ব্যস্ততম দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটে সুনসান নীরবতা

প্রকাশ | ১০ আগস্ট ২০২২, ১০:২৩ | আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২২, ১১:২৩

এম, মনিরুজ্জামান, রাজবাড়ী

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ার এক সময়ের ব্যস্ততম লঞ্চঘাটে এখন সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। লঞ্চঘাটে নেই কোনো যাত্রীর চাপ। যাত্রী না থাকায় লঞ্চের ট্রিপ সংখ্যাও কমে গেছে। ফলে বেশিরভাগ সময়ই লঞ্চের চালক ও শ্রমিকেরা ঘাটে বসে অলস সময় পার করছেন। যাত্রী ও পর্যাপ্ত ট্রিপ না থাকায় লোকসানে পড়তে হচ্ছে লঞ্চ মালিকদের।

তার মধ্যে তেলের দাম বৃদ্ধিতে যাত্রী ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়ায় লঞ্চের যাত্রী গত দুই দিন ধরে নেই বললেই চলে। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর থেকেই লঞ্চে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ৩০ টাকার ভাড়া ৪৫ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

সরেজমিনে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি লঞ্চ ঘাটে পন্টুনের সঙ্গে বেঁধে রাখা। যাত্রী না থাকায় প্রত্যেকটি লঞ্চ স্বল্প সংখ্যক যাত্রী নিয়ে পৌনে এক ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা পরপর ঘাট থেকে ছেড়ে যাচ্ছে। ঠিক একইভাবে পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চগুলোও স্বল্প সংখ্যক যাত্রী নিয়ে গড়ে এক ঘণ্টা পরপর দৌলতদিয়া ঘাটে আসছে। আগে যেখানে উভয় ঘাট থেকেই ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরপর শতাধিক যাত্রী নিয়ে লঞ্চগুলো ছেড়ে যেত, সেখানে এখন প্রত্যেকটি লঞ্চই থাকে যাত্রী শূন্য। যাত্রী না থাকায় লঞ্চের চালক ও শ্রমিকরা ঘাটে বসে অলস সময় পার করছেন।

ঘাটে নেই যাত্রীর চাপ। কুলি, দালাল ও লঞ্চ কর্মচারীদের হাঁকডাক নেই। তাই সব সময়ই লঞ্চ ঘাটে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও আরিচা-নগরবাড়ী নৌপথে মোট ২৫টি লঞ্চ চলাচল করে। এর মধ্যে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ১৭টি লঞ্চ চলে। আর ৮টি লঞ্চ চলে আরিচা-নগরবাড়ী রুটে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার যাত্রী দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাট দিয়ে পারাপার হতো।

কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই সেই চাপ কমে যায়। এখন প্রতিদিনই যাত্রী শূন্য থাকে ঘাটগুলো। প্রতিদিন এখন ৫ থেকে ৮ হাজার যাত্রী পার হয়ে থাকে ঘাট দিয়ে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাসের সিরিয়াল না থাকায় লঞ্চ ঘাট এলাকায় যাত্রীর চাপ কমেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

ফরিদপুর থেকে আসা যাত্রী সহিদ সেখ, বিল্লাল মিজি জানান, তারা  লোকাল বাসে করে দৌলতদিয়া ঘাট পর্যন্ত এসেছেন। তারপর গাড়ি না  হলে ফেরি ছাড়ে না। তাই দ্রুত  নদী পার হতে তারা লঞ্চ ঘাটে আসেন। লঞ্চ ঘাটে তেমন ভিড় দেখতে পাননি। টিকিট কেটে সরাসরি তিনি লঞ্চে উঠেছেন। লঞ্চ ছাড়ার অপেক্ষায় ঘাটে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা বসে আছেন। যাত্রী না থাকায় ঘাট থেকে লঞ্চও ছাড়ছে না।

এমভি টুম্পা নামক লঞ্চের চালক ঠান্ডু মিয়া বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই আমরা অলস সময় পার করছি। ঘাটে যাত্রীর চাপ নেই। আগে যেখানে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর পর ঘাট থেকে শতাধিক যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ছেড়ে যেত, সেখানে এখন এক ঘণ্টা পর পর ৩০/৪০ জন যাত্রী নিয়ে ঘাট ছাড়তে হচ্ছে। এই অবস্থায় আমাদের তেলের খরচই উঠছে না। তারপর এখন আবার সরকার নতুন করে তেলের দাম বাড়িয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে লোকসান এড়াতে মালিকও লঞ্চ বিক্রি করে দেবে। তখন আমাদের ভবিষ্যৎ যে কী হবে বলতে পারছি না।

দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটের ম্যানেজার নুরুল আলম বলেন, ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ না থাকার প্রভাব লঞ্চ ঘাটেও পড়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই ব্যস্ততম দৌলতদিয়া

লঞ্চঘাট এখন সুনসান নীরব। আগে যেখানে যাত্রীরা লঞ্চের জন্য অপেক্ষা করত, সেখানে লঞ্চ এখন যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর লঞ্চ ঘাটের চিত্র পুরোটাই পাল্টে গেছে।

বিআইডব্লিউটিএর আরিচা কার্যালয়ের লঞ্চঘাটের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আফতাব হোসেন জানান, যাত্রী সংখ্যা কম থাকলেও দৌলতদিয়ায় লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। আগে ১০-১৫ মিনিট পর পর ঘাট থেকে লঞ্চগুলো ছেড়ে যেত, এখন যাত্রী কম থাকায় ৪০ মিনিট, এক ঘণ্টা পর পর ছেড়ে যায়। বর্তমানে ১৭টি লঞ্চ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে চলাচল করছে।

(ঢাকাটাইমস/১০আগস্ট/এআর/এসএ)