সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত

ছুটির দিনের ঘুম থেকে চিরনিদ্রায় ছয়জন

প্রকাশ | ১৫ আগস্ট ২০২২, ২১:২৬ | আপডেট: ১৫ আগস্ট ২০২২, ২১:৪১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

পুরান ঢাকার চকবাজার। দেবীদাস লেনের একটি খাবার হোটেল থেকে আগুনের সূত্রপাতের ধারনা। আগুন ছড়িয়ে পড়ে ভবনজুড়ে। চারতলা ভবনের নিচতলায় হোটেল আর ওপরে পলিথিনের কারখানা। ছুটির দিনের অবসরে দোতলার একটি কক্ষে ঘুমোচ্ছিলেন হোটেলের কর্মী। আড়াই ঘণ্টার আগুন নেভানোর পর ওই কক্ষ থেকে উদ্দার হয় ছয়জনের মরদেহ।

গতকাল বেলা ১২টার দিকে আগুন লাগে। আগুন নেভাতে একে একে যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিসের ১০ ইউনিট। বিকাল আড়াইটার দিকে নিভে আসে আগুন। এরপর ওই ভবন থেকে ছয়জনের মরদেহ উদ্ধারের খবর দেন ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম।

উদ্ধার হওয়া মরদেহগুলো বিল্লাল, ওসমান, শরীফ, স্বপনের। মরদেহগুলি পুলিশের হেফাজতে পাঠানো হয় মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে। লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে করা হবে ডিএনএ টেস্ট। তারপর হস্তান্তর হবে তাদের পরিবারের কাছে।

সরেজমিনে দুপুর দুইটার দিকে দেখা যায়, দাউ দাউ করে আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের কয়েকটি ভবনেও। আতঙ্কিত লোকজন বের হয়ে আসেন সড়কে। অনেকেই স্বজনদের খুঁজতে থাকেন। এক পর্যায়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

এর আগে গত ১৫ এপ্রিল পুরান পুরান ঢাকার লালবাগে একটি প্লাস্টিক কারখানায় ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে। তারও আগে গত ১৮ মার্চ বংশালের নিমতলী এলাকায় প্লাস্টিকের পাইপের কারখানায় আগুন লাগে। একই মাসের ২৪ তারিখ পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে একটি ছয়তলা ভবনের চতুর্থ তলায় আগুন লাগে। এর আগে গত ১২ ফেব্রয়ারি পুরান ঢাকার মাহুতটুলীর একটি ভবনের নিচতলায় পলিথিনের কারখানায় আগুনের ঘটনা ঘটে।

ঘুরেফিরে পুরান ঢাকায় বারবার কেন আগুন? ঢাকা টাইমস কথা বলেছে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে। তারা বলছেন, অবৈধভাবে কেমিকেল গুদামে ভরা পুরান ঢাকার বড় একটি অংশ। বারবার উদ্যোগ নেয়ার পরও সরানো যায়নি তাদের। এসব গুদামের কোনোটাতেই আগুন অগ্নিনির্বাপনের তেমন ব্যবস্থাও নেই।

পুরান ঢাকার জনাকীর্ণ এলাকা থেকে এসব প্লাস্টিক ও কেমিকেল কারাখানাসহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ কারখানা সরিয়ে কামরাঙ্গীচর ও কেরানীগঞ্জে নেওয়ার কথা উঠেছিল। এসব কারখানা ও গুদামগুলোর বেশির ভাগেরই নেই পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন, বিস্ফোরক অধিদপ্তর কিংবা ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র। এক গুচ্ছ সুপারিশ এসেছিল। সেগুলিও কার্যকর হয়নি বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, ‘চকবাজারে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে এসে দেখি আশপাশের বহু ভবনে যত্রতত্র গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের কারখানা, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। একদিকে ঘিঞ্জি এলাকা অন্যদিকে এসব কারