চাঞ্চল্যকর রজব আলী হত্যার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি র‌্যাবের হাতে ধরা

প্রকাশ | ১০ আগস্ট ২০২২, ২১:৫৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

রাজধানীর পুরান ঢাকার নবাবপুরে চাঞ্চল্যকর রজব আলী হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি মো. জিকুকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৩।  তিনি এই মামলার পরোয়ানা দিয়ে দীর্ঘ ১১ বছর  পলাতক ছিলেন।

বুধবার দুপুর ১২ টার দিকে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে অবস্থিত র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে.কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

র‌্যাব জানায়, র‌্যাব-৩ চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান চালায়।  সংস্থাটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসামি গ্রেপ্তার করে। যার মধ্যে বগুড়ার চাঞ্চল্যকর  তিনটি হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত সিরিয়াল কিলার খ্যাত দুর্র্ধষ ফেরারি আসামি মো. হেলাল হোসেনকে কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে, রাজধানীর শাহজাহানপুরের জাহিদুল ইসলাম টিপু এবং পথচারী কলেজ ছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি হত্যা মামলার অন্যতম  চারজন আসামিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা, বহুল আলোচিত বিশ্বজিৎ হত্যার সঙ্গে জড়িত যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামিকে রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে র‌্যাব-৩ এর একটি চৌকস দল মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর  এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে পুরান ঢাকার নবাবপুরে চাঞ্চল্যকর রজব আলী হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মো. জিকুকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার জিকুর বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, রজব আলী ছিল জিকুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। কিন্তু  রজব আলীর বাসা ছিল লালচাঁন মোকাল্লেম পাড়ায় আর জিকুর বাসা ছিল রায়সাহেব বাজার এলাকায়। তারা পরস্পর বন্ধু হলেও এলাকা ভিত্তিক উঠতি বয়সের যুবকদের মধ্যে গ্রুপিং ছিল। নিহত রজব আলী আর গ্রেপ্তার জিকু দুজনেই মাদকাসক্ত ছিল। তারা পাড়ার বন্ধুদের সাথে দল বেধে মাদক সেবন করতো। একদিন মাদক সেবনের সময় তাদের হাতে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না। তখন রজব আলী তাদের মাদক সেবন সঙ্গী সজিব নামে একজনের মুঠোফোন জামানত রেখে মাদকের টাকা সংগ্রহ করে সকলে মিলে দল বেধে মাদক সেবন করে। পরবর্তীতে ওই জামানতের টাকা পরিশোধ না করেই রজব আলীর কাছে জামানত দেওয়া মুঠোফোনটি দাবি করে। এতে তাদের মধ্যে শত্রুতার সৃষ্টি হয়। এই শত্রুতার কারণেই রায়সাহেব পাড়া এলাকার ছেলেরা জিকুর নেতৃত্বে রহিম ওরফে আরিফ, আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে টাইগার, মন্টি, মো. মিলন ওরফে চোপা মিলন, আকাশ ওরফে রাসেল, ফরহাদ হোসেন ওরফে ফরহাদ, সজিব আহমেদ খান, শহীন চাঁন খাদেম ও মোহাম্মদ আলী হাওলাদার বাবু  নিহত রজব আলীকে শায়েস্তা করার জন্য পরিকল্পনা করে।

গ্রেপ্তার জিকুর বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, ২০১১ সালের ২৪ জুলাই রাতে নবাবপুরে মুঠোফোনের দোকানে নিহত রজব আলী টাকা রিচার্জ করতে যায়। তখন পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী জিকুসহ আরও  চার থেকে পাঁচজন রজব আলীকে ঢাকা জজ কোর্টের পিছনে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকে উৎপেতে থাকা মো. মিলন ওরফে চোপা মিলন, আকাশ ওরফে রাসেল, ফরহাদ হোসেন ওরফে ফরহাদ, সজিব আহমেদ খান, শাহীন চাঁন খাদেমসহ সকলে মিলে রজব আলীর উপর এলোপাতাড়ি আক্রমণ করে বুকে ও পেটে ছুরিকাঘাত করলে রজব আলী গুরুতর আহত হয়। তখন রজব আলী চিৎকার করলে চারপাশ থেকে লোকজন ছুটে এলে তারা সকলে পালিয়ে যায়।  ওই সময়ে স্থানীয় লোকজন রজব আলীকে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নিয়ে যায়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় রজবের ভাই জুম্মন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। ২০১২ সালে ৫ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ১৩ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগ পত্র জমা দেয়। আদালত ১৮ জনের সাক্ষ্য নেওয়ার পর  ২০১৯ সালের ১ আগস্ট মামলার রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ে জিকু, রহিম ওরফে আরিফ ও আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে টাইগারকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। ওই আসামিরা সকলেই পলাতক ছিল। এছাড়াও রায়ে সাতজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং তিনজনকে খালাস দেওয়া হয়।

গ্রেপ্তার  মো. জিকু পুরান ঢাকার কোতোয়ালী থানার ধোলাইখাল, রায়সাহেব বাজারে  নাসির উদ্দিন সর্দার লেনের আওলাদ হোসেন রিপনের ছেলে।

(ঢাকাটাইমস/১০ আগস্ট/এএ)