বিএম ডিপোর ভয়াবহ বিস্ফোরণ: বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে তদন্তের নির্দেশ

প্রকাশ | ১০ আগস্ট ২০২২, ১৯:২৫ | আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২২, ১৯:২৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো, ঢাকাটাইমস

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় হতাহতদের বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল

কমিটি গঠন করে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বুধবার এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে দায়ের করা রিটের শুনানিতে হাইকোর্টের বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদেশে দুর্ঘটনার কারণ ও দায় নিরূপণ করে আগামী তিন মাসের মধ্যে এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন আদালত। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে কমিটি গঠনের নির্দেশ ও প্রতিদবেদন দিতে বলা হয়েছে।

একইসঙ্গে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। রুলে সীতাকুণ্ডে নিহত ও আহতদের পরিবারকে কেন পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। অপর এক রুলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপালনে ব্যর্থতা ও অবহেলা কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া এ বিষয়ে যথাযথ তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা কেন নেওয়া হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

এ ডিপোতে আগুন লেগে এ ধরনের দুর্ঘটনা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কেন নেওয়া হবে না। অন্যদিকে, ফায়ার সার্ভিসকে অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি কেন সরবরাহ করা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।

কেমিক্যাল রক্ষণাবেক্ষণে জন্য সুর্নিদিষ্ট স্থান নির্ধারণ করার নির্দেশনা ও ডিপোতে সংরক্ষিত কেমিক্যালের পরিমাণ, কী ধরনের কেমিক্যাল রাখা হবে তা প্রদর্শনের নির্দেশনা কেন দেওয়া হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি), স্মার্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমডি এবং বিএম কনটেইনার বিডি লিমিটেডের এমডিসহ সংশ্লিষ্টদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. হুমায়ুন কবীর পল্লব।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মো. হুমায়ুন কবীর পল্লব। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে অরবিন্দ কুমার রায়ের সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আব্বাস উদ্দীন, আবুল কাশেম পারভেজ ভুইয়া ও শামসুন্নাহার লিজা।

এর আগে গত ২৯ জুন জনস্বার্থে এ বিষয়ে ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট ও চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ (সিসিবি) ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. হুমায়ুন কবির পল্লব এ রিট করেন। ওই রিটের ওপর শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন আদালত।

রিটে সীতাকুণ্ডে নিহতদের প্রত্যেককে দুই কোটি ও আহতদের প্রত্যেককে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশনা চাওয়া হয়। একইসঙ্গে এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়। রিট করার সময় ওইদিন পল্লবের সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান ও অ্যাডভোকেট এ এম জামিউল হক ফয়সাল।

রিটে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি), স্মার্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমডি এবং বিএম কনটেইনার বিডি লিমিটেডের এমডিসহ সংশ্লিষ্ট ২০ জনকে বিবাদী করা হয়।

গত ৮ জুন সীতাকুণ্ডের আগুনে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে সরকার সংশ্লিষ্টদের প্রতি ওই দুই সংগঠনের পক্ষ থেকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। একই সঙ্গে ঘটনা তদন্তে বিচারিক অনুসন্ধান কমিটি করতে বলা হয় ওই নোটিশে।

এছাড়া কমিটির নেতৃত্বে হাইকোর্ট বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে রাখার কথা বলা হয়। পাশপাশি কমিটিতে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের রাখতে সুপারিশ করা হয়। তবে লিগ্যাল নোটিশের পরও কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এ রিট করা হয়।

গত ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুন নেভানোর এক পর্যায়ে রাসায়নিকের কনটেইনারে বিস্ফোরণ ঘটে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়।

এদিকে বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত ৫১ জনের মরদেহ উদ্ধার হলেও ডিএনএ পরীক্ষায় শনাক্ত হওয়া ১৪ জনসহ ৪৩ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। এখনো আটজনের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া আহত হন দুই শতাধিক মানুষ। তাদের বেশ কয়েকজনের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক।

এর আগে গত ৩১ জুলাই হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট একই বেঞ্চে রিটটি কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) ছিল। কিন্তু ওইদিন শুনানি না করে সোমবার (১ আগস্ট) পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়। তবে সোমবার ১ আগস্ট আংশিক শুনানি শেষে মঙ্গলবার (২ আগস্ট) আরও শুনানি ও আদেশের জন্য দিন ঠিক করেন হাইকোর্ট। এর পরে রাষ্ট্রপক্ষ সময় নেন এ বিষয়ে তথ্য জানানোর জন্য। এর পরে রোববার শুনানি নিয়ে সোমবার দিন ঠিক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সেটি আজ আদেশ দেন।

(ঢাকাটাইমস/১০আগস্ট/এআর)