ভয়ঙ্কর! দুদক কার্যালয়ে কর্মকর্তার শার্টের কলার চেপে ধরলেন পারটেক্স গ্রুপের এমডি রাসেল

প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০২২, ২৩:২৪ | আপডেট: ১২ আগস্ট ২০২২, ১০:৫২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য নানা সময় আলোচিত পারটেক্স গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আম্বার গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত আজিজ রাসেল। এবার অনিয়মের অভিযোগে সমন পেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন—দুদক কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হয়ে কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরই লাঞ্ছিত করেছেন তিনি। ঔদ্ধত্যপূর্ণ এমন আচরণের একপর্যায়ে মুচলেকা দিয়েই ছাড়া পেয়েছেন আম্বার গ্রুপের এই চেয়ারম্যান।

দুদক সূত্রে জানা যায়, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের বিভিন্ন সময়ে ঋণ অনিয়মের অভিযোগে শওকত আজিজ রাসেলকে তলব করে দুদক। ডাক পেয়ে বৃহষ্পতিবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে নিজের গাড়ি নিয়ে বেপরোয়াভাবে ঢুকে পড়েন রাসেল।

এসময় দুদকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাকে বাধা দেন। তারা রাসেলকে জানান, বহিরাগত কারো গাড়ি নিয়ে কমিশন কার্যালয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ। একথা শুনে উত্তেজিত শওকত আজিজ রাসেল দুদকের এক কর্মচারীর শার্টের কলার চেপে ধরেন। আকষ্মিক এমন কাণ্ডে হতবিহ্বল কমিশনের সহকারী পরিচালক রাকিবুল হায়াত ঘটনার প্রতিবাদ করেন। উত্তেজিত শওকত আজিজ রাসেল দুদকের এই কর্মকর্তাকেও ধাক্কা দেন।

এই শোরগোলের মধ্যেই সেখানে আসেন কমিশনের উপ-পরিচালক আলী আকবর। তিনি এসে দেখেন, রাসেল ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করছেন। তিনি বলেন, ‘একপর্যায়ে রাসেলকে কমিশন কার্যালয়ের অভ্যর্থনা কক্ষে নিয়ে এবং পরে তাকে (রাসেল) জিজ্ঞাসাবাদ করতে তৃতীয় তলায় নিয়ে যাওয়া হয়।’

এ বিষয়ে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘দুদকে প্রবেশ করার পর থেকেই শওকত আজিজ রাসেল অপ্রত্যাশিত ব্যবহার করেন। পরে তাকে অনুরোধ করে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়। আমাদের অনুসন্ধান কর্মকর্তারা তার বক্তব্য নিয়েছেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে দুদক সচিব বলেন, ‘আমরা চাইবো, এটা একটা সরকারি অফিস, তাই সবার কাছে মার্জিত ব্যবহার ব্যবহার প্রত্যাশা করি। কিন্তু এই ধরনের ব্যবহার অপ্রত্যাশিত।’

দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছে, রাসেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালক থাকা অবস্থায় তিনি ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি  করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন ব্যংকে তাদের চার হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল এসব প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। বিশেষ করে  ১৩০ কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ রয়েছে রাসেলের বিরুদ্ধে। দুদক সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল দাবি করেন, এ সমস্ত আর্থিক অনিয়মে তার কোনো দায় নেই। অনিয়ম হলে তা ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংকের এমডি শাহাজাহান ভূইয়ার নির্দেশ ও চাপে পড়ে হয়েছে।

এদিকে এমডি শাহজাহান ভূইয়াকেও গেল মঙ্গলবার দুদকে জিজ্ঞাসাবাদে ডাকা হয়েছিল। ওইদিন তিনি দুদক কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হন।

গেল জুন মাসের শেষ দিকে পারটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এম এ হাশেমের পাঁচ ছেলে ও তাদের পরিবারের সদস্যদের পাঁচ বছরের ব্যাংক লেনদেনের তথ্য চেয়ে চিঠি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংস্থাটির সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) থেকে দেশের ব্যাংকগুলোকে এ-সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, পারটেক্স দেশের অন্যতম শিল্পগৌষ্ঠী। এই গ্রুপটিরই অনেকে কয়েকটি অভিজাত ও সামাজিক ক্লাবে নেতৃত্বে আছেন। তবে অভিযোগ রয়েছে, ক্লাবিংয়ের আড়ালে তারা নানা ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত।

একাধিক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদের মেয়ে মেহনাজ রশিদের সঙ্গেও শওকত আজিজ রাসেল ও তার ভাইদের গভীর সখ্য রয়েছে।

একজন গায়িকার সঙ্গে মদ্যপ অবস্থায় নৃত্য:

গত জুনে ঢাকা টাইমসের হাতে আসে একটি ভিডিও ক্লিপ। সেখানে দেখা যায়, দেশের অন্যতম শিল্পগ্রুপটির কর্ণধারদের তিনজন মদ্যপ অবস্থায় নাচানাচি করছেন। তাদের সঙ্গে বেশ পরিচিত একজন গায়িকাও ছিলেন।

কথিত আছে, শিল্পপ্রতিষ্ঠানটির কর্ণধাররা ক্লাবপাড়া ছাড়াও বিভিন্ন সময় উঠতি বয়সী তরুণীদের সঙ্গে ফূর্তিতে মাতেন।

তবে ওই ভিডিওতে দেখা যাওয়া গায়িকার দাবি, তাকে গান গাইতে সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ব্যবসায়ীরা মদপান করছিলেন। কিন্তু তিনি এসবের সঙ্গে ছিলেন না।

ভিডিওর দৃশ্যে দেখা গেছে, একটি ফ্ল্যাটে স্বল্প লাইটের আলোতে চারজন ব্যক্তি বসে আছেন। একজনের হাতে গ্লাস। পাশে টেবিলে রাখা আছে নামিদামি বিভিন্ন ব্রাণ্ডের মদের বোতল। যেখানে দেশের আলোচিত গায়িকা খালি কণ্ঠে গান করছেন। বসে থাকা চারজনের মধ্যে তিনজন ওই শিল্পগ্রুপের কর্ণধার। গায়িকার গানের তালে তারা ফূর্তিতে মাতোয়ারা।

ভিডিওতে আরও দেখা যায়, সেখানে থাকা ব্যক্তিদের একজন ওই সংগীত শিল্পির সঙ্গে নাচতে দাঁড়ান। কিছু সময় পর তারা দুজন হাতে হাত রেখে নাচছেন। পাশে বসে বাকিরা সেগুলো বেশ আমোদ করে দেখছেন, আর হাসছেন। এরকিছু সময় পর আরেকজন (মোট দুইজন) ওই গায়িকার সঙ্গে নাচতে আসেন। এসময় তাদেরকে মাতাল মনে হয়েছে। কালো গেঞ্জি ও জিন্স পরা একজন অতিরিক্ত মদ্যপ থাকায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না।

ভিডিওর আরেক দৃশ্যতে দেখা গেছে, ঢাকার একটি অভিজাত ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ওই গায়িকাকে জড়িয়ে ধরেন। পাশে তার আরেক ভাই দাঁড়িয়ে আছেন।

(ঢাকাটাইমস/১১আগস্ট/এসআর/কেএম/ইএস/ডিএম)