লিবিয়ায় প্রবাসী শ্রমিককে নির্যাতন, ভিডিও পাঠিয়ে আরো মুক্তিপণ দাবি

প্রকাশ | ১০ আগস্ট ২০২২, ১৯:২৯

ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

কর্মের সংস্থানে লিবিয়ায় গিয়ে মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের খপ্পড়ে পড়েছেন ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার যুবক জনি মোল্যা। তাকে গোপনস্থানে বন্দি করে মুক্তিপণের দাবিতে অমানষিক নির্যাতন করা হচ্ছে। প্রতিদিনই তাকে মারধর করা হচ্ছে। এরপর নির্যাতনের ওই দৃশ্য ভিডিওকলের মাধ্যমে দেখানো হচ্ছে তার পরিবারকে। মুক্তিপণ হিসেবে এ পর্যন্ত দফায় দফায় মোটা অংকের টাকা দেয়ার পরেও মিলেনি মুক্তি। এখন আরও টাকা দাবি করার পাশাপাশি নির্যাতনের মাত্রাও বাড়ানো হয়েছে।

জনির বাড়ি ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামালদিয়া ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামে। পিতার নাম কবির মোল্যা। দুই বোন ও এক ভাই তারা। বিয়ের দুই মাস পর গত বছরের ডিসেম্বরে সে ভাগ্যের সন্ধানে মানবপাচারকারী চক্রের মাধ্যমে লিবিয়ায় যায়।

ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ মাস আগে লিবিয়ার উদ্দেশে পাড়ি জমান জনি। তবে সেখানে গত ২১ দিন ধরে মানবপাচারকারী এক চক্রের কবলে পড়েছেন এই যুবক। জনিকে বেঁধে মারধরের ভিডিও প্রতিনিয়ত পরিবারের কাছে পাঠানোর পাশাপাশি মুক্তিপণ হিসেবে ৩ লাখ টাকা দাবি করে চক্রটি। তাদের পাঠানো একটি অ্যাকাউন্টে সেই টাকা পাঠানোর পর আরও টাকা চাওয়া হচ্ছে বলে ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ। অন্যথায় জনিকে হত্যা করার হুমকি দেয়া হচ্ছে।

জনির বাবা কবির মোল্যা বলেন, লিবিয়ায় যাওয়ার পর তিন মাস তার ছেলে কোন কাজের সন্ধান পায়নি। পাঁচ মাস আসে নিজের উদ্যোগেই সে একটি কাজে যোগ দেয়। সেখান থেকে প্রায় ৬৮ হাজারের মতো টাকা উপার্জন করে দেশে মাবার কাছেও পাঠিয়েছে তার কিছু অংশ। কিন্তু এরপর গত তিন সপ্তাহ আগে সে সন্ত্রাসীদের হাতে বন্দি হয়। তাকে দাওয়াত করে সন্ত্রাসীরা একটি ঘরে আটকে ফেলে। এরপর বন্দি ঘরে তার পায়ে রশি বেঁধে ঝুলিয়ে উল্টো করে পেটানো হয়।
ছেলেকে বাঁচাতে অবশেষে থানায় মামলা করেছেন জনির পরিবার।

অভিযোগ পেয়ে ফেনী থেকে এই চক্রের এক সদস্য মাহাবুবুর রহমান ভুঁইয়া রাজীবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। যার অ্যাকাউন্টেই জনির বাবা মুক্তিপণের টাকা পাঠিয়েছিলেন। এই রাজীব মানবপাচারকারী চক্রের মাস্টারমাইন্ডদের একজন বলে পুলিশ জানিয়েছে। তার অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক রকমের লেনদেনের তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এরই মধ্যে রাজীবকে ৩ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

এদিকে মামলা করায় জনির উপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে অপহরণকারীরা। এখন তাদের দাবি, মামলা তুলে নিতে হবে নতুবা ৬০ লাখ টাকা দিতে হবে জনিকে বাঁচাতে। একই সাথে জনির বাবার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়ারও হুমকি দেয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ফরিদপুরের মধুখালী সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কর বলেন, গত ২৯ জুলাই এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে যে অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়েছিল তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিআইডি এবং ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর (এনসিবি) কাছেও সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা এবং জনিকে উদ্ধারের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

(ঢাকাটাইমস/১০আগস্ট/এলএ)