১৯ দিন পর আ.লীগ নেতার বাড়ি থেকে অপহৃত ব্যবসায়ী উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৪

আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৭ আগস্ট ২০২২, ২১:৪২

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থেকে অপহরণের ১৯ দিন পর হেলাল খান নামে এক ব্যবসায়ীকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় একটি পিস্তল, ৯ রাউন্ড গুলি, মাইক্রোবাসসহ ৪ অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

রবিবার ঢাকা টাইমসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়াহিদুজ্জামান।

এর আগে শনিবার দিবাগত রাতে আলফাডাঙ্গা উপজেলার বানা ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুজ্জামান মিয়া জিল্লুর বাড়ি থেকে অপহৃত ব্যবসায়ী হেলাল খানকে উদ্ধার করা হয়।

এ সময় অপহরণের সঙ্গে জড়িত আশরাফুজ্জামান মিয়া জিল্লু (৪৫), বোয়ালমারীর ছুলনা গ্রামের পংকজ রায় (৪৩), চরনারানদিয়া গ্রামের রাকিব শেখ (৩২) ও আড়পাড়া গ্রামের নিশানকে (২৪) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

জানা গেছে, ১৮ জুলাই রাতে আলফাডাঙ্গার বুড়াইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে অপহরণ করা হয় হেলাল খানকে। হেলাল খান আলফাডাঙ্গা উপজেলার বানা ইউনিয়নের শিরগ্রামের মৃত আলিম খানের ছেলে। শিরগ্রামে একটি সুতার মিল রয়েছে হেলাল খানের।

অপহৃত হেলাল খান জানান, ‘১৮ জুলাই রাতে আমাকে বানা ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামের আশরাফুজ্জামান মিয়া জিল্লু ফোন দিয়ে ডেকে নেয়। বুড়াইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছামাত্রই আমাকে মাইক্রোবাসে ওঠানো হয়। জিল্লু আমাকে বলে চল ঘুরে আসি। এরপর গাড়িতে ওঠামাত্রই জোরপূর্বক হাতপা বেঁধে ফেলে।’

‘বিভিন্ন স্থান ঘুরে আমাকে নিয়ে রাখা হয় একটি ঘরে। আমি জানালা খুলে ওই এলাকার দোকানের সাইনবোর্ড দেখতে পাই খুলনার ঠিকানা। তখন বুঝতে পারি আমি খুলনায় রয়েছি। পরদিন আমাকে জিল্লু তার বাড়ি আড়পাড়া গ্রামে নিয়ে আসে। সেখানে তার বাড়িতে আমাকে আটকে রাখা হয় এবং আমার ওপর নির্যাতন চালানো হয়’, যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও জানান, ‘এভাবে কয়েকদিন চলে যায়। এরই মধ্যে আমার কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে জিল্লুসহ তার সহযোগীরা। আমার মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। বাড়ি থেকে কেউ ফোন দিলে আমার হাতে ফোন দিয়ে লাউড স্পিকারে কথা বলতে হতো। ওরা শিখিয়ে দিত যে, “আমি ব্যবসার কাজে বাইরে আছি।” এ কারণে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি বুঝতে পারেনি।’

হেলাল খান জানান, ‘এরই মাঝে তিনটি সাদা স্ট্যাম্পে আমার স্বাক্ষর নেওয়া হয়। এছাড়া কয়েকটি চেকের পাতায়ও স্বাক্ষর করিয়ে নেয় জিল্লুসহ তার লোকজন। প্রতিদিনই আমাকে মারপিট করা হতো। আমাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আমার মিলের একটি মেশিন বিক্রি করে দেয় ওরা। প্রায় ১২ লাখ টাকায় মেশিন বিক্রি করে দেয়। আমাকে দিয়েই বিভিন্ন জায়গায় ফোন দিয়ে মেশিন বিক্রির কথা বলায়। কাস্টমার আসলে ওরা মিলে গিয়ে তাকে মেশিন বুঝিয়ে দিয়ে ওদের অ্যাকাউন্টে টাকা নিয়ে নেয়।’

তিনি আরও জানান, ‘আশরাফুজ্জামান মিয়া জিল্লু এলাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। কয়েকমাস আগে বানা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন তিনি। নির্বাচনে পরাজিত হন জিল্লু। আওয়ামী লীগ করায় বিভিন্ন অপকর্ম করলেও ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না।’

‘সর্বশেষ আমার বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয় অপহরণকারী জিল্লুর। আমার বড় ভাই থানা পুলিশের কাছে বিষয়টি জানালে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ আমাকে জিল্লুর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে।’

আলফাডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, অপহৃত ব্যবসায়ী হেলাল খানকে আড়পাড়া গ্রামের আশরাফুজ্জামান মিয়া জিল্লুর বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

ওসি আরও বলেন, উদ্ধার অভিযানকালে একটি পিস্তল, ৯ রাউন্ড গুলি, একটি নোয়া মাইক্রোবাস, ২টি মোবাইল ফোন ও সোনালী ব্যাংকে টাকা জমার একটি রশিদ জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/৭আগস্ট/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :