হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি

কত টাকা ফেরত দিতে হবে ‘বালু খেকো’ সেলিম খানকে? জানা যাবে কি সহসাই?

সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২২, ১৮:৫০ | প্রকাশিত : ০৯ আগস্ট ২০২২, ১৯:৪২

চাঁদপুরের মেঘনা ও পদ্মা নদী থেকে পরিবেশ বিনষ্ট করে গত আট বছর ধরে নির্বিচারে বালু তুলে সমালোচিত ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের কাছ থেকে বালু উত্তোলন বাবদ রাজস্ব হিসেবে পাওনা টাকা নির্ধারণ করে তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসককে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলেছেন আদালত।

সোমবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ নির্দেশনা দিয়ে এই সংক্রান্ত রায় প্রকাশ করেন। রায়ের পরই প্রশ্ন উঠেছে কত টাকা রাজস্ব ফাঁিক দিয়েছেন চাঁদপুরের ১০ নম্বর লক্ষ¥ীপুর মডেল ইউনিয়নের সেলিম খান? আর সরকারকে কত টাকা ফেরত দিতে হবে তাকে?

চাঁদপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোছাম্মৎ রাশেদা আক্তার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘মহামান্য হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন। আমরা অবশ্যই সেই রায় প্রতিপালন করব। শিগগিরই হয়তো কাজ শুরু করব। তার কত টাকা দেনা, সেটা নির্ধারণ হলে কীভাবে টাকা আদায় করা যায় সেই প্রক্রিয়া শুরু হবে।’

তবে কী পরিমাণ রাজস্ব আদায় হবে বা করতে পারবেন সেটা হিসাব না করে বলা যাচ্ছে না বলে জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)। টাকার পরিমাণ যে অনেক বেশি হবে সেই আভাসও দিয়েছেন তিনি।

জানা যায়, ২০০৮ সালে প্রতি ঘনফুট বালু উত্তোলনের জন্য জেলা প্রশাসকের রাজস্ব তহবিলে ২৫ পয়সা করে রাজস্ব দিতে হতো। আর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও আয়কর হিসেবে ৩ শতাংশসহ মোট ১৮ শতাংশ টাকা রাজস্ব আসত। এছাড়া প্রতি ঘনফুট বালু উত্তোলনের জন্য বিআইডব্লিউটিএকে দেওয়া হয়েছে ২৫ পয়সা। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বালু উত্তোলন বাবদ একটি কানাকড়িও রাজস্ব দেয়নি সেলিম খান।

২০১৫ সাল থেকে ছোট-বড় দুই শতাধিক ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করেছেন সেলিম খান। তবে বালু উত্তোলনের জন্য সেসময় তার কোনো অনুমতি ছিল না। কিন্তু তাতে বালু উত্তোলনে তার কোনো সমস্যা হয়নি। সরকারি দলের বিভিন্ন মন্ত্রী ও নেতার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নদীর ৪৩ কিলোমিটারে একাই বালু উত্তোলন করেছেন সেলিম খান।

সেলিম খান যেসব ড্রেজারে বালু তুলেছেন সেগুলো দৈনিক ২০ থেকে ৪০ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করতে পারে। গড়ে দৈনিক ত্রিশ লাখ ঘনফুট হলেও প্রতি বছরে ১০৯ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করেন সেলিম খান। আর সাত বছরে ৭৬৬ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট। প্রতি ঘনফুট ২৫ পয়সা হিসেবে হলে জেলা প্রশাসন রাজস্ব হিসেবে তার কাছে পাবে ১৯১ কোটি টাকা।

এ ছাড়া দুদকের একটি অনুসন্ধান থেকে জানা যায়, গত সাত বছরে সেলিম খান যে বালু বিক্রি করেছেন তা থেকে আয় করেছেন দুই হাজার কোটি টাকার বেশি। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে দুদকে জমা হওয়া কিছু অনুসন্ধান বলছে, বালু উত্তোলন করা আয় থেকে কোনো ধরনের রাজস্ব পরিশোধ করেননি সেলিম খান।

অন্যদিকে চাঁদপুরে জেলা প্রশাসকের একটি সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যমতে, গত আট বছর ধরে সেলিম খান গড়ে দৈনিক ৪০ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করেন। এক ঘনফুট বালু তিন টাকা দরে হলে প্রতিদিন তার বালু বিক্রি করে আয় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। আর মাসে ৩৬ কোটি টাকা, আট বছরে যা প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

এই আয়ের এক কানাকড়িও তিনি ভ্যাট কিংবা আয়কর দেননি। যদি এই টাকা থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও তিন শতাংশ আয়কর ধরা হয়, সরকারের কাছে তার দেনা দাঁড়াবে ৬৩০ কোটি টাকা। প্রতি ঘনফুট বালু ১৫ পয়সা হিসেবে বিআইডব্লিউটিএ তার কাছে পাবে ১১৪ কোটি টাকা।

হিসাব বলছে, সেলিম খানের কাছে গত আট বছরে ভ্যাট আর আয়কর বাবদ সরকার পাবে ৬৩০ কোটি টাকা, জেলা প্রশাসক বালুর মূল্য হিসেবে পাবে ১৯১ কোটি টাকা ও বিআইডব্লিউটিএ পাবে ১১৪ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৯৩৫ কোটি টাকা।

আদালতের রায় থেকে জানা যায়, মেঘনা নদীতে (চাঁদপুর সদর ও হাইমচরে অবস্থিত ২১টি মৌজা এলাকায়) জনস্বার্থে নিজ খরচে হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ করতে নির্দেশনা চেয়ে ২০১৫ সালে রিট করেছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সেলিম খান। ওই বছর থেকেই তিনি বালু উত্তোলন শুরু করেন। যদিও ওই রিটে ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল হাইকোর্ট রায় দেন।

রায়ে চাঁদপুরের ২১টি মৌজায় অবস্থিত মেঘনার ডুবোচর থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দিতে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়। চলতি বছরের ১৫ মার্চ হাইকোর্টের দেওয়া ওই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে।

গত ১ আগস্ট ৩৪ কোটি ৫৩ লাখ ৮১ হাজার ১১৯ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সেলিম খানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

(ঢাকাটাইমস/৯আগস্ট/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :