অনির্বাণ শ্রদ্ধার বাতিঘর বঙ্গমাতা

ড. কাজী এরতেজা হাসান
| আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২২, ১২:৩২ | প্রকাশিত : ০৮ আগস্ট ২০২২, ১২:০২

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক অমর কবিতার নাম। আর সেই মহাকাব্য যিনি রচনা করেছেন, তিনি হলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। বঙ্গবন্ধু নেতৃত্ব দিয়ে পাকিস্তানি দুঃশাসনের নাগপাশ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশকে উদ্ধার করেছেন, যা সম্ভব হয়েছিল মহীয়সী নারী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অনুপ্রেরণায়।

তিনি জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন একাকী কিংবা দলীয় নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দিয়ে। দলের অসময়েও দক্ষ নাবিকের আসনে আসীন ছিলেন শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।

এই মহীয়সী নারী ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ফুলের মতো গায়ের রং দেখে মা হোসনে আরা বেগম ডাকতেন রেণু বলে। সেই নামেই সবার কাছে পরিচিত হয়ে গেলেন।

মাত্র তিন বছর বয়সে বাবা শেখ জহুরুল হক মারা গেলে দাদা শেখ আবুল কাশেম চাচাতো ভাই শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে রেণুর বিয়ে দেন। পাঁচ বছর বয়সে মা মারা গেলে শাশুড়ি মা সায়েরা খাতুন রেণুর চোখের পানি মাটিতে পড়তে দেননি। গভীর মমতায় নিয়ে এলেন নিজের ঘরে।বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই ফজিলাতুন্নেছাই প্রেরণাদায়ী মহীয়সী নারী।

যেখানে নারীদের ঘরের বাইরে বের হওয়া নিষিদ্ধ ছিল, সেখানে পড়ালেখা তো কল্পনাই করা যেত না। তবুও তিনি দমে যাননি। সেই সময়ে ঘরে বসেই পড়ালেখা করেছেন। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ধরনের বিদ্যা ছাড়াই তিনি ছিলেন প্রতিভাসম্পন্ন, জ্ঞানী, বুদ্ধিদীপ্ত, দায়িত্ববান ও ধৈর্যশীল। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী লেখার পেছনেও মূল প্রেরণা ও উৎসাহ ছিল বেগম ফজিলাতুন্নেছার। বঙ্গবন্ধু তার আত্মজীবনীতে সেই অবদানের কথা স্মরণ করেছেন প্রথমেই।

জীবন সংগ্রামের সব কণ্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করেও তিনি পরিবার সামলেছেন বেশ গুছিয়ে। সবকিছুর পরও তিনিই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর জীবন ও রাজনীতির শ্রেষ্ঠ ছায়াসঙ্গী। স্বৈরশাসক আইয়ুব সরকারের সময় রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে বঙ্গবন্ধুকে কারাবরণ করতে হয়। এ সময়ে কাপড় সেলাই করে বাড়িভাড়া, সংসার চালানোর সবটাই তিনি করতেন। মাথা ঠান্ডা রেখে সবটাই তিনি সামলাতেন। সন্তানদের লেখাপড়া করানোর পাশাপাশি তাদের বাবার অভাবটা নিজের স্নেহ-ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতেন।

বায়ান্ন থেকে একাত্তর অবধি সংগ্রামে বেগম মুজিব বঙ্গবন্ধুর পেছনে ছায়ার মতো ছিলেন। চিরসংগ্রামী মুজিবকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আগলে রেখেছিলেন অপার মমতা ও ভালোবাসা দিয়ে, সংগ্রামের সাহস দিয়ে। পৃথিবীর মানচিত্রে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু। যারাই সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের সঙ্গী হয়েছিলেন, বেগম মুজিব ছিলেন তাদের সর্বাত্মক প্রেরণার উৎস।

বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে, নেতৃত্বের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের মধ্যে যখনই কোনো সংকটের কালো ছায়া ঘনীভূত হয়েছে, বেগম মুজিব সেই কালো ছায়া দূর করার জন্য পর্দার অন্তরালে থেকে দৃঢ়, কৌশলী ও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন।

মহীয়সী এই নারীর কথা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসের পরতে পরতে জড়িয়ে আছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের যে কালরাতে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে, সে সময়েও অর্থাৎ জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বেগম মুজিব ছিলেন ইতিহাসের কালজয়ী এক মহানায়কের অনুপ্রেরণাদায়িনী হিসেবে।

