শ্রাবণ দিনের শুভ্র কেয়া

প্রকাশ | ১২ আগস্ট ২০২২, ২০:০৬ | আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩:৫৩

সাইখ আল তমাল, ঢাকাটাইমস
কেয়া ফুল এবং ফল

বাংলায় প্রচলিত প্রবাদ আছে, বর্ষায় কেয়া ফুল না ফুটলে নাকি বর্ষাই শুরু হয় না। বর্ষায় কেয়া ফুল ফোটার প্রবাদ থাকলেও মূলত জৈষ্ঠ্যের শেষের দিকে এর দেখা মেলে। কেয়া ফুলের স্নিগ্ধতা, শুভ্রতা আর সুরভি প্রেমিকের মনে নাড়া দেয়। কেয়ার প্রেমে মজেছেন স্বয়ং কবিগুরুও। কবিগুরুর ভাষায়, তোমার ফাগুন দিনের বকুল চাঁপা, শ্রাবণ দিনের কেয়া, তাই দেখে ত বুঝি তোমার কেমন যে তান দেয়া। আরেক কবিতায় কবি লিখেছেন, কেতকীকেশরে কেশপাশ করো সুরভি।

কেয়া ফুল নিয়ে কালিদাস তাঁর মেঘদূতের ২৪ নম্বর শ্লোকে লিখেছেন,

পাণ্ডুচ্ছায়োপবনবৃতয়ঃ কেতকৈঃ সুচিভিন্নৈঃ-

নীড়ারম্ভৈর্গৃহবলিভুজামাকুল্গ্রামচৈত্যাঃ।

কেয়া, সংস্কৃতিতে কেতকী হিন্দিতে কেওড়া আর ইংরেজি নাম scrwe pine. বৈজ্ঞানিক নাম Pandanus Fascicularis. এটি Pandanus গণের উদ্ভিদ। কেয়া গাছ লম্বায় লম্বায় ১০-১২ ফুট হয়ে থাকে। জৈষ্ঠ্যমাসের শেষের দিকে কেয়া ফুল ফুটতে শুরু করে আষাঢ় -শ্রাবণ মাসজুড়ে কেয়া ফুল ফোটে। কেয়ার ফলও হয়। কেয়া ফল দেখতে আনারসের মতো। কেয়া ফলের বৈজ্ঞানিক নাম Pandanus tectorius।

ভারত, প্যাসিফিক আইল্যান্ডস, পূর্ব অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার, জাপান এবং আমাদের বাংলাদেশে কেয়া পাওয়া যায়। এটিকে প্রবালপ্রাচীরও বলা হয়। সেন্টমার্টিন যারা ভ্রমণ করেছেন তারা একবার হলেও কেয়ার ঘন ঝোপ দেখেছেন। সেন্ট মার্টিন ছাড়াও সুন্দরবনে দেখা যায় কেয়া গাছের। এই গাছগুলো পরস্পরের সাথে জড়াজড়ি করে নিবিড় এবং দুর্গম পরিবেশ তৈরি করে।

কেয়া বা কেতকী ফুল সুগন্ধের জন্য প্রাচীনকাল থেকে জনপ্রিয়। কবিদের মন নেওয়া ছাড়া রসনাবিলাসেও কেয়ার আধিপত্য রয়েছে। কেওড়ার জল ছাড়া বাঙালির বিরিয়ানি রান্নাটা যেন অপূর্ণই থেকে যায়। বিরিয়ানি, পোলাও-এর পাশাপাশি কেক, মিষ্টি পায়েসেও ভিন্ন মাত্রা যোগ করে কেওড়া জল। বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ায় কেয়া ফুল থেকে সুগন্ধি তেলও তৈরি হয় যেটা খুশকি দূর করতে কাজে লাগে।

কেয়া একলিঙ্গীক গাছ। পুরুষ কেয়াকে বলা হয় সিত কেতকী এবং স্ত্রী কেতকীকে বলা হয় স্বর্ণ কেতকী বা হেম কেতকী। এর ফুল ফোটে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে। এই কারণে বাংলাদেশে একে বর্ষার ফুল বলা হয়। এর ফুলের রঙ সাদা এবং গন্ধযুক্ত। আশ্বিন কার্তিক মাসে গুচ্ছাকারে ৫-২০ পর্যন্ত ফল হয়। এই ফলের গাত্র বেশ শক্ত হয়। দূর থেকে এই গুচ্ছ ফলকে আনারসের মতো মনে হয়। এর রঙও আনারসের মতো লালচে হয়ে থাকে।

কেয়া ফলেরও রয়েছে নানাবিধ ব্যবহার। এর ফল কাঁচা বা রান্না খাওয়া যায়। কেয়া গাছের পাতারও ব্যবহার রয়েছে। এর পাতা কায়া জ্যাম হিসাবে খাওয়া হয়। এর মিষ্টি গন্ধ থালা -বাসনের জন্য ব্যবহৃত হয়। কেয়ার পাতা কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় এবং মাথাব্যাথা উপশমের কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

কেয়া পাতা দিয়ে মাদুর পাল, ঝুড়ি ইত্যাদি তৈরিতেও ব্যবহার হয়। এর থেকে প্রাপ্ত শুষ্ক ফাইবার পেইন্টিং ব্রাশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

(ঢাকাটাইমস/১২আগস্ট/এসএটি)