জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে আ.লীগেও ‘অস্বস্তি’

জাফর আহমেদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২২, ১২:০৬ | প্রকাশিত : ০৮ আগস্ট ২০২২, ০৯:৪৭

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে দেশের তৃণমূল থেকে সব মহলের অসন্তোষ আর চাপা নেই। এমনকি ‘অস্বস্তি’ আছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের মধ্যেও। সরকারের মন্ত্রী ও দলীয় নেতাদের বক্তব্যে তাই ‘নিরুপায়’ শব্দটি আসছে বারবার।

তারা মনে করেন সরকার নিরুপায় হয়ে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করেছে। এ নিয়ে ‘কিছু’ করা যায় কি না সে বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনার আভাসও দিচ্ছেন তারা।

গত শুক্রবার দিবাগত রাতে হঠাৎ করেই ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রল ও অকটেনের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দেয় সরকার। ওই দিন ১২টা থেকে তা কার্যকর হয়। মূল্যবৃদ্ধির হার ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ। এ রকম বড় বৃদ্ধি দেশে আর কখনো দেখা যায়নি। অর্থনীতিবিদরা একে বলছেন অযৌক্তিক ও অস্বাভাবিক। জ্বালানি তেলের এই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে জনমনে অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে দুই দিন ধরে। এরই মধ্যে বেড়েছে বাসের ভাড়া। লঞ্চ আর পণ্যবাহী ট্রাকের ভাড়াও বাড়বে। প্রভাব পড়তে শুরু করেছে পণ্যমূল্যে। সামনের দিনগুলোতে প্রায় সব নিত্যপণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। ব্যবসায়ী নেতাদের বক্তব্যে এমনই শঙ্কা জানা যাচ্ছে।

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সরব রাজনৈতিক দলগুলো। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী ও সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি দুই দিনের কর্মসূচিও দিয়েছে। সংসদের বাইরে বিরোধী দল বিএনপি ও বামধারার রাজনৈতিক দলগুলোও মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছে।

এমন অবস্থায় সতর্ক অবস্থানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে তাদের মধ্যে অস্বস্তির বিষয়টি জানা গেছে। তারা বলছেন, দেশ ও জনগণের ভালোর জন্যই আগেভাগে সতর্ক হয়ে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। দেশের আর্থিক অবস্থা যাতে শ্রীলঙ্কার মতো না হয় সেজন্য বিশ্ববাজারের সঙ্গে দাম সমন্বয় করা হয়েছে।

ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম কম হওয়ায় বর্ডার দিয়ে পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও আছে। তাই দেশের জনগণের মাঝে অসন্তোষ থাকলেও বাধ্য হয়েই সরকার তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আওয়ামী লীগ জনবান্ধব সরকার। তাই দলটি চায় তেলসহ দ্রব্যমূল্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালে থাকুক।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন ঢাকা টাইমসকে বলেন, জ্বালানি সংকট চলছে পুরো বিশ্বজুড়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, যুক্তরাজ্য, পাশ্ববর্তী দেশ ভারতসহ জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। তার সঙ্গে সমন্বয় করেই আমাদের দেশে ডিজেল, অকটেন, কেরোসিন তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। যে হারে ডলারের দাম বেড়ে চলছে এই এছাড়া বিকল্প কোনো উপায় ছিলো না। তবে দাম কমবে এবং আমাদের আশা প্রধানমন্ত্রী কিছু একটা করবেন। আমাদের দেশের অর্থনীতি যেন শ্রীলঙ্কার মতো না হয় সেজন্য আগাম সতর্কতার কারণে এটা করা হয়েছে। তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল দেশের পাশে, জনগণের পাশে না দাঁড়িয়ে বিভিন্ন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে এই বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সতর্ক আছে। তেলের দাম কমাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সরকারের কাছে প্রস্তাব দেবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের দল যেহেতু সরকারে আছে তাই নীতিনির্ধারকরা এই বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসবেন। নিশ্চয়ই তারা এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সরকার চাচ্ছে যতটুকু সম্ভব ভতুকি থেকে বের হয়ে আসতে। জনগণের টাকায় জনগণের ভতুকি দেওয়া হচ্ছে। তাই একদিক দিয়ে বাড়াতে হলে অন্যদিক দিয়ে কমাতে হবে। একটা বিষয় আরেকটার সঙ্গে জড়িত। এর আগেও দাম বেড়েছিল সেগুলোর দাম আবারও কমানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেমে গেলে বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশেও তেলের দাম কমানো হবে। আমরাও চাই দাম কম থাক। দেশের সার্বিক বিষয়ের ওপরে নির্ভর করে সরকার দেশ পরিচালনা করে। কিন্তু সেই বিষয়গুলো বিএনপি মানতে চায় না। বিএনপি-জামায়াত দেশের খবরাখবর রাখে না। বিএনপি যে কথাই বলুক না কেন তাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিলে কিন্তু তারা তেলের দাম কমাতে পারে না। যারা উৎপাদন করে আর যেসব দেশ সরবরাহ করে সেই দেশের তেলের দাম এক হবে না। তেলের দাম বাড়ায় আমাদেরও খারাপ লাগে। কিন্তু উপায় নেই, বিশ্বে জ্বালানির সংকট। এই বিষয়গুলো আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু চেষ্টা করা হচ্ছে বিষয়গুলোকে কাভার দেওয়ার।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বিশ্ববাজার ও আশপাশের দেশের সঙ্গে তেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। তা না হলে দেশ থেকে তেল পাচার হয়ে যায়। তারপর সরকার তো বলছে সবকিছু স্বাভাবিক হলে তেলের দাম কমানো হবে। মানুষের যে কষ্ট হচ্ছে এই উপলব্ধি কিন্তু আমরাও করি। আওয়ামী লীগ চায় দাম কমাতে। কিন্তু বিশ্ববাজারের কারণে তো অন্যান্য দেশেও দাম বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সততা ও দক্ষতার সঙ্গে সংকট মোকাবিলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দেশের মধ্যে কোনো সংকট দেখা দিলে বিএনপি তখন জনগণের মধ্যে হতাশা, ভয়ভীতি ছড়িয়ে দেয়। রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের উচিত জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে উৎসাহ দেওয়া। কিন্তু তা না করে অপপ্রচার মিথ্যাচার করছে।’

(ঢাকাটাইমস/০৮আগস্ট/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

উইমেন্স ওয়ার্ল্ড: স্পর্শকাতর ভিডিও পর্নোগ্রাফিতে গেছে কি না খুঁজছে পুলিশ

জাবির হলে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে জঙ্গলে ধর্ষণ, কোথায় আটকে আছে তদন্ত?

নাথান বমের স্ত্রী কোথায়

চালের বস্তায় জাত-দাম লিখতে গড়িমসি

গুলিস্তান আন্ডারপাসে অপরিকল্পিত পাতাল মার্কেট অতি অগ্নিঝুঁকিতে 

সিদ্ধেশ্বরীতে ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু: তিন মাস পেরিয়ে গেলেও অন্ধকারে পুলিশ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :