দুই মাসে ২৫ লাখ টাকার আম বিক্রি রাবি শিক্ষার্থী লিখনের, যেভাবে শুরু...

আশিকুল ইসলাম ধ্রুব, রাবি প্রতিনিধি
| আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২২, ১২:০৫ | প্রকাশিত : ১০ আগস্ট ২০২২, ১১:৪১

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) লোক প্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী লিখন আহমেদ। করোনাকালীন সময়ে বিশ্বে যখন স্থবিরতা বিরাজ করছিল ঠিক সেই মুহূর্তে অবসর সময়টাকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় ভাবছিলেন তিনি। অনলাইন প্লাটফর্মকে বেছে নিয়ে ঘরে বসেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে আমের ব্যবসা শুরু করেন।

রাজশাহী ও নওগাঁর বিভিন্ন উপজেলার বাগান থেকে পাইকারি দরে আম কিনে কুরিয়ারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতেন তিনি। প্রথমে সেভাবে সাড়া না পেলেও বছর ঘুরতেই ভালো সাড়া পেতে শুরু করেন। যার ফলে এই সিজনে অনলাইনে প্রায় ২৫ লাখ টাকার আম বিক্রি করে প্রায় আড়াই লাখ টাকা আয় করেন লিখন। অনলাইনের এমন প্লাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে এখন বাংলাদেশের একজন সেরা উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন তার চোখে। এভাবেই ক্ষুদ্র থেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনের গল্প বলছিলেন লিখন আহমেদ।

লিখনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনাকালে বিশ্ব যখন স্থবির তখন থেকেই বাড়িতে বসে নিজেদের জমিতে সবজি চাষ, মাছ চাষ, কলা উৎপাদনসহ বিভিন্ন রকম কৃষি কাজে মনোনিবেশ করেন তিনি। ঘরে বসে থেকে কিছু করার ইচ্ছে থেকেই অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেন এ উদ্যোক্তা। প্রথমে খাঁটি মধু, ঘি, কাঠের ঘানি সরিষা তেল, বিভিন্ন রকম খেজুর, মিক্সড ড্রাইফুডসহ বিশ প্লাস আইটেম নিয়ে কাজ শুরে করেন। প্রথমে সেভাবে সাড়া না পেলেও বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ভালো সাড়া পেতে থাকেন।

করোনার সময়ে পরিবহন জটিলতা ও পাইকারদের অভাবে আম চাষিরা যখন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন তখন ইতিবাচক চিন্তা থেকে আম সংগ্রহ করে অনলাইনে বিক্রি শুরু করেন লিখন। কিছু দিনের মধ্যে ভালো সাড়া পান তিনি।

রাজশাহী ও নওগাঁ থেকে দেশের আম কিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাইকারি ও খুচরায় বিক্রি করে থাকেন এ উদ্যোক্তা । তার মধ্যে বিভিন্ন জাতের আম রয়েছে গোপালভোগ, হিমসাগর, হাড়ি ভাঙ্গা, ক্ষিরশাপাতি, ল্যাংড়া, আম্রপালি, বারি-৪, ফজলি। এসব আমের সারাদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে অন্য বছরের চেয়ে এবছর আমের দাম তুলনামূলক কিছুটা বেশি ছিল। ফলে বেশি দাম দিয়ে হলেও অনেকেই রাজশাহীর আম কিনতে পছন্দ করে।

এদিকে ব্যবসা প্রসারের জন্য 'পিউর ফুড পয়েন্ট' নামে একটি পেজ ও নান্দনিক বাজার নামে একটি গ্রুপ খুলেন ফেসবুকে। যেখানে বিভিন্ন রকম প্রোডাক্টের ভিউ দেখানো হয়। ক্রেতারা অনলাইনে প্রোডাক্ট দেখে পছন্দ অনুযায়ী অনলাইনে অর্ডার করতে পারেন। এমন অনলাইন ব্যবসার প্লাটফর্ম আরো প্রসারিত করার ইচ্ছে লিখনের। ভবিষ্যতে ভালো মানে প্রজেক্ট করতে আগ্রহী সে।

এ বছর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ৮০ টাকা থেকে শুরু করে ২২০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি করা হয়েছে। এদিকে মণপ্রতি ২৬০০ টাকা থেকে শুরু ৬৫০০ টাকা বিক্রি করা হয়।

এ বছর সিজন শুরু হওয়ার আগেই পরিকল্পনা করে ছিলেন ব্যবসায় মনোযোগ দিবেন। তাই কোচিং ও টিউশন বাদ দিয়ে প্রায় দুমাস অনলাইনে অর্ডার নিয়ে আমি বিক্রির কাজ শুরু করেন। ফলে দু-মাস তার বিক্রি এসেছে প্রায় ২৫ লাখ টাকার মতো। এতে প্রায় আড়াই লাখ টাকার মতো আয় হয়েছে তার।

ঢাকা থেকে অনলাইনে লিখনের কাছ থেকে আম অর্ডার করেন আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ নামে এক ব্যক্তি। আম হাতে পেয়ে অনলাইনের এমন সেবার সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমি প্রথমে এ উদ্যোক্তার কথা জানতে পেরে তার কাছে অনলাইনে আম অর্ডার করি। তিনি দুদিনের মধ্যে ভালো মানের আম সরবরাহ করে আমাকে কুরিয়ারে পাঠান। আমি আম হাতে পেয়ে তার বিল পরিশোধ করে দেই। এদিকে ঢাকাতে বসে সহজেই রাজশাহীর সুমিষ্ট আমের স্বাদ ভোগ করতে পেরেছি। অনলাইনের এমন প্লাটফর্মকে সাধুবাদ জানান এ ভোক্তা।

জানতে চাইলে লিখন আহমেদ বলেন, আগাম পরিকল্পনা নিয়ে এ সিজনে আমের ব্যবসা শুরু করি। এ বছর সরাসরি বাগান থেকে আম সরবরাহ করে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। আমের বিজনেস স্ট্রাটেজি ছিল ‘বিক্রি করবো বেশি, লাভ করবো কম’। এটা দারুণ কাজে দিয়েছে।

আমার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি পরিমাণ আম সারাদেশে পাঠাতে সক্ষম হয়েছি।

আমকে কেন্দ্র করেই ২ মাস ২৫ লাখ টাকার মতো বিক্রি করেছি। এমন সাফল্যজনক ব্যবসার সঙ্গে ছিল আমার পরিশ্রম, সততা, কথা এবং কাজের মিল।

পড়াশোনার পাশাপাশি এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা তারেক নূর বলেন, উদ্যোক্তা হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। প্রতি বছর বাংলাদেশে যে পরিমাণ গ্রাজুয়েট কমপ্লিট করে বের হচ্ছে সে পরিমাণ কর্মসংস্থান বাংলাদেশে নেই। পড়াশোনার পাশাপাশি লিখনের এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।

(ঢাকাটাইমস/১০আগস্ট/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :