স্বপ্ন বুনছে শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরাইয়া ও সৈকত
শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী সুরাইয়া। স্বপ্নই যেন তাড়া করে বেড়ায় প্রতিনিয়ত। তাইতো মনের ইচ্ছাশক্তির জোরেই এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার মতো জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি মুহূর্তে। আর ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমেই স্বপ্ন বুনছে সুরাইয়া। জীবনে আরও বড় হতে চান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্যে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন সুরাইয়া। পরীক্ষা দিতে এসেছিলো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে।
জন্মের পরই সুরাইয়া জাহানের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা চোখে পড়ে তার পরিবারের। শেরপুরের সদরের আন্দারিয়া সুতিরপাড়ে বড় হয়ে উঠেছে সুরাইয়া। বাবা সফির উদ্দিন চরপক্ষীমারি স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক। মা মুরশিদা সফির গৃহিনী।
সংকট মনে হলেও বাবা মায়ের কাছে বোঝা হয়ে নয় বরং আশার আলো নিয়েই স্বপ্ন দেখছে সুরাইয়ার বাবা- মা। ৩ সন্তানের মধ্যে বড় ও ছোট দুই সন্তানের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও পড়াশোনায় উচ্চশিক্ষিত করতে চায় তার পরিবার।
সুরাইয়া জাহানের মাতা মুরশিদা সফি বলেন, ‘চলতে, লিখতে না পাড়া আমার বড় মেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায় তাই আমরাও তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি যতোটা ভালো রাখা যায়। এই লড়াই করে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলে আমাদের খুশির শেষ থাকবে না। নজরুল ভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারলে আমাদের জন্যেও ভালো ছিলো। সুরাইয়াও এখানে ভর্তি হতে চায়। আল্লাহর ইচ্ছা কপালে থাকলে হবে। স্যাররা যদি প্রতিবন্ধী কোটাতে হলেও ভর্তি কারাতো আমাদের স্বপ্ন পূরণ হইতো।’
সুরাইয়া চরকান্দারিয়া হাইস্কুল থেকে মানবিক শাখা থেকে এসএসসিতে ৪.১১ এবং এইচএসসিতে শেরপুর মডেল গার্লস কলেজ থেকে ৪.০০ পেয়ে পাস করে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্ম নেয়া সুরাইয়া জাহান পড়তে চান বিশ্ববিদ্যালয়ে। হাতে না লিখতে পারলেও লিখেন পা দিয়ে। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে কেন্দ্রে পৌঁছাতে একটু বিলম্ব হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অতিরিক্ত ১০ মিনিট সময় দেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের নির্দেশে।
সুরাইয়ার মতো শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা থেকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন দেখা দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান মো. সৈকত খান। দিন আনা কৃষক- মজুর পিতা মো. সবুজ খানের ৩ সন্তানের দুই সন্তান শারীরিক প্রতিবন্ধী। কৃষিকাজ থেকে আসা অর্থ দিয়েই সন্তানের স্বপ্ন পূরণে পড়া লেখা করাতে চান দরিদ্র এই বাবা। সৈকত সুনামঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার জনতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় পায় ৩.৫০ এবং ধর্মপাশা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় পায় ৩.৫৮ । সৈকত নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে পড়ার স্বপ্ন দেখেন।
সৈকত বলেন, আমি অনেক কিছুতে অক্ষম হলেও পড়াশোনা করতে ভালোবাসি। বেঁচে থাকা পর্যন্ত পড়াশোনা করতে চাই। নিজেকে বোঝা মনে হয়। যে এ থেকে সরে আসতে পারি তার জন্যে হলেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই। আমি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাই।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, আমরা নিয়ম অনুযায়ী তাদের সহযোগিতা করেছি যেন পরীক্ষায় ভালোভাবে অংশ নিতে পারে। এমনকি তাদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বিবেচনায় নিয়ে অতিরিক্ত সময়ও প্রদান করেছি।
(ঢাকাটাইমস/১৪আগস্ট/এআর)