হলি ফ্যামেলিতে খৎনা করাতে গিয়ে টনসিল অপারেশন!

প্রকাশ | ১০ আগস্ট ২০২২, ২৩:০৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

সুনসান নিরবতা। হলি ফ্যামেলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় তলার অস্ত্রোপচার কক্ষের সামনের চেয়ারে বসে আসেন একজন মধ্যবয়সী পুরুষ ব্যক্তি। তার সঙ্গে হাসপাতালের পোশাক পরা আরেক যুবক। দুজনেই গল্প করছিলেন। সালাম দিয়ে একটি শিশুর খোঁজ করলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন আপনি কে?

তার প্রশ্নের জবাবে ‘ঢাকাটাইমসের প্রতিবেদক’ পরিচয় দেওয়া হয়। পরিচয় জানার পর তিনি বললেন, শিশুটি আমার আত্মীয় হয়। ওর বাবা-মা এখন বাসায় গেছেন। আমি এখানে আছি।

কী হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভুলতো হতেই পারে। সেটা চিকিৎসকের হোক আর সেবিকাদের হোক, ভুল একটা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষতো বলেছেন, ব্যবস্থা নেবেন।

হাসপাতালের পরিচালক এখন কোথায় জানতে চাইলে রোগীর আত্মীয় পরিচয় দেওয়া এই ব্যক্তি বলেন, পরিচালক এখন অসুস্থ। তিনি ভিআইপি কেবিনে ভর্তি।

আপনার পরিচয় কী, আপনি শিশুটির কী হন?—এমন প্রশ্নের জবাবে বললেন, ‘আমি এখানে চাকরি করি’। নাম নজরুল ইসলাম। ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন।

তাহলে কেন বললেন, আপনি শিশুটির আত্মীয়? জবাবে নজরুল বলেন, ‘না শিশুটি আমার দূর সম্পর্কের আত্মীয়।‘ এর বেশি কিছু তিনি বলতে চাননি।

রাজধানীর হলি ফ্যামেলি হাসপাতালে সুন্নতে খৎনা (মুসলামানি) করাতে এসে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছে সাড়ে তিন বছরের এক শিশু। শিশুটির নাম সাবি রেহান। এ ঘটনায় শিশুটির বাবা-মা অনেকটাই ভেঙে  পড়েছেন।

শিশুটির এক আত্মীয়, নাম ডেইজি। তিনি নিজেকে আইনজীবী পরিচয় দিয়ে বললেন, সাকি আমার নাতি। মানে আমার ভাগনির ছেলে। ওদের গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা সদরে। ওর বাবার নাম সবুর খান। তিনি সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। কয়েকদিন আগে মগবাজার বাটা গলিতে নানা বাড়িতে তার মার সঙ্গে বেড়াতে আসে সাকি।

শিশুটির মুসলমানি করানোর জন্য বুধবার সকাল ১০টার দিকে হলি ফ্যামেলি হাসপাতালের তৃতীয় তলায় অস্ত্রপোচার কক্ষে নেন শিশুটির মা। কিন্তু সেখানে কর্তব্যরত সেবিকা তাকে ভুল করে টনসিল অপারেশন করানোর কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে ফুয়াদ নামে এক চিকিৎসক তার টনসিলের অপারেশন করান।

পরে যখন তারা বিষয়টি বুঝতে পারেন যে কোথাও একটি ভুল হয়েছে। তখন শহিদুল্লাহ নামে আরেক চিকিৎসক তার মুসলমানি করিয়ে দেন।   ছোট্ট শিশু পরপর দুই অপারেশনের থাক্কা সামলাতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বর্তমানে শিশুটি অস্ত্রোপচার কক্ষের পাশের একটি কক্ষে বিশ্রামে রয়েছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে যাওয়া হয় জরুরি বিভাগের অভর্থনা কক্ষের সামনে। সেখানে দায়িত্বরত একজন বলেন, ওই দেখছেন দাঁড়িয়ে কথা বলছেন, ওনার সঙ্গে কথা বলেন, তিনি বিস্তারিত বলতে পারবেন।

ওই ভদ্রলোককে সালাম দিয়ে সাকি রেহানের চিকিৎসার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন আপনি কে? এরপর প্রতিবেদক পরিচয় পেয়ে তিনি বলেন, ‘না এখনতো অফিস টাইম না। এখন কেউ আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। আপনি আগামীকাল অফিস টাইমে আসেন।’ এই বলেই তিনি সেখান থেকে হনহন করে হাসপাতালের ভিতরের দিকে চলে যান।

পরে আবার ওই জরুরি বিভাগের অভর্থনা কক্ষে দায়িত্বরত ভদ্রলোকের কাছে তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওনি এখানকার ডিউটি অফিসার। তিনি হিসাবরক্ষণ বিভাগের ইনচার্জ হিসেবে কাজ করেন। তবে এখন তিনিই ডিউটি অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন।

(ঢাকাটাইমস/১০আগস্ট/এএ/কেএম)