রডের বদলে বাঁশ! প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ১১টি উপহারের ঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন

প্রকাশ | ১৩ আগস্ট ২০২২, ২৩:০১

নিজস্ব প্রতিবেদক সুনামগঞ্জ

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘর নির্মাণে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ও রডের বদলে বাঁশসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে  ১১টি ঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন। 

শুক্রবার রাত ৮টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত দোয়ারাবাজার উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের আজমপুর গ্রামে তৃতীয় পর্যায়ে নির্মিত ৫৯টি ঘরের মধ্যে ১১টি ঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন নির্বাহী কর্মকর্তা। 

ঘটনার পর শনিবার (১৩ আগস্ট) সকালে ভেঙে ফেলা ঘরগুলো পরিদর্শন করেছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো জাহাঙ্গীর হোসেন। 

তিনি মিস্ত্রিদের নিজস্ব অর্থায়নে আগামী পাঁচ দিনের ভেতর সঠিকভাবে কাজগুলো শেষ করার নির্দেশ দেন। 

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গৃহ নির্মাণের প্রত্যেকটি ধাপে ধাপে অনিয়ম করা হয়েছে। গ্রেড ভিমের ভেতরে ৪টি রডের বদলে কোনো ভিমে দেওয়া হয়েছে একটি রড আর অধিকাংশ ভিমে কোন রড দেয়া হয়নি, আবার কোথাও রডের বদলে দেওয়া হয়েছে বাঁশ।  

এছাড়াও ইটের ওপর ইট বসিয়ে সিমেন্টের গাঁথুনি ছাড়াই লিন্টার তৈরি করা হচ্ছে। বালুর পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে ভিট মাটি, পাথরের পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে ব্লকের অবশিষ্টাংশ। সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে শুধু নামমাত্র। প্লেটের পরিবর্তে কাঁদা মাটিতে বালু পাথর মিশ্রণ করার দৃশ্যও দেখা গেছে। 

 

কাজ করার কথা উপজেলা প্রশাসনের তদারকিতে। কিন্তু এই ৫৯টি ঘরের কাজ সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাংশু কুমার সিংহ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আম্বিয়া আহমদ দুইজনের সহযোগিতায় সদর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য তাজির কাজ করার অনুমতি পান। আর সেই কাজ প্রতিরাতে গ্রেট ভিম ও ডালাইয়ের কাজ করেছে তারা রাতের আঁধারে। 

স্থানীয়রা আরও জানান, প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ থাকায় ওই কাজের কাছা কাছি লোকজন যেতে ভয় পায়। সেই সুযোগে তাজির উদ্দিন, বাজারের কামারপট্রি এলাকার কমল দে ও নৈনগাঁও গ্রামের নুরুদ্দিন তিনজন মিলে তাদের ইচ্ছে মতো কাজ করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আজমপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হান্নান জানান, কাজের শুরুতেই তাজির উদ্দিনকে দিয়ে ঘরের কাজ না করানোর জন্য প্রতিবাদ করতে গিয়ে সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাংশু কুমার সিংহের নির্দেশে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ফয়সাল আহমেদের উপস্থিতিতে পুলিশের হাতকড়া পরতে হয়েছে কিছু সময়ের জন্য। 

আমরা যখন প্রতিবাদ করি তখন পিআইও আম্বীয়া আহমেদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফোন করে বিষয়টি অবগত করেন। 

ভাঙনের সময় নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা প্রিয়াংকার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ফয়সাল আহমেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুল হান্নান, দোয়ারাবাজার থানায় এস আই মিজানুর রহমান, এসআই নোমান আহমদ, এস আই পিন্টু, ইউপি সদস্য ফরহাদ আলম, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। 

 

এ ব্যাপারে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা প্রিয়াংকা জানায়, উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের আজমপুর গ্রামে তৃতীয় পর্যায়ে নির্মিত ৫৯টি ঘরের মধ্যে ১১টি ঘর নির্মাণের অনিয়মের প্রমাণ পেয়ে ইতোমধ্যে ৭টি ঘরের গ্রেড ভিম ( নিচের লিন্টার ও ইট) ভেঙে ফেলা হয়েছে। বাকি যে ঘর তৈরি করা হয়েছে সব কয়টা ঘরের কাজ তদারকি করে দেখা হবে। যদি কোনো ঘরের কাজে ত্রুটি থাকে সেগুলো ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৩আগস্ট/এআর)