনেশিয়ান রীতিনীতি শেখেন এবং একটি নাচের কোম্পানিতে যোগদান করেন। এর পরই ১৮৯৭ সালে তিনি ‘মাতা হারি’ নাম নেন। মালয় ভাষায় যার অর্থ সূর্য বা দিনের চক্ষু।

১৯০৩ সালে প্যারিসে যান মাতা হারি। সেখানে একটি সার্কাসে তিনি লেডি ম্যাকলিওড নামে ঘোড়শওয়ার হিসেবে কাজ করেন। ১৯০৫ সালের মধ্যে তিনি বিদেশি নর্তকী হিসাবে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। যৌনতা ও শরীর প্রদর্শনের মাধ্যমে মাতা হারি খুব দ্রুত দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তিনি নিজেকে জাভার এক রাজকুমারী হিসাবে জাহির করতেন।

নাচের মঞ্চে মাতা হারির সাহসী খোলামেলা উপস্থাপনা ছিল দর্শক আকর্ষণ করার হাতিয়ার। তার নৃত্য উপস্থাপনার সবচেয়ে দর্শকপ্রিয় অংশটি ছিল নৃত্যরত অবস্থায় ক্রমে শরীরের সমস্ত পোশাক খুলে ফেলা। নাচের শেষে শুধুমাত্র একটি বক্ষবন্ধনী এবং হাতে ও মাথায় কিছু অলংকার অবশিষ্ট থাকত।

১৯১০ সালের মধ্যে অসংখ্য নৃত্যশিল্পী মাতা হারিকে অনুকরণ করা শুরু করেন। সমালোচকরা বলতেন, তার এই সাফল্য শুধুমাত্র দেহ প্রদর্শনের মাধ্যমে এসেছে। কোনোরকম শৈল্পিকতার উপস্থিতি সেখানে নেই। যদিও মাতা হারি সমগ্র ইউরোপ জুড়েই অনেক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেন। তবে কিছু সাংস্কৃতিক সংগঠন মাতা হারিকে নৃত্যে পারদর্শী মনে করত না এবং তার সঙ্গে কোন অনুষ্ঠান আয়োজন করতে উৎসাহী ছিল না।

১৯১২ সালের পর মাতা হারির ক্যারিয়ারে ভাঙন শুরু হয়। ১৯১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তাকে এলসি প্যালেস নামে একটি হোটেল থেকে গ্রেপ্তার করে ফরাসী বাহিনী। গুপ্তচর বৃ্ত্তির দায়ে তার বিচার শুরু হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে গোপন সংবাদ পাচারের মাধ্যমে ৫০ হাজার ফরাসি সৈন্যকে হত্যার ঘটনায় জার্মানিকে সহায়তা করা।

মাতা হারির হোটেল কক্ষে অদৃশ্য কালি পাওয়া গিয়েছিল, যা পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনে সাহায্য করে। তবে তিনি দাবি করেছিলেন, এই কালি ছিল তার মেক আপের সামগ্রী।

১৯১৭ সালের ১৫ অক্টোবর ৪১ বছর বয়সী মাতা হারিকে গুলি করে তার মৃত্যুদন্ড কার্য়কর করা হয়। ফায়ারিং স্কোয়াডে মাতা হারিকে বেঁধে রাখা হয়নি। এমনকি তিনি চোখ বাঁধতেও রাজি হননি। মৃত্যুর আগে তিনি ফায়ারিং স্কোয়াডের সৈন্যদের দিকে উড়ন্ত চুম্বন ‍ছুঁড়ে দিয়েছিলেন। মাতা হারি নামের অর্থ ‘ভোরের চোখ’, এক ভোরেই তার মৃত্যু হয়।

(ঢাকা টাইমস/০৭ আগস্ট/এএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :