সংসার চালানো দায়

প্রকাশ | ০৭ আগস্ট ২০২২, ১১:৪৪ | আপডেট: ০৭ আগস্ট ২০২২, ১২:০৭

পুলক রাজ, ঢাকাটাইমস

রহমত আলী পেশায় বেসরকারি চাকরিজীবী। থাকেন রাজধানীর বনশ্রীতে। স্ত্রী ও এক ছেলে নিয়ে তিনজনের সংসার তার। বেতন সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকা। এর মধ্যে দুই রুমের বাসাভাড়া দিতে হয় ১০ হাজার টাকা। বিদুৎ, গ্যাস, ইন্টারনেট বিলসহ আরো প্রায় পাঁচ হাজার টাকা চলে যায়। বাকি টাকা দিয়ে এক মাসের খাদ্য, ছেলের পড়াশোনা, টিউশন খরচ, যানবাহন ভাড়া,  সাংসারিক অন্যান্য খরচ এবং নিয়মিত হাতখরচ মেটাতে মাস শেষে ধারদেনা করে চলতে হয় রহমত আলীর।

রহমত আলী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি চাকরি করে নিয়মিত বেতন পাই। কিন্তু প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সংসার চালাতে মহাবিপদে আছি। বাজারে গেলে সব কিছুর এত দাম। সবজির বাজার, মাছ বাজার, মশলার বাজারসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম প্রতিদিন বেড়েই চলছে। এর মধ্যে শুক্রবার জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আজকেই (শনিবার) বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। যেমন ডিম কিনেছি গত দুই দিন আগে ৪৫ টাকা হালি। তবে আজকে ডিমের হালি ৫০ টাকা।’

রহমত আলী বলেন, টঙের দোকানে রঙ চা খেয়েছি পাঁচ টাকায়। সেই চায়ের দোকান থেকে আজ সাত টাকা দিয়ে খেতে হয়েছে। কাঁচামরিচ গতকাল (শুক্রবার) ছিল ২৫০ টাকা কেজি, আজকে ২৮০ টাকা। এরকম চলতে থাকলে না খেয়ে থাকতে হবে মানুষের। আমি ৩০ হাজার টাকা বেতন পেয়েও হিমশিম খাচ্ছি। যারা দিন আনে দিন খায় তাদের কী হবে। ভাবলেই কষ্ট লাগে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকার রিকশাচালক রহমান মিয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমি প্রতিদিন  ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করি। স্ত্রী, দুই ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে চার হাজার টাকায় মোহাম্মদপুর এলাকার একটা ভাড়া বাসায় থাকি। যত দিন যাচ্ছে আমার মনে হচ্ছে দেশের অবস্থা খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে।

রহমান মিয়া বলেন, আজকে ঘুম থেকে উঠে রিকশা নিয়ে বের হতেই মানুষের মুখে মুখে একটাই কথা, জ্বালানি তেলের দাম নাকি বেড়েছে। এজন্য সবকিছুর দাম আরো বাড়বে। এমনিতেই এত বেশি বাজার দর, এর মধ্যে আরো বাড়লে আমরা বাঁচবো কী করে!

রহমান মিয়া বলেন, ‘এই রাজধানীতে আমার মতো হাজার হাজার মানুষ দিন আনে দিন খায়। আমরা এমনেই পথে নেমে গেছি। সংসার চালাতে গিয়ে প্রায় সময় না খেয়ে থাকতে হয়। এর মধ্যে যদি সবজি, মাছসহ নিত্যপণ্যের দাম আরো বাড়ে আমরা চলবো কীভাবে!’

হাতিরপুল এলাকার মুদির দোকানদার জয়নাল হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমার মতো সব ব্যবসায়ী খুব চিন্তিত। সরকার বলছে দেশে খাদ্যের কোনো সংকট নেই। তো খাদ্যের সংকট না থাকলে দেশজুড়ে প্রতিটি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি কেন হচ্ছে। মানুষকে তো আগে খাবারের সুযোগ করে দিতে হবে। ডাল-ভাতের জন্যই হিমশিম খেতে হলে দেশের মানুষ বাঁচবে কেমনে!’

জয়নাল হোসেন বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে দেশে আরো বড় আন্দোলন তৈরি হবে। খাদ্যের জন্য মানুষ হাহাকার করছে। তখন মারামারি করবে।’

(ঢাকাটাইমস/০৬আগস্ট/পিআর/কেএম)