কাউয়াদিঘী হাওড়ের জলাবদ্ধতা নিরসনে জেলা প্রশাসকের উদ্যোগ

প্রকাশ | ১২ আগস্ট ২০২২, ১০:৪৮

আব্দুল বাছিত বাচ্চু, মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজারের কাউয়াদিঘী হাওরের জলাবদ্ধতা নিরসনে কাশিমপুর পাম্প হাউস সচল রেখে আমন আবাদের সুযোগ চেয়ে পাঁচ দফা দাবিতে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে কৃষি ও কৃষক রক্ষা কমিটি। স্মারকলিপি পাওয়ার পর পরই এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

বৃহস্পতিবার দুপুরে এই স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এর আগে প্রেসক্লাবের সামনে এক কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
কৃষি ও কৃষক রক্ষা কমিটির উপদেষ্ঠা সেলিম আহমেদের সভাপতিত্বে ও অ্যাডভোকেট হারুনুর রশীদ সোয়েবের সঞ্চালনায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় বক্তারা বলেন, পাম্প কর্তৃপক্ষ বিদ্যুতের ঘাটতির অজুহাত দেখিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে হাওরের পানি নিষ্কাশন করছেন না। যার ফলে হাওর আজ জলে টইটম্বুর। কৃষকের হাতে সময় খুবই অল্প। আমন ধান রোপণের সময় চলে যাচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে হাওরের পানি নিষ্কাশন না করলে হাওর পাড়ের প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ ব্যাহত হবে। 

সভায় বক্তব্য দেন- মৌলভীবাজার কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহর লাল দত্ত, হাওর সংগ্রাম রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব জুনেদ আহমেদ চৌধুরী, প্রগতি লেখক সংঘের সাধারণ সম্পাদক মহিদুর রহমান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী এম. খছরু চৌধুরী, কৃষক নেতা হারুনুর রশীদ নোমান, ফয়ছল আহমদ, সুলতান আহমদ, আক্তার মিয়া, সুলেমান মিয়া, ইউপি সদস্য জুবেল আহমদ, হেলাল আহমদ, সাবুল আহমদ প্রমুখ।
কৃষকদের সমাবেশের পর জেলা প্রশাসক স্ব স্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি সভা করেন। সভায় জলাবদ্ধতা নিরসনে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সভায় বিস্তারিত আলোচনায় বিদ্যুৎ সংকটের বিষয়টি সামনে আসে।  তাৎক্ষণিক অন্য এলাকা থেকে ২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অতিরিক্ত যোগ করে মনু প্রকল্পের কাশিমপুর পাম্প হাউস সচল রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

জানা যায়, এতদিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৬ টি পাম্পের স্থলে এখন ৮ টি পাম্প টানা ১৮ ঘণ্টা চলবে। আর ৬ ঘণ্টা চলবে ২ টি পাম্প।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান আশা প্রকাশ করে বলেন, এখন দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসন হবে।
জানা গেছে, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এমন সিদ্ধান্ত জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তানিয়া সুলতানা, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো হাবিবুল বাহার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর 'র উপ পরিচালক কৃষিবিদ মো. শামসুদ্দিন আহমদ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তারুজ্জামান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
উল্লেখ্য মনূ সেচ প্রকল্পের অধীনে মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার কাউয়াদীঘি হাওরের ১৯ হাজার ২২৮ হেক্টর চাষযোগ্য জমির বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন ও সেচ ব্যবস্থা প্রদানের লক্ষে ১৯৭৫-৭৬ সালে কাশিমপুর পাম্প হাউসটি স্থাপন করা হয়। পরে পাম্পের ৮টি মেশিনের ৬টি অচল হওয়াতে সরকার ২০১৬ সালে ৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে পাম্পটির নতুন করে কাজ শুরু হয়।
এদিকে বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টায় পাম্প হাউজে গেলে দেখা যায় মাত্র দুটি মেশিন চালু করে এই হাওর থেকে পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চাহিদা মত বিদ্যুৎ সরবরাহ না করায় পাম্পটি পুরোপুরি চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে স্থানীয় কৃষকেরা জানান, রোপা আমন চাষাবাদ করতে তারা জমি পুরোপুরিভাবে আবাদ করলেও হাওরে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিংহভাগ চারা রোপণ সম্ভব হচ্ছেনা। মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর’র উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন বলেন, হাওরে পানি বৃদ্ধির কারণে রোপা আমন চাষাবাদে বাধা সৃষ্টি করছে।

তিনি বলেন, দেড় হাজার হেক্টর চাষাবাদকৃত জমির কি পরিমাণ চাষ হয়নি। তা রোপা আমন চাষের পর জানা যাবে।

(ঢাকাটাইমস/১২আগস্ট/এসএ)