পাঁচ বছর পর ফের উৎপাদনে ফিরেছে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল, দায়িত্বে আলিফ গ্রুপ

প্রকাশ | ১৩ আগস্ট ২০২২, ১৭:৫২ | আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০২২, ২০:১৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বন্ধ হওয়ার  প্রায় পাঁচ বছর পর আবারো উৎপাদনে ফিরেছে বস্ত্র খাতের কোম্পানি সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল। কোম্পানিটি প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলক উৎপাদনও শুরু করে দিয়েছে। কোম্পানিটি শিগগিরই পুরোদমে উৎপাদন শুরু করবে। কোম্পানিটি ২০১৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।

চট্টগ্রামে অবস্থিত কোম্পানিটির কারখানায় শনিবার সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের পরীক্ষামূলক উৎপাদন উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

কোম্পানিটি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ার ছেড়ে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার তিন বছর পার না হতেই ২০১৭ সালে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপভিত্তিক তৈরি পোশাক ক্রেতাদের সংগঠন অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের চাহিদা অনুযায়ী কারখানা সংস্কারের কথা বলে ২০১৭ সালের ১ মে উৎপাদন বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ।

এরপর আর উৎপাদনে না ফেরায় অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন বিএসইসির দায়িত্ব নেওয়ার পর গত বছর কোম্পানিটিকে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেয়। তারই অংশ হিসেবে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আলিফ গ্রুপের পক্ষ থেকে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়। আলিফ গ্রুপের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে অক্টোবরে বিএসইসি কিছু শর্ত দিয়ে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল অধিগ্রহণে সম্মতি দেয়।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পেয়ে চলতি বছরে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলকে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করে আলিফ গ্রুপ। পুরাতন মেশিন সংস্কারের পাশাপাশি কিছু নতুন মেশিন স্থাপনের মাধ্যমে এখন কোম্পানিটির পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে।

বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের দেশের সব থেকে বড় সমস্যা কর্মসংস্থান। ব্যাংকের দুইশ কোটি টাকা লোনসহ হঠাৎ করে একটি কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেলে ব্যাংক বিপদে পড়ে। একই সঙ্গে আমাদের সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও বিপদে পড়েন। আর দুই-তিন হাজার লোক বেকার হয়ে যায়। এখন ওনারা (আলিফ গ্রুপ) দায়িত্ব নিয়েছেন, আশা করা যায় আবার নতুন করে কর্মসংস্থান হবে। এক্সপোর্ট হবে।’

শিবলী রুবাইয়াত বলেন, ‘আমাদের গার্মেন্টস সেক্টরের গ্রোথ অনেক বেশি। এখানে ক্যাপাসিটি বাড়ানোটা খুবই দরকার। এখানে ওনাদের উৎপাদনের মাধ্যমে নতুন যে ডিমান্ড সৃষ্টি হচ্ছে তা হয়তো ফুলফিল হবে। ব্যাংকও তাদের আটকে যাওয়া অর্থ ফেরত পাবে। আলিফ গ্রুপ এখন ব্যাংকের আটকে যাওয়া ফান্ড গ্রাজুয়ালি পরিশোধ করে রিলিজ করবেন। যেসব বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করে আটকে গিয়েছিলেন তারাও সুবিধা পাবেন।’

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আগে একদিনে ৬৫টি কোম্পানি ওটিসিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। খুব ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে দুই-চারটা কোম্পানি এরইমধ্যে উৎপাদনে চলে গেছে। আমার হিসেবে আমরা যদি ৫০-৬০টা কোম্পানি চালু করতে পারি তাহলে ২০-৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।

শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম আরও বলেন, এর জন্য নতুন করে জমি কেনা, জায়গা কেনা, ফ্যাক্টরি করা- এগুলোর কিছু করতে হবে না। শুধু তারা যে কাজগুলো করছেন সেগুলো নতুন করে সার্ভিসিং করে ঠিকঠাক করা, কোথাও কোথাও হয় তো নতুন মেশিন স্থাপন করছেন।

আলিফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আজিমুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে আরও বেশি লাগবে। আর আমরা চেষ্টা করছি যতদ্রুত সম্ভব পরিপূর্ণ উৎপাদন শুরু করার। পরীক্ষামূলক উৎপাদন শেষে শিগগির পরিপূর্ণ উৎপাদন শুরু করতে পারবো বলে আমরা আশাবাদী।’

যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে আলিফ গ্রুপকে

✪ নতুন শেয়ার ইস্যু ও বন্ডের মাধ্যমে মূলধন বৃদ্ধিতে আসন্ন নতুন ম্যানেজমেন্টকে প্রযোজ্য সব সিকিউরিটিজ আইন পরিপালন করতে হবে।

✪ সংশ্লিষ্ট আইনের বিধি-বিধান পরিপালন করে আলিফ গ্রুপকে তাদের প্রস্তাবিত অধিগ্রহণ কার্যক্রম নিষ্পত্তি করতে হবে।

✪ সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলকে উৎপাদনে ফেরাতে আলিফ গ্রুপ অবিলম্বে কাজ শুরু করবে। এ জন্য গ্যাস লাইনসহ অন্যান্য সব ইটিলিটিজের সমস্যা কাটিয়ে তুলবে।

✪ আলিফ গ্রুপকে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের ব্যাংকের দায় মেটাতে হবে।

✪ আলিফ গ্রুপের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ ও আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিংকে সিকিউরিটিজ আইন মেনে ঝুলে থাকা সব এজিএম সম্পন্ন এবং আর্থিক প্রতিবেদনে দাখিল নিয়মিত করতে হবে।

✪ শেয়ার মানি ডিপোজিটের বা সংগৃহীত অর্থ পৃথক ব্যাংক হিসাবে রাখতে হবে। যা দিয়ে শুধুমাত্র ব্যাংকের দায় মেটানো ও উৎপাদন চালুর কাজে ব্যবহার করা যাবে।

✪ সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের উৎপাদন শুরু করতে আলিফ গ্রুপ সক ধরনের উদ্যোগ এবং দায় নেবে।

সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল ফিরে দেখা

২০০১ সালে মাত্র পাঁচ লাখ টাকা মূলধনের কোম্পানি ছিল সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল। এরপর ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বরে ৯ লাখ ৯২ হাজার নতুন শেয়ার ইস্যু ও প্রাক-আইপিও প্লেসমেন্টের মাধ্যমে মূলধন বাড়ানো হয় ৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে একই বছরের ৩০ ডিসেম্বর ফের নতুন শেয়ার ছেড়ে ১২০ কোটি টাকার বেশি মূলধন বাড়িয়ে বিএসইসির কাছে আইপিও আবেদন জমা দেওয়া হয়।

অর্থাৎ আইপিও আবেদনের আগের দুই মাসে পাঁচ লাখ টাকার প্রতিষ্ঠান হয়ে যায় ১৩০ কোটি টাকা মূলধনের কোম্পানি। আইপিওর ৪৫ কোটি টাকা যোগ হওয়ার পর সেটি হয়ে যায় ১৭৫ কোটি টাকা মূলধনের কোম্পানি। তালিকাভুক্তির পর তিন বছরে কোম্পানিটি ১১, ১২ এবং ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয়। এতে কোম্পানির মূলধন বেড়ে দাঁড়ায় ২৩৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা।

একদিকে বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়ে শেয়ার বাড়ায় কোম্পানিটি, অন্যদিকে গোপনে শেয়ার বিক্রি করে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে নেন সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের উদ্যোক্তা পরিচালকরা।

আইন লঙ্ঘন করে কোনো ঘোষণা ছাড়া বিপুল শেয়ার বিক্রি করায় ২০২০ সালের জুলাইয়ে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুখসানা মোর্শেদ, পরিচালক শারমিন আকতার এবং প্রাতিষ্ঠানিক পরিচালক বাংলাদেশ শু ইন্ডাস্ট্রিজকে ১৪ কোটি টাকা জরিমানা করে বিএসইসি।

(ঢাকাটাইমস/১৩আগস্ট/বিএস/কেএম)