ফরিদপুরে ছাত্রলীগ কর্মী সবুজ হত্যার বিচার দাবি

ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৭ আগস্ট ২০২২, ২১:০৬

তরুণ ছাত্রলীগ কর্মী সবুজ মোল্লার হত্যায় অভিযুক্ত জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আদানন হোসেন অনু ও তার শ্যালক জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তামজিদুল রশিদ চৌধুরী রিয়ানসহ এ হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে ফরিদপুরে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

ফরিদপুর জেলার সাধারণ জনগণের ব্যানারে রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে মুজিব সড়কে এ মানববন্ধন পালন করা হয়।

মানববন্ধন চলাকালে এলাকাবাসী ও নিহত সবুজের স্ত্রী, মা, বাবা ও চাচাসহ ওই এলাকার বিভিন্ন স্তরের বাসিন্দারা এ দাবি জানান।

এ মানববন্ধন কর্মসূচিতে নিহত সবুজের পরিবারের সাদস্য, এলাকাবাসী এবং জেলা ছাত্রলীগের কয়েকজন প্রাক্তন নেতা বক্তব্য দেন।

প্রসঙ্গত, গত ৪ জুলাই রাত ১১টার দিকে ফরিদপুর শহরতলীর বায়তুল আমান বটতলার মোড় এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মী সবুজকে (২৮) কুপিয়ে মারত্মক জখম করে তার বাম হাটটি কেটে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে এলাকাবাসী মুমূর্ষু অবস্থায় সবুজকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ফরিদপুরের ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যান। সেখানে রাত ১২টার দিকে মারা যান সবুজ।

সবুজ বায়তুল আমান এলাকার শহীদ মোল্লার ছেলে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় ছিলেন। পাঁচ মাস আগে বিয়ে করেছিলেন তিনি। সবুজ ইন্টারনেটের ব্যবসা করতেন। তিনি স্থানীয়ভাবে ফরিদপুর পৌরসভার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য আব্দুল হক ও পাশের আলীয়াবাদ ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. হোসেনের সমর্থক ছিলেন।

এ ঘটনায় সবুজের বাবা শহীদ মোল্লা বাদী হয়ে ৬ জুলাই একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আদনান হোসেন অনুসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৮/১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মানববন্ধন চলাকালে সবুজের বাবা শহীদ মোল্লা বলেন, শালা-বোনাই চক্রান্ত করে আমার ছেলেকে মেরেছে। ওরা মাদকের ব্যবসা করে, সবুজ তার প্রতিবাদ করত। এজন্য সবুজকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, বলা হচ্ছে- ‘মামলা না তুলে নিলে আমার অন্য ছেলেকে মেরে ফেলা হবে। পাশাপাশি ৩০ লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে মামলা তুলে নিতে।’

সবেুজের মা সাজেদা বেগম বলেন, আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই।

পাঁচ মাস আগে বিয়ে করা সবুজের বিধবা স্ত্রী সামিয়া বলেন, আমাদের মাত্র পাঁচ মাস আগে বিয়ে হয়েছে। এর মধ্যে আমার স্বামীকে হারাতে হয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাই বাংলাদেশের আর কোন মেয়ের যেন আমার মত ভাগ্যবরণ করতে না হয়।

কর্মসূচি চলাকালে অন্যদের মধ্যে সবুজের চাচা ফরিদপুর সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হবি মোল্লা, সদরের আলীয়াবাদ ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. তোফাজ্জেল হোসেন, শহর ছাত্রলীগের সাবেক সম্পাদক সজীব আহমেদ, অমিও সরকার, শিথিল, নাভিদ হাসান, মোস্তাফিজুরি রহমান পর্বত প্রমুখ বক্তব্য দেন।

বক্তারা বলেন, এ হত্যা মামলার প্রধান আসামি আদনান হোসেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি। আদনানের শ্যালক জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তামজিদুল রশিদ চৌধুরী রিয়ান। রিয়ান ছাত্রদলের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে ছাত্রলীগের মধ্যে নানা ধরণের বিভেদ সৃষ্টি করছে। তাদের চক্রান্তে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে ছাত্রলীগ কর্মী সবুজ মোল্লাকে।

মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। ওই মিছিল থেকে আদানান হোসন অনু ও তার তার মদদদাতা তামজিদুল রশীদ রিয়ানকে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি করা হয়।

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে মুজিব সড়ক ধরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগ সভাপতিসহ এ হত্যার সাথে জড়িত সকলের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করা সম্বলিত একটি স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হয় পুলিশ সুপারের হাতে। অনুরূপ একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয় জেলা প্রশাসককে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. শামীম হাসান বলেন, এ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত কোন আসামিকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে এজাহারভুক্ত তিন আসামি গত ৩ আগস্ট হাইকোর্ট থেকে চার সপ্তাহের জন্য অন্তবর্তীকালীন জামিন নিয়েছেন।

তিনি বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ সর্বাত্মক অভিযান চালাচ্ছে।

মামলার এজাহারভুক্ত জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আদনান হোসেন অনু ও সন্ধিগ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতি তামজিদুল রশীদ রিয়ানের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

(ঢাকাটাইমস/০৭আগস্ট/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :