দুর্ব্যবহার বনাম সু-আচরণ

এম এ রশীদ
| আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২২, ১৪:২৭ | প্রকাশিত : ০৯ আগস্ট ২০২২, ২২:০৮

দুর্ব্যবহার হচ্ছে খারাপ ব্যবহার বা অস্বাভাবিক বা অনাকাঙ্ক্ষিত বা অশুভ বা অসভ্য আচরণ। কর্কশ ভাষায় কথা বলা দুর্ব্যবহার। শারীরিক বা মানসিকভাবে কাউকে লাঞ্ছিত করা দুর্ব্যবহার।

দুর্ব্যবহার অনেক রকম। যেমন ধমক, গালমন্দ, গালিগালাজ, হুমকি, চোখ রাংগানি, মারধোর, ব্যাঙ্গ, বিদ্রুপ, উপহাস, উত্যক্ততা (টিজিং), খেপানো, জ্বালাতন ইত্যাদি। কথার মাধ্যমে কাউকে মনে কষ্ট দেয়া অথবা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা চরম দুর্ব্যবহার।

দুর্ব্যবহার মানুষ দ্বারা মানুষের প্রতি যেমন সংঘটিত হতে পারে, তেমনি মানুষ দ্বারা পশু বা যে কোন প্রাণী বা উদ্ভিদ এমনকি পরিবেশের প্রতিও সংঘটিত হতে পারে।

মানুষ দ্বারা মানুষের প্রতি দুর্ব্যবহার আমাদের এখনকার আলোচনার বিষয়।

দুর্ব্যবহার মানুষের একটি নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য। এক কথায় এটি একটি মন্দ বা নিন্দনীয় কাজ। দুর্ব্যবহার করা অনেক মানুষের মুদ্রাদোষ। সাধারণত সবল দুর্বলের প্রতি, ধনী গরিবের প্রতি, উর্ধতন অধস্তনের প্রতি, সিনিয়র জুনিয়রের প্রতি, কোনো অফিসের কর্মকর্তা বা কর্মচারি তার কাছে কাজে আসা সাক্ষাতপ্রার্থী বা অভ্যাগতের প্রতি, বিক্রেতা ক্রেতার প্রতি, পথচারী অন্য পথচারীর প্রতি দুর্ব্যবহার করে থাকে। বিশেষ করে বাড়িতে গৃহকর্মি দারোয়ান ড্রাইভার এবং কর্মস্থলে পিয়ন ড্রাইভার দারোয়ান কেরাণি এবং অধস্তন সহকর্মিদের প্রতি দুর্ব্যবহার প্রয়োগ করা হয়।

যার প্রতি দুর্ব্যবহার প্রয়োগ করা হয় তার মনে কষ্ট বা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কিন্তু সেই কষ্ট বা ক্ষোভ প্রকাশ করার সুযোগ বা ক্ষমতা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই না থাকায় দুর্ব্যবহার গ্রহিতা বা দুর্ব্যবহারের শিকার ব্যক্তি মনে মনে যে কষ্ট পায়, তা কিন্তু দুর্ব্যবহারকারির প্রতি একপ্রকার অভিশাপ হয়ে আবির্ভুত হয় কোন না কোন সময়ে।

কাউকে বিকৃত নামে ডাকা, তার প্রতি ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ বা উপহাস করা অথবা ধমক দেয়াও দুর্ব্যবহার। কারো কোন কাজে ত্রুটি, ভুল-ভ্রান্তি হতেই পারে। তাই বলে তার প্রতি দুর্ব্যবহার করা উচিত নয়। বরং উপলব্ধি করা উচিত যে ওই কাজটি আমি তাকে সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দিতে পারিনি বলেই সে ভুল করেছে। দুর্ব্যবহারের বিকল্প হচ্ছে বুঝিয়ে বলা বা মোটিভেশন এবং সঠিক শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ প্রদান। ধৈর্য্য ধারণ।

দুর্ব্যবহারের মাধ্যমে আপাতদৃষ্টিতে বাহাদুরি প্রদর্শিত হলেও দুর্ব্যবহারকারিকে তার আশে পাশের মানুষ পছন্দ করে না, বরং মনে মনে ঘৃনা করে। দুর্ব্যবহারের বিপরীতে সদব্যবহার, ভদ্র বা মার্জিত আচরণই ভাল মানুষের পরিচয়।

দুর্ব্যবহার একটি বদঅভ্যাস। এই বদঅভ্যাস বর্জন করা উচিত। কিন্তু হঠাৎ করে এই বদঅভ্যাস দূর করা সহজ নয়। দুর্ব্যবহারের মত খারাপ অভ্যাস বা বদমেজাজ দূর করে শান্তিময় পরিবেশ সৃস্টি করার একটি সহজ উপায় হলো প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে বিছানায় শুয়ে শুয়ে চিন্তা করা যে, আমি আজ সারাদিনে কার কার সাথে দুর্ব্যবহার করেছি। তার জন্যে মনে মনে অনুতপ্ত হওয়া এবং প্রতিজ্ঞা করা বা সতর্ক থাকা যাতে পরদিন আমি কারো সাথে আর দুর্ব্যবহার না করি বা কারো সাথে উচ্চস্বরে কথা না বলি। যদি কারো সাথে অনুচিত দুর্ব্যবহার করেই ফেলা হয়, তবে উচিত হচ্ছে সুযোগ মতো তার কাছে দু:খ প্রকাশ করা বা ক্ষমা চেয়ে নেয়া।

দুর্ব্যবহার মানুষের অন্যসব ভাল কাজের কৃতিত্বকে ধ্বংস করে দেয়। দুর্ব্যবহার শুধু অপরকে শারীরিক ও মানসিকভাবে কষ্ট বা আঘাতই দেয় না, নিজের জীবনেও ধ্বংস ডেকে আনে। এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ ( হাই ব্লাড প্রেসার), ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে। অপরদিকে, ভাল ভদ্র মার্জিত ব্যবহার বা সু-আচরণ নিজের মধ্যে ধৈর্য্য প্রশান্তি পরিতৃপ্তি ও মহানুভবতার জন্ম দেয় এবং আশেপাশের পরিবেশকে শান্তিময় করে তোলে। সু-আচরণ অন্যের কর্মস্পৃহাকে বৃদ্ধি করে দেয় এবং সু-আচরণকারির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাড়িয়ে দেয়। সু-আচরণ মানব সভ্যতাকে বিকশিত করে।

লেখক: পরিচালক (অব.), শ্রম অধিদপ্তর

উপস্থাপক ও গীতিকার, বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :