স্বামী-স্ত্রী দুজনের আয়ের পরও মাস শেষে ‘দেনা’

প্রকাশ | ০৮ আগস্ট ২০২২, ১৮:২৩

আকিবুর রহমান, ঢাকাটাইমস

চার সদস্যের পরিবার ফরহাদ হোসেনের। তিনি চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। সাংসারিক ব্যয়ের ঘাটতি মেটাতে বাসায় সেলাই কাজ করেন ফরহাদের স্ত্রী। তবে বেড়ে চলা দ্রব্যমূল্যের বাজারে এই দম্পতির আয়েও নির্বাহ হয় না সংসারের খরচ। উল্টো প্রতি মাসেই তাদের থাকছে দেনা।

সোমবার সকালে মোহাম্মদপুরের আদাবর এলাকায় ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয়। বলেন, ‘ভাড়া বাসায় থাকি। দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে পরিবারে আমরা চারজন। আমার একার আয়ে সংসার চলে না তার। সাপোর্ট দিতে আমার স্ত্রী বাসায় কাপড় সেলাইয়ের কাজ করেন। দুজনে মিলে মাসের আয় ৩০ হাজার। এরপরও মাস শেষে দেনা হয়।’

ফরহাদ জানান, বাজারে সব পণ্যের দামই চড়া। আগে রিকশায় করে কর্মস্থলে যেতেন। এখন যান হেঁটে। যাতায়াত খরচ বাঁচিয়ে ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা উপকরণ কেনেন।

মাসিক ব্যয়ের ফিরিস্তি দেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এই কর্মজীবী। বলেন, ‘বাসা ভাড়া ১২ হাজার। বিদ্যুৎ বিল ও গ্যাস বিল মিলে ২২০০ থেকে ২৪০০ টাকা। বাজার খরচ কমপক্ষে ১২ হাজার টাকা। দুই সন্তানের স্কুলের বেতন আর বইখাতা মিলে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। এছাড়া অন্যান্য আরো খরচ তো আছেই।’

রোকেয়া বেগম নিম্ন আয়ের মানুষ। পাঁচ সদস্যের কর্ত্রী মধ্যবয়সী এই নারী। রাজধানীর হাতিরপুল বাজারে তার সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। বলেন, ‘কি কিনবো বাবা!’

‘কোনো কিছুর দামই তো কম নেই। ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি দেখি না। দিনে বাজারে আসা ঠিক হয় নি! রাতে সবজির দাম কম থাকে। ভাবছি এখন বাসায় চলে যাই, রাতেই আসবো!’

বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতেও। ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা চলছে জ্বালানি তেলের মূল্যে। সমন্বয় করতে সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে দেশে। এর প্রভাব পড়ছে জনজীবনে। ফলে অনেককেই নতুন করে সাজাতে হচ্ছে মাসিক খরচের হিসাব।

বেড়েছে যাতায়াত ভাড়া

তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় যাতায়াত ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বাসে উঠলেই সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা। একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মজীবী রেজা আহমেদকে প্রতিদিনই উত্তরা থেকে মগবাজার যাতায়াত করতে হয়। আগে যেখানে তিনি আসা-যাওয়া করতেন ৫০ টাকায়। এখন সেখানে তাকে গুনতে হচ্ছে ৭০ টাকা।

ঢাকা টাইমসকে রেজা আহমেদ বলেন, ‘আমরা নিরুপায়। অফিসে তো যেতে হবেই। মানিয়ে নিয়ে কোনো ভাবে চালিয়ে নিচ্ছি।’

দাম বেড়েছে শিক্ষা উপকরণসহ টুকিটাকির

১২০ পৃষ্ঠার খাতার দাম ৫ টাকা বেড়েছে। ৩০ টাকার নিচে আর কোনো খাতা মিলছে না। ১০ টাকার পেনসিল এখন ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইরেজার রাবার ও শার্পনারের দাম ২ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। ১০ টাকার নিচে মানের রাবার নেই।

মিলবে না। তবে কলমের দাম সর্বনিম্ন ৫ টাকা থেকে শুরু।

সাবান, শ্যাম্পু, টুথপেস্ট, ব্রাশ, রেজর, ফোম, খাতা-কলম-পেনসিল, রাবার, শার্পনার, ডিটারজেন্ট পাউডার এসব পণ্য আর সুলভ নেই। এছাড়া পুরুষের শেভিং ক্রিম, রেজরসহ দৈনিক প্রয়োজনের তালিকায় থাকা প্রসাধন পণ্যও কিনতে হচ্ছে আগের চেয়ে বেশি দামে।

এমন বাস্তবতার মধ্যে সন্তানদের হাসিমুখ দেখতে প্রাণান্তকর চেষ্টা রাসেল মিয়ার। তিনি মোটরবাইকে রাইড শেয়ার করে সংসার চালান। ইস্কাটন এলাকায় ঢাকা টাইমসকে রাসেল মিয়া বলেন, ‘তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পর কম ভাড়ায় রাইড দেয়া যাচ্ছে না। আবার বাড়তি ভাড়ায় যাত্রীরা যেতে চান না।’

‘দুই ছেলে-মেয়ে আর বউ নিয়ে খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়ায় থাকি। এক বছর যাবৎ সন্তানদের স্কুলের বেতন দিতে পারি না। সব মিলিয়ে বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় আছি। তবুও চেষ্টা করে যাচ্ছি তারা হাসিমুখে থাকে’—যোগ করেন চল্লিশোর্ধ রাসেল।

(ঢাকাটাইমস/০৮আগস্ট/ডিএম)