শোকের মাসে চিটাগাং ক্লাবের ধুন্ধুমার কনসার্ট, নাদের খান ও একটি অনুগল্প

রিয়াজ হায়দার চৌধুরী
| আপডেট : ০৯ আগস্ট ২০২২, ২১:৪৪ | প্রকাশিত : ০৯ আগস্ট ২০২২, ২১:৪১

পবিত্র কোরআন ও হাদিসে সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও হজ্বের মাসে কিংবা মহরমের আগে-পরে বিয়ের অনুষ্ঠানও নামাতে চান না অনেক মুসলিম ধর্মপ্রাণ মুরুব্বী। সনাতনী ধর্মেও অনেকেই এ ধরনের দিবস কেন্দ্রিক আদব-কায়দা মানেন।‌ বাংলাদেশে এখন এর ওপর চলছে জাতীয় শোকের মাস। তার উপর আছে অস্হির বিশ্বের প্রভাব। ভবিষ্যত নিয়ে মধ্যবিত্তের আছে তীব্র অশনি শংকা।

আর এই সময়েই 'চিটাগাং ক্লাব' ধুন্ধুমার কনসার্টের আয়োজন করল ! সমালোচনার মুখে জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় সেই আয়োজন বাতিল ( মতান্তরে স্হগিত ) করা হয়েছে । কিন্তু এর পরেও প্রশ্ন থেকে যায় আয়োজকদের বিবেক রুচিবোধ নিয়ে।

আগামী ১১ আগস্ট এই সঙ্গীত আয়োজনটি হওয়ার কথা ছিল। আয়োজক, ক্লাব ‌ চেয়ারম্যান নাদের খানকে নিয়ে খারাপ ধারণা ছিল না কখনোই ।‌ তবে তার রাজনৈতিক সাংগঠনিক অতীত, গণচেতনার সাথে তার সংহতি সম্পর্কে মোটেও ধারণা ছিল না ।‌ এবার নতুন করে জানলাম । অনুষন্ধিৎস্যু মন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে অনেক কিছুই বের করে নিয়ে আসলো, যা হয়তো পরবর্তীতে সবিস্তারে তুলে ধরবো। ‌এক্ষুনি সেসব নয়। আলোচিত কনসার্ট বিষয়েই আজ লিখছি। আমাদের অনুসন্ধিৎসু সহযোদ্ধা সাংবাদিক সালাউদ্দিন সায়েম শোকের মাসের এই আয়োজন প্রসঙ্গে নাদের খানকে প্রশ্ন করেছিলেন। জবাবে তিনি বললেন, "শোকের মাসে যে তেলের দাম বেড়েছে…একমাস পর বাড়ালে ভালো হতো না?'

আশ্চর্য ! এটাই বাংলাদেশের বাস্তবতা ।‌ স্বাধীন বাংলাদেশে ব্যবসা করে ধনসম্পদের মালিক হয়ে, রাষ্ট্রের ভুমি বরাদ্দ নিয়ে, বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দাতা ও সমাজের ত্রাতা হয়ে ওঠা খান সাহেবরা এখনো এভাবে বলেন ! !

এবার আসি ঘটনার আর একটু আড়ালের অন্য প্রবাহে। চিটাগাং ক্লাবের সঙ্গীতায়োজনে আসার কথা ছিল বিদেশি শিল্পীর। ডলারে পেমেন্ট দেওয়ার কথা ছিল। শিল্পী তিনি কোন দেশ থেকে আসবেন, কী গাইবেন বা নাচবেন, তা মুল কথা নয়, তবে শোকের সঙ্গীত যে গাইতেন না, তা আমন্ত্রণ পত্র দেখেই বুঝা গেল।

প্রশ্নটা হল, ডলারে পেমেন্ট দেওয়া শিল্পীর জন্য এমন একটি অনুষ্ঠানের অনুমতি প্রক্রিয়া কতটা প্রশ্নাতীত ? নিরাপত্তা জনিত কারণে পুলিশের অনুমতি কি নেয়া হয়েছিল ? অনুমতি ছিল কি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ? নাকি নিয়ম নীতি সব শিল্পকলা একাডেমী , সিআরবি, ডিসি হিল ও টিআইসি'র সাংস্কৃতিক আয়োজকদের জন্য ?

একটু আগেই কথা বললাম চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমানের সাথে। তিনি সাফ জানালেন, 'এ ধরনের আয়োজনে দুটি পর্যায় থেকে অনুমতি প্রয়োজন।‌ প্রথমত সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে অনাপত্তি পত্র নিতে হয়। অন্যটি শহর এলাকার অনুষ্ঠান হলে মহানগর পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের ( সিটি এসবি) অনুমতি। "

জেলা প্রশাসক এও জানালেন, "সিটি এসবির ডিসির সূত্রে জেনেছি, এ ব্যাপারে কোন অনুমতি নেওয়া হয়নি। "

এদিকে, আয়োজক ক্লাবের একাংশের সুত্র এরই মধ্যে যদিও গণমাধ্যমে দাবি করছে, অনুমতি মেলেনি, তাহলে বিনা অনুমতিতে এমন শিল্পীর অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পত্রটি ছাপানো হলো কিভাবে !?

শোকের মাসের কনসার্ট আয়োজন নিয়ে রাজনৈতিক কারণে এদেশের কোন পক্ষ আয়োজক খান সাহেবদের পাশে দাঁড়ালেও এমন আয়োজনের দুঃসাহসকারী এবং রাস্ট্রের স্থিতিশীলতা নস্যাতে উস্কানি মূলক বক্তব্য দানকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তো ওঠতেই পারে।‌ সমাজের এলিটদের ক্লাব 'চিটাগাং ক্লাবের' বন্ধুরা আশা করি মনো কষ্ট নেবেন না।‌

শোকের নহরে থাকা দেশে দেশের সংস্কৃতি চর্চার গতি বিধি ও নিয়মভিন্ন এমন গানা বাজানার আয়োজন প্রসঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম ক্লাবটির চেয়ারম্যান নাদের খানের সাথে । কিন্তু দুর্ভাগ্য, দফায় দফায়ও মুঠোফোনে সংযোগ পাওয়া যায় নি।

কী আর করা ! শেষ করতে চাই একটি অনুগল্প দিয়ে। পরবর্তীতে এই অনুগল্পের সুত্র ধরে অবশ্য ধারাবাহিক উপন্যাস লেখারও ইচ্ছে আছে। আমার পাঠক বন্ধুরা নিশ্চিয়ই আসন্ন লেখা গুলোতে চোখ রাখবেন। ‌

৭১ পরবর্তীতেই দুষ্টু প্রকৃতির এক যুবককে মানুষের সাথে অসৎ আচরণের জন্য ঘর থেকেই বের করে দেয়া হয়। ঘরে ভাষা সংগ্রামী ভাই থাকলেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে কোন সংযোগ ছিল না তার। বঙ্গবন্ধু সরকারের সময়ে এলাকার মুক্তিযোদ্ধা চেয়ারম্যানকে দেয়া বিশেষ সুবিধার সুফল নিয়ে সেই মুক্তিযোদ্ধাকেই বঞ্চিত করা যুবকটি সেসময়ে ঠিক সফল হতে না পারলেও পরবর্তী জিয়া-এরশাদের শাসনামলে হয়ে ওঠেন উদ্যোক্তা থেকে শিল্পপতি। ব্যাংক, ইংলিশ স্কুল, চা বাগান ও কোম্পানি মালিক, ক্লাব প্রধান সহ অঢেল বিত্ত বৈভব হওয়া সেই যুবকটি পূর্ণ বার্ধক্যে এসেও সরকারের খাস ভূমি দখল এবং নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থে রাবারডেম দিয়ে হালদা নদীর তীরবর্তী মানুষদের ব্যাপক ক্ষতিতে অসাধারণ অবদান রাখছেন !

কিন্তু হায়রে দেশ ! এমন বিত্তবানরাই আজকাল যাদুবলে শিক্ষার আলো ছড়ান ! সমঝদারদের রবীন্দ্র আয়োজনে প্রধান অতিথি হন ! তারাই এখন বিভিন্ন স্হানে বিত্তবানদের বিনোদন - সংস্কৃতি আয়োজনের প্রধানতম শক্তি, ঠিক হাইব্রিড রাজনৈতিক অপশক্তির মত ।‌

অন্দরের অনেক কথা'ই আজ আর লেখা হলো না অনুগল্প তার জন্ম চরিত্র বা আকৃতি হারাবে বলে।‌

জ্ঞানীজনরা বলেন, 'জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো'। কিন্তু এই কথা আজকাল গল্পকাররাও মানতে চান না । তাঁদের গল্পের কোন 'মিস্ত্রির পুত্রের' চরিত্র স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০ বছরের এত বিকাশ এত সমৃদ্ধিতেও মানুষের চরিত্র হয়ে ওঠে না ! #

লেখক: সাবেক সহসভাপতি, বিএফইউজে- বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও সাবেক সভাপতি, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন-সিইউজে, আহ্বায়ক, চট্টগ্রাম নাগরিক উদ্যোগ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :