পাঠ্যবইয়ের বাইরেও নিয়মিত ‘১৫ আগস্ট’ পড়ানো দরকার

প্রকাশ | ১৫ আগস্ট ২০২২, ১৯:৪২

জুবায়ের ফয়সাল

এদেশের ললাটে কালো দাগের সংখ্যা একটা দুইটা না বরং ডজনেরও বেশি। ১৯৭৫ সালে, কিংবা তারও পূর্বাপরে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই ভূমিতে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক বাঁকবদল হয়েছে রক্তের সমুদ্রে ভেসে। মসনদ টিকিয়ে রাখতে এখানে শাসকরা সবসময়ই সওয়ার হয়েছে উর্দিধারীদের ওপর।

সবচেয়ে ঘৃণ্য ও জঘন্যতম উদাহরণটি তৈরি হয়েছিলো পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট। সেই ভোররাতে ছোট্ট শিশু, বয়োজ্যেষ্ট নারী, কিংবা নববধূ, রেহাই পাননি কেউই। কোন রাজনৈতিক হিসাবনিকাশে না থেকেও কাউকে খুন হতে হয়েছে ধানমন্ডি ৩২ এর রক্তাক্ত উঠোনে।

ঠাণ্ডা মাথায় একটি পরিবারকে সমূলে বিনাশ করার নজিরবিহীন ছক কষেছিলো তখনকার রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ওয়েল অর্গানাইজড খুনীরা। সেসময়ের রাজনৈতিক নেতৃত্বের নির্লিপ্ততা নিয়ে অবশ্যই গবেষণা হওয়া উচিত।

আমার বিশ্বাস, সদ্য স্বাধীন দেশটির স্থপতিকেই স্বপরিবারে হত্যার নেপথ্যে বৃহৎ কোনো পরাশক্তির স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় ছিলো কি না, সেটা নিয়েও আলোচনা হতে পারে, অনুসন্ধান হতে পারে।

কারণ, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে যে কোনো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বন্ধে ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞের আলো অন্ধকারে ঢাকা সব রহস্য উদঘাটন করাটা অত্যন্ত জরুরি বলেও মনে করি।

আমাদের দরকার ছিলো স্কুল-কলেজের পাঠ্যবইয়ের বাইরেও নিয়মিত ‘১৫ আগস্ট’ পড়ানো। কতোটা নির্মম বর্বরতা আর জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞের সাক্ষী হয়েছিলো সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ, আজকের প্রজন্মের জানা দরকার সেটাও। এই ঘটনা থেকে তারা শিখুক, উচ্চাভিলাস ধ্বংস ছাড়া কিছুই দিতে পারে না, কখনো পারেনি।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ড নিয়ে আরো গবেষণা হোক। উঠে আসুক আতশি কাঁচের নিচের ইতিহাস। কারণ, বাংলাদেশ নামের যে বৃক্ষ এখন একটু একটু করে ডালপালা মেলার চেষ্টা করছে, তার শেঁকড়টাই কেটে ফেলা হয়েছিলো পঁচাত্তরের সেই ভোররাতে।

মহান আল্লাহ ১৫ আগস্টের শহীদদের আত্মার মাগফিরাত দিন। সবাইকে ক্ষমা করুন। বেহেশত নসীব করুন। আমীন।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী