ইচ্ছে মতো ভাড়া আদায় গণপরিবহনে

প্রকাশ | ০৯ আগস্ট ২০২২, ১০:২৮ | আপডেট: ০৯ আগস্ট ২০২২, ১০:৩১

মোয়াজ্জেম হোসেন, ঢাকাটাইমস

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরপরই বেড়েছে গণপরিহনের ভাড়া। তবে ভাড়া বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপনের পরও গতকাল পর্যন্ত পরিবহনে তালিকা দেয়া হয়নি। ফলে যাত্রীদের কাছ থেকে ‘মর্জিমাফিক’ ভাড়া আদায়ের অভিযোগ এসেছে।

শুধু ঢাকা থেকে নয় আন্তঃজেলায় চলাচল করা বাসগুলোতেও বেশী ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। দূরপাল্লার বাসেও একই অবস্থা। যদিও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তেলের দাম বাড়ায় বাসের ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে। আর সেটি যাত্রীরা ‘বুঝতে চান না। আবার যাত্রীও কম।
গতকাল সকালে সড়কে নেমেই পরিবহন সংকটে পড়েন অফিসগামীরা। সরেজমিনে রাজধানীর নীলক্ষেত, সাইন্সল্যাব, কলাবাগান, কাওরানবাজার, বাংলামটর, শাহবাগ, ফার্মগেট, আসাদগেট, শ্যামলী, নাবিস্কো এলাকায় অফিসগামীদের ভিড় ছিলো লক্ষ্যণীয়। যানবাহন পেতে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়।
আর যে কয়েকটি বাস চলাচল করেছে যাত্রীর তুলনায় তা ছিল অপ্রতুল। ফলে সবগুলো বাসই ছিল যাত্রীতে ঠাসা ছিলো। এর মধ্যে আবার বাকবিতণ্ডা লেগে ছিল ভাড়া নিয়ে।
শ্যামলী থেকে বাংলামটর পর্যন্ত প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেন কৌশিক আহমেদ। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমার অফিস বাংলামটর আর বাসা শ্যামলীতে। আমি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করি। প্রতিদিন শ্যমলী থেকে ওয়েলকাম পরিবহনে বাংলামটর এসে ১৫ টাকা ভাড়া দিতাম। আজ (সোমবার) সেটা ২৫ টাকা নিয়েছে। পথিমধ্যে তাদের আবার ওয়েবিল আছে। জানতাম এই ওয়েবিল নাকি অবৈধ। কিন্তু কখনো তো ব্যবস্থা নিতে দেখিনি।’

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বাসভাড়া বাড়ানোর দুদিন পর সোমবার বিভিন্ন রুটের ভাড়ার নির্ধারণ করে চার্ট প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। তবে রাজধানীর অভ্যন্তরীণ রুটের ভাড়া এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। সেই সুযোগে গত দুদিন ধরে নগরী এবং দূরপাল্লার বাসে চলছে ভাড়া নৈরাজ্য। বাসভাড়ার বিষয়ে ৭ আগস্ট প্রজ্ঞাপন জারি হলেও এ তালিকা বিআরটিএ সোমবার তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে।

মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে ময়মনসিংহ যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন মো. আহসান। তিনি বলেন, ‘আগে ২৬০ টাকায় যেতাম, এখন হঠ্যাৎ করে ৩২০ টাকা হয়ে গেছে। আমাদের মত নিয়মিত যাত্রীদের জন্য এটা চাপ হয়ে গেল।’
অভিযোগ পাওয়া গেছে, সরকার নির্ধারিত ভাড়া মানছে না পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। নানা অজুহাতে বেশি ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। যাত্রীরা বলছেন, বেশিরভাগ বাসেই টাঙানো হয়নি সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা। হয়রানি থেকে বাঁচতে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিচ্ছে তারা।

বাড়তি ভাড়া নেওয়ায় রাজধানীর পোস্তগোলা-দিয়াবাড়ী রুটে চলাচলকারী রাইদা পরিবহনের একটি বাসকে ১২ হাজার টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এই অভিযানের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খোশনুর রুবাইয়াৎ বলেন, ‘ভাড়া তদারকিকালে রাইদা পরিবহনের একটি বাস থামানো হলে যাত্রীরা বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ তোলেন। দেখা যায় বাসে নতুন ভাড়ার তালিকাও প্রদর্শিত হয়নি। পরে বাসটিকে ১২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।’

এদিকে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করা বাসের ক্ষেত্রেও বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ যাত্রীদের। সরকার নির্ধারিত ভাড়া মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। সায়দাবাদ থেকে কুমিল্লা যাওয়ার জন্য এসেছেন মহসিন আলম।
ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘আগে কুমিল্লা যেতাম ২০০-২৫০ টাকা দিয়ে। আজকে যাওয়ার জন্য আসলাম কয়েকটি পরিবহন কোম্পানি ভাড়া চাইলো ৪০০ টাকা। সরকার কত টাকা নির্ধারন করেছে সেটা জানি না। কিন্তু হঠাৎ করে এত টাকা বেড়ে যাওয়া মেনে নেওয়া যায় না। এখন আরও কয়েকটি বাস দেখবো, দেখি কেউ কম নেয় কিনা। যে বাস কম নিবে সে বাসে করেই যাব। আর কম না নিলেও কিছু করার নাই। যেতেতো হবে।’

এদিকে চট্টগ্রামেও গণপরিবহণে ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করা বাসগুলোর ক্ষেত্রেও একই অভিযোগ।
বরিশাল থেকেও দূরপাল্লার যানবাহন গুলোতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। বরিশাল থেকে কুয়াকাটা যাওয়া যাত্রী হাসেম শিকদার বলেন, ‘কিছুদিন আগেও গিয়েছিলাম দুইশ পঞ্চাশ টাকায়। সোমবার কুয়াকাটার টিকিট কাটতে গেলে জানতে পারি দুইশত নব্বই টাকা নতুন ভাড়া।

বরিশাল থেকে ঝালকাঠি প্রতিদিন যাতায়াত করেন চাকুরীজীবী হারুন হাওলাদার। তিনি বলেন, ত্রিশ টাকার ভাড়া তেলের দাম বাড়ায় এখন থেকে চল্লিশ টাকা করে দিতে হচ্ছে। খরচ বাড়লেও বেতন তো বাড়েনি। যা বেতন পাই মাসের শেষে টেনেটুনে চলতে হয় তারপর আবার বাড়তি ভাড়ার খরচ।

একই চিত্র বরিশাল রুটের সকল যানবাহনে। তেলের দাম বৃদ্ধি হওয়ার পর থেকেই বাস লঞ্চ থ্রীহুইলার সহ সকল যানবাহনে বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে যাত্রীদের।
বরিশাল বাস মালিক সমিতির একাধিক নেতৃবৃন্দ জানান, তেলের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় বাধ্য হয়েই ভাড়া বাড়িয়েছেন তারা। এতেকরে যাত্রীরা অসন্তোষ্টু থাকলেও তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পরেও পরিবহণে যাত্রী সংকট নেই।

এদিকে সিলেট থেকে মৌলভীবাজার, শায়েস্তাগঞ্জ এবং কুমিল্লাগামী বাসগুলোতে বেশী ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেছে যাত্রীরা। এসব রুটে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা ভাড়া বেশী নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। এছাড়া চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করা সব বাসেই অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

দিনাজপুর থেকে রংপুরে চলাচর করা বাসগুলোর আগে ভাড়া ছিলো ১২০-১৫০ টাকার মধ্যে। কিন্তু এখন সেখানে নেওয়া হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা। সুফিয়ান নামে এক যাত্রী বলেন, হঠ্যাৎ করেই বাসস্ট্যান্ডে এস দেখি বাস ভাড়া বেশী। কি আর করা। যেতেতো হবে।

শুক্রবার রাতে হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেয় সরকার। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রলের মূল্য ভোক্তা পর্যায়ে পুনর্র্নিধারণ করা হয়েছে। রাত ১২টার পর থেকে ডিপোর ৪০ কিলোমিটারের ভেতর ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা মূল্য লিটারপ্রতি ডিজেল ও কেরোসিন ১১৪ টাকা, লিটারপ্রতি অকটেন ১৩৫ টাকা ও পেট্রল ১৩০ টাকা হবে। শুক্রবার রাত ১২টা থেকে এই দাম কার্যকর হয়েছে।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে নতুন বাসভাড়া ঘোষণা করা হয়। নতুন ভাড়া অনুযায়ী আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লা রুটে বাস ও মিনিবাসে প্রতি কিলোমিটার ভাড়া ৪০ পয়সা বেড়ে দুই টাকা ২০ পয়সা হয়েছে, যা এতদিন ছিল এক টাকা ৮০ পয়সা। অর্থাৎ দূরপাল্লার রুটে বাসভাড়া বেড়েছে ২২ শতাংশ।

এছাড়া ঢাকাসহ সব মহানগরে চলাচলকারী বাসগুলোতে ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ৩৫ পয়সা বেড়ে দুই টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে, যা এতদিন ছিল দুই টাকা ১৫ পয়সা। অর্থাৎ মহানগরে বাসভাড়া বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। সোমবার বিআরটিএ বিভিন্ন রুটের ভাড়া নির্ধারণ করে চার্ট প্রকাশ করেছে।

(ঢাকাটাইমস/০৮আগস্ট/ডিএম)