বাঙালি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতিটি ধাপে ধাপে বেগম মুজিবের অবদান বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী হিসেবে নয়, প্রধানমন্ত্রীর মাতা হিসেবে নয়; একজন নীরব দক্ষ সংগঠক হিসেবে, যিনি ধূপের মতো নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন এবং বঙ্গবন্ধুকে হিমালয়সম আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।

বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব একজন মহীয়সী নারী। ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট মধুমতি বিধৌত গোপালগঞ্জ জেলার ছায়াঢাকা, পাখি ডাকা, শান্ত-স্নিগ্ধ গ্রাম টুঙ্গিপাড়ার শেখ জহুরুল হক এবং হোসনে আরা বেগমের কোল আলো করে জন্ম নিলেন এক ফুটফুটে কন্যা সন্তান। বাবা-মা আদর করে কন্যার নাম রাখলেন রেণু। বাবা-মার আদর খুব বেশিদিন কপালে জোটেনি জনম দুঃখী এই নারীর। মাত্র তিন বছর বয়সে পিতা এবং পাঁচ বছর বয়সে মাতা হারান তিনি। এই মহীয়সী নারী বাংলার অবিসংবাদিত নেতা, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি এক প্রেরণাদায়িনী নারী। বিয়ের পর বঙ্গবন্ধুর মাতা সায়েরা খাতুন তাঁকে নিজের সন্তানের মতোই মাতৃস্নেহে লালন-পালন করেন।

শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব প্রথমে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে ও পরবর্তীতে সামাজিক কারণে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়াশোনা করেন। তাঁর স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত প্রখর ছিল। তিনি যেকোনো পরিস্থিতি অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা, অসীম ধৈর্য ও সাহস নিয়ে মোকাবেলা করতেন। রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন সময়ে স্বামীর কারাবরণকালীন তিনি হিমালয়ের মতো স্থির ও অবিচল থেকে স্বামীর কারামুক্তির পাশাপাশি তাঁর অনুপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সকলকে মূল্যবান পরামর্শ ও সহযোগিতা করতেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানে কারাবন্দি স্বামীর জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে গভীর অনিশ্চয়তা ও শঙ্কার মাঝেও তিনি অসীম ধৈর্য, সাহস ও বিচক্ষণতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন। দেশ ও জাতির জন্য তাঁর অপরিসীম ত্যাগই তাঁকে বঙ্গমাতায় অভিষিক্ত করেছে। ছাত্ররাজনীতি করতে গিয়ে যখনই বঙ্গবন্ধুর অতিরিক্ত টাকার দরকার হতো তখন পিতৃসম্পত্তি থেকে অর্জিত অর্থ বিনা দ্বিধায় পাঠিয়ে দিতেন। বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তেও সংসার ও রাজনীতির কর্মময় জীবনের বর্ণনায় বারবার স্ত্রী বেগম মুজিবের নাম ওঠে এসেছে পরম মমতায়। ১৯৪৬ সালের কথা। বঙ্গবন্ধু তখন কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে পড়ছেন। ছুটিতে বাড়ি এসেছেন। দেখতে দেখতে চলে গেল কটা দিন। ফিরে যাবার সময় হয়ে গেছে। আসন্ন বিচ্ছেদের সেই চিরন্তন অনুভূতির কথাই বলেছেন বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে, ‘আব্বা, মা, ভাই-বোনদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রেণুর ঘরে এলাম বিদায় নিতে। দেখি কিছু টাকা হাতে করে দাঁড়িয়ে আছে। ‘অমঙ্গল অশ্রুজল’ বোধহয় অনেক কষ্টে বন্ধ করে রেখেছে। বলল, ‘একবার কলকাতা গেলে তো আসতে চাও না। এবার কলেজ ছুটি হলেই বাড়ি চলে এসো।’

বঙ্গবন্ধু কারারুদ্ধ হলে বেগম মুজিবকে গৃহ-সামগ্রী বিক্রয় করতে হয়েছে। তিনি অনেক অলংকার বিক্রয় করেছেন, কিন্তু বাদ্যযন্ত্র আর গানের রেকর্ডগুলো কখনো হাতছাড়া করেননি। বাঙালির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পারিবারিক-রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শেখ ফজিলাতুন্নেছা আড়াল থেকে সর্বান্তকরণে সহযোগিতা করেছেন।

আন্দোলনের সময়ও প্রতিটি ঘটনা জেলখানায় সাক্ষাৎকারের সময় বঙ্গবন্ধুকে জানাতেন। কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশ নিয়ে আসতেন, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে সে নির্দেশ জানাতেন। অন্যদিকে কারাগারে সাক্ষাৎ করে বঙ্গবন্ধুর মনোবল দৃঢ় রাখতেন। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে সংসার, সন্তান এবং বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়িকে অবলম্বন করে ওই বিপদসঙ্কুল দিনগুলোতে শেখ ফজিলাতুন্নেছা কেমন করে কাটিয়েছেন ভাবলে আজও বিস্মিত হতে হয়। সন্তানদের তিনি যেমন ভালোবেসেছেন, তেমনি শাসনও করেছেন। পিতা-মাতা উভয়েরই কর্তব্য তিনি শেষ দিন পর্যন্ত পালন করে গেছেন। জীবনে কোনো বৈষয়িক মোহ তাঁর ছিল না।

এদিকে ঘরেও আসবাবপত্রের বাহুল্য ছিল না। যতটুকু দরকার সেটুকু আসবাবপত্র ছিল। বেগম মুজিব ছিলেন কোমলে কঠোরে মিশ্রিত এক দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সাহসী নারী। মাতৃছাপটাই ছিল সে চরিত্রে বেশি। এই মহীয়সী নারীর স্নেহ, মায়া-মমতা, দরদ আপ্যায়নের কথা আজও স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকরা অকৃত্রিম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। স্বামীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি সন্তানদের গড়ে তোলেন। অত্যন্ত দানশীল ছিলেন তিনি। তাঁর কাছে সহযোগিতা চেয়ে কেউ কখনো খালি হাতে ফিরে যায়নি। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা ও ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য তিনি সহযোগিতা করেছেন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ও ২৩ মার্চের পতাকা উত্তোলনে বঙ্গবন্ধুর প্রধান উদ্দীপক ও পরামর্শক হিসেবে বিবেচনা করা যায় বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছাকে। ২৫ মার্চ ১৯৭১-এ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের চোখের সামনে থেকে স্বামীকে মিলিটারিরা গ্রেফতার করে নিয়ে যায়, বড় ছেলে শেখ কামাল মুক্তিসংগ্রামে চলে যান, মেজো ছেলেও বন্দিদশা থেকে পালিয়ে যুদ্ধে চলে যান। স্বামীর বন্দিদশা এবং পাকিস্তানের কারাগারে তাঁকে হত্যার আশঙ্কা সর্বোপরি নিজেদের বন্দিত্ব ও নির্যাতন সত্ত্বেও তিনি মুহূর্তের জন্যও ভেঙে পড়েননি, মাথা নত করেননি। অসীম মনোবল, সাহস ও ধৈর্য নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয় এবং পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর ১৯৭১-এর ১৭ ডিসেম্বর বন্দিদশার অবসান ঘটলেও বিজয়ের আনন্দ অনুভব করার সুযোগ তাঁর হয়নি। অপেক্ষা করতে হয়েছে স্বামীর জন্য এবং দেশবাসীকেও ধৈর্যধারণের জন্য পরামর্শ দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করার পরেই অবসান ঘটে বেগম ফজিলাতুন্নেছার দীর্ঘ প্রতীক্ষার। এরপর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজেও বঙ্গবন্ধুর পাশে দাঁড়ান তিনি। অনেক বীরাঙ্গনাকে বিয়ে দিয়ে সামাজিকভাবে মর্যাদাসম্পন্ন জীবনদান করেন।

শেখ ফজিলাতুন্নেছার মতো ধীরস্থির, বুদ্ধিদীপ্ত, দূরদর্শী, স্বামী অন্তপ্রাণ মহিলার সাহসী, বলিষ্ঠ, নির্লোভ ও নিষ্ঠাবান ইতিবাচক ভূমিকাই শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হতে সহায়তা করেছে। জনগণের কল্যাণে সারাজীবন তিনি অকাতরে দুঃখবরণ এবং সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে জাতির পিতার হত্যাকারীদের হাতে বেগম মুজিব নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়ে শাহাদাতবরণ করেন। ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ডের সময়ও বঙ্গবন্ধুর আজীবন সুখ-দুঃখের সাথী মৃত্যুকালেও তাঁর সঙ্গী হয়েই রইলেন। ৮ আগস্ট বঙ্গমাতার জন্মদিনে এই মহীয়সী নারীর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে,বঙ্গবন্ধু ও বাঙালির আজীবন সুখ-দুঃখের সঙ্গী এই মহীয়সী নারীর প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক ভোরের পাতা, দ্য পিপলস টাইম

সহ-সভাপতি, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ

সদস্য, কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য উপকমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

পরিচালক, এফবিসিসিআই

প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ইরান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :