নতুন করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে হবে: ফখরুল

প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০২২, ২০:৪৫ | আপডেট: ১১ আগস্ট ২০২২, ২০:৪৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

আবার নতুন করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এই সরকার প্রতারণা করে আমাদের মানুষের অধিকারগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমাদের জেগে উঠতে হবে। আবার নতুন করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে হবে।’

বৃহস্পতিবার বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফখরুল এসব কথা বলেন।

ফখরুল বলেন, ‘তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করবো। লড়াই সংগ্রাম শুরু হয়েছে। এই লড়াই আমাদের বেঁচে থাকার লড়াই। এ লড়াই বাংলাদেশকে রক্ষা করবার লড়াই। শুধু বিএনপির নয়, তারেক রহমানের নয়, আমাদের নয়, এ লড়াই বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে বাঁচাবার লড়াই।’ 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশবাসীর নিশ্চয়ই মনে আছে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা কী বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবেন, ঘরে ঘরে চাকরি দেবেন, বিনা পয়সায় সার দেবেন। এখন সারের দাম কত? ২২টাকা। আজকে সেই সারের দাম আবার ৩৫ শতাংশ বাড়িয়েছে। আর ঘরে ঘরে চাকরি... অনেক শিক্ষিত ছেলেদের কাজ নেই। শিক্ষিত ছেলেরা মোটরবাইক চালায়। আমাদের অনেক ছেলেরা আছে যারা বলে না, তারা এখন রিকশা চালায়, সিএনজি অটোরিকশা চালায়। পুলিশের অত্যাচারে আওয়ামী লীগের অত্যাচারে এলাকায় থাকতে পারে না। ঢাকায় চলে এসেছে। এখানে এই কাজগুলো করে তারা তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারকে পরিস্কার করে বলতে চাই আর কাল বিলম্ব না করে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন। নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন দিয়ে নতুন পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে।’

এই সরকার কাদের চাকরি দেয় প্রশ্ন করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের রিকমেন্ড লাগবে সঙ্গে ১৫/২০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হবে। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগের কাজ। তারা বলেছিল দেশে গণতন্ত্র দেবে, বাক স্বাধীনতা দেবে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দেবে। সমস্ত কিছু তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। এখানে সাংবাদিক ভাইয়েরা আছেন, তারা জানেন যে তারা কতটুকু লিখতে পারেন।’ 

এই সরকার বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করেছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শুধু তাই নয়, বিচারপতি খায়রুল হককে দিয়ে তারা এই দেশের সংবিধানকে ধ্বংস করেছে। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে আমরা একটা অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন পেতাম। যে ব্যবস্থায় এই দেশের মানুষ তাদের ভোট দিতে পারতো। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে চারটা নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সেই ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা করেছে। সেদিন থেকেই তারা এই দেশের রাজনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের মধ্য দিয়ে দেশে নতুন করে সংঘাত ও অস্থিতিশীলতা শুরু হলো।’

এই সমাবেশ ঘিরে রাজধানীতে ‘বড় ধরনের শোডাউন’ করেছে বিএনপি। দলটির সমসাময়িক সময়ে কোনো কর্মসূচিতে এত ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়নি। তবে বিএনপির এই সমাবেশ ঘিরে যে কোনো ধরনের নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ।

বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার পরে সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা আসা শুরু করেন। দুপুর ১টা নাগাদ নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম। সঞ্চালক ছিলেন মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক।  

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আফরোজা খান রিতা, আবুল খায়ের ভূইয়া, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/১১আগস্ট/এমএইচ/কেএম)