‘হাওয়া’ কি তবে আইনি প্যাঁচে পড়তে যাচ্ছে?

প্রকাশ | ১২ আগস্ট ২০২২, ১০:২০

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

শেষ রক্ষা বুঝি আর হচ্ছে না। এবার বোধহয় আইনি প্যাঁচে পড়েই যেতে পারে মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘হাওয়া’। বৃহস্পতিবার এমনই ইঙ্গিত দিয়েছে বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। এদিন বিকালে তারা স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা শাখায় সিনেমাটি দেখে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, এখানে বন্য প্রাণী আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে।

‘হাওয়া’ দেখে বের হয়ে বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা রথীন্দ্র কুমার বিশ্বাস সাংবাদিকদের জানান, ‘এ সিনেমায় একটি ভাতশালিক আটকে রাখায় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন, ২০১২-এর লঙ্ঘন করা হয়েছে।’

মামলা হবে কি না প্রশ্নে রথীন্দ্র কুমার বলেন, ‘সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতার আলোকে একটি তদন্ত প্রতিবেদন আমরা বন বিভাগে দাখিল করব। মামলা করা হবে কি না, তা নিয়ে বন বিভাগ সিদ্ধান্ত নেবে। সিনেমায় একটি শালিক সারাক্ষণ খাঁচায় বন্দী ছিল। এর মধ্য দিয়ে দর্শকদের কাছে একটি বার্তা যায় যে, পাখি আটকে রাখা যাবে। সেটিকে শেষ পর্যন্ত পুড়িয়েও খাওয়া হয়।’

বিষয়টি নিয়ে ‘হাওয়া’ সিনেমার নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেছেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো আমাকে কিছু জানানো হয়নি। জানার পর এ নিয়ে কথা বলব।’ সিনেমার শেষ দৃশ্যে শালিকটিকে পুড়িয়ে খাওয়া হয় বিষয়ে প্রশ্ন করলে নির্মাতা দাবি করেন, ‘চঞ্চল চৌধুরী যেটা খেয়েছিলেন, ওটা ছিল বারবিকিউ।’

‘হাওয়া’ সিনেমা হলে যেমন ব্যাপক সাড়া ফেলেছে, এটি নিয়ে এরইমধ্যে একাধিক বিতর্কও তৈরি হয়েছে। সিনেমাজুড়ে খাঁচায় বন্দী পাখি দেখানো এবং একপর্যায়ে সেটিকে পুড়িয়ে খাওয়া সেই বিতর্কেরই একটি। এ ঘটনা নিয়ে বুধবার উদ্বেগ প্রকাশ করে ৩৩টি পরিবেশবাদী সংগঠন। তারা ‘হাওয়া’র সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান।

বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ৩৩ সংগঠনের সমন্বিত জোটের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ‘চলচ্চিত্রটির রিভিউ এবং হলফেরত দর্শকদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, চলচ্চিত্রটিতে একটি শালিক পাখিকে খাঁচায় বন্দী অবস্থায় প্রদর্শন ও একপর্যায়ে হত্যা করে খাওয়ার দৃশ্য দেখানো হয়েছে। এর মাধ্যমে বন্য প্রাণী আইন-২০১২-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে।

এদিকে, খাঁচায় বন্দি পাখি ছাড়াও ‘হাওয়া’ সিনেমায় অকথ্য ভাষার অসংখ্য গালিগালাজ নিয়েও অভিযোগ করেছেন অনেকে। বাচ্চাদের নিয়ে সিনেমাটি দেখতে গিয়ে অনেক মা-বাবাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে বলেও জানিয়েছেন অনেকে। এছাড়া ‘হাওয়া’ ২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া কোরিয়ান সিনেমা ‘সি ফগ’-এর নকল বলেও দাবি করেছেন অনেকে।

যদিও পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমন এই দুটি অভিযোগই অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, ‘হাওয়া আমাদের নিজস্ব সিনেমা, নিজস্ব গল্প। এটি কোনো দেশের সিনেমার নকল নয়।’ গালিগালাজ সম্পর্কে সুমনের দাবি, ওগুলো গালি নয়, একটা অঞ্চলের ভাষা।’ যদিও নির্মাতার এই দাবিকে হাস্যকর বলেছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরাই। তাদের প্রশ্ন, গালি আবার কোনো অঞ্চলের ভাষা হয় কী করে?

সান মিউজিক অ্যান্ড মোশন পিকচার্স লিমিটেড প্রযোজিত ‘হাওয়া’ সিনেমার বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী, শরীফুল রাজ, নাজিফা তুষি, নাসির উদ্দিন খান, সোহেল খান, সুমন আনোয়ারসহ অনেকে। শনিবার (১৩ আগস্ট) সিনেমাটি অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডে এবং ২ সেপ্টেম্বর আমেরিকা ও কানাডায় মুক্তি পাচ্ছে বলে নির্মাতা কর্র্তপক্ষ সূত্রে জানা গেছে।

(ঢাকা টাইমস/১২ আগস্ট/এএইচ)