দেশে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হবে, তবে...

প্রকাশ | ১৪ আগস্ট ২০২২, ১৫:৫৬ | আপডেট: ১৪ আগস্ট ২০২২, ১৮:৪৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

দেশে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম যদি আরও কমে তবে দেশেও কমানো হবে। এ জন্য দেশের সবাইকে ধৈর্য ধরার জন্য আহ্বান জানাই।

‘বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা: অস্থির বিশ্ববাজার’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি একথা বলেন। ঢাকায় বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে রবিবার এ সেমিনারের আয়োজন করে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ—এফইআরবি।

দাম সমন্বয় করে দেশে দ্বিগুন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে জ্বালানি তেলের। ৫ আগস্ট রাতে মূল্যবৃদ্ধি করে সরকারের ঘোষনার পর ভোক্তাপর্যায়ে খুচরা মূল্য ডিজেল প্রতি লিটার ১১৪ টাকা, কেরোসিন প্রতি লিটার ১১৪ টাকা; অকটেন প্রতি লিটার ১৩৫ টাকা ও পেট্রল ১৩০ টাকা প্রতি লিটারে বিক্রি হচ্ছে।

ব্যাপক শিল্পায়নের কারণে গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহে বিরাট গ্যাপ তৈরি হয়েছে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, ‘বর্তমানে গ্যাস সংকট হচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে। দেশে গত ১০ বছরে ব্যাপকহারে শিল্পায়ন হওয়ায় ব্যাপকহারে গ্যাসের চাহিদাও তৈরি হয়েছে। মূলত গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহের বিরাট গ্যাপ তৈরি হয়েছে।’

নসরুল হামিদ বলেন, ‘গত ১০ বছরে দেশে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। ২০০৯ সালের আগে দেশে গ্যাসের সরবারহ ছিল ১ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমানে তা ২ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহে নেওয়া হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালের পর শিল্পখাতে অনেক বিনিয়োগ হয়েছে। গ্যাসের চাহিদা হুট করেই বেড়ে গেছে। দশ বছরে ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বেড়েছে। ভোলায় বিরাট ক্ষেত্র পেয়েছি। অন শোরে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে সেটি সময়সাপেক্ষ।

তিনি বলেন, সংকট মোকাবিলায় আমাদের চেষ্টার কোনও কমতি নেই। আমরা তো কয়েকমাস আগেও ভালো ছিলাম। আগে জ্বালানি তেল সস্তা ছিল, এখন বেড়েছে। আমরা তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সরে আসছি। এদের ক্যাপাসিটি চার্জ নাই। জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহার করা হবে। এই ধরনের কেন্দ্র আগামীতে ১০ থেকে ১৬ ভাগ থাকবে।

নসরুল হামিদ বলেন, আমাদের একটার পর একটা বেইজলোড বিদ্যুৎ কেন্দ্র চলে আসছে। আমরা খুব আশাবাদী।  পরিস্থিতি যখন খারাপ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ধৈর্য ধরতে হবে। বিশ্বের বহুদেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করেছে। বিশ্বের পরিস্থিতি ভাল না। আমরা এখনো আউট অব হ্যান্ড চলছি না। আমরা যেসব উদ্যোগ নিচ্ছি তা আগেই নেয়া হয়েছে।  এটি খুব সাময়িক সমস্যা।

জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, অফশোরে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বেশ কিছু সম্ভাবনা আমরা দেখতে পাচ্ছি। ২০২৫-২৬ সালে গ্যাসের চাহিদা কমে যাবে, অন্যদিকে উত্তোলন বেশি হবে। তাই বিনিয়োগকারীরা এখন এই খাতে ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগ করতে চায় না। এই কারণে পিএসসি কোম্পানিগুলোর জন্য আকর্ষণীয় করা হচ্ছে। যাতে তারা এই খাতে আগ্রহী হয়। তিনি বলেন, আজকের পরিস্থিতি আমরা ধরে রাখতে চাই, এর নিচে যেন না নেমে যায়। ভবিষ্যতে যাতে আরও খারাপ না হয় সেজন্য এসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এই মুহূর্তে এই সমন্বয় জরুরি ছিল।

পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলেন, আজকে ২৩০০ মিলিয়নে নেমেছে, বাপেক্স কাজ করছে, গ্যাজপ্রম কাজ করছে। পিএসসি সংশোধন পরামর্শক কোম্পানি জমা দেবে চলতি মাসের মধ্যে। চলতি বছরের শেষ দিকে দরপত্র আহ্বানের চিন্তা করা হচ্ছে। কয়লার বিষয়ে তিনি বলেন, বড়পুকুরিয়া থেকে আর ছয় বছর উঠানো যবে। এরপর অন্য জায়গায় যাবার চিন্তা করা হচ্ছে।

অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করবে বিইআরসি। কমিশন গণশুনানির মাধ্যমে এই দাম সমন্বয় করবে। বিপিসি লাইসেন্সি হিসেবে আবেদন করবে। ভর্তুকি দিয়ে আসছেই সরকার। বিপিসির বিরুদ্ধে অস্বচ্ছতার অভিযোগ আছে। সেটা পরিষ্কার করা দরকার। তিতাস মিটার ভাড়া কাউকে না জানিয়ে বাড়িয়ে দেয়।

অধ্যাপক বদরূল ইমাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর সময়ে কিনে নেওয়া ৫টি গ্যাস ক্ষেত্রের মধ্যে দুইটা ছিল বেশ বড় ক্ষেত্র। খুব অল্প দামে ক্ষেত্রগুলো কিনে নেওয়া হয়। তিনি বলেন, মূল সমস্যা জ্বালানি। জ্বালানি জোগান দিতে পারিনি, নিজস্ব জ্বালানির প্রতি অবহেলার কারণে। ভূতত্ত্ববিদরা মনে করছেন,  দেশীয় গ্যাস এখনও আছে এটা নিশ্চিত। এটাকে যদি উত্তোলন করা হতো তাহলে আজকের এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না। এখনও দেশের বহু এলাকায় গ্যাসের মজুদ থাকার সম্ভাবনা আছে। এসব জায়গায় এখন উত্তোলন করা জরুরি। এজন্য দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে।

অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি নিয়ে যে ভালো অবস্থান ছিল তা আগামী কয়েক মাসে আর ভালো থাকবে না। কর্মসংস্থান,  বিদ্যুৎ,  শিল্পখাতে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। জ্বলানি খাতের দাম খুব অস্থিতিশীল সব সময়ই। নবায়নযোগ্য জ্বালানি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভাল জায়গায়। এইক্ষেত্রে বিনিয়োগ উৎসাহিত করা দরকার।

সেমিনারে এফইআরবির চেয়ারম্যান শামীম জাহাঙ্গীরের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সাংবাদিক শাহনাজ বেগম, সদরুল হাসান, শাহেদ সিদ্দিকীসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।

(ঢাকাটাইমস/১৪আগস্ট/ওএফ/ডিএম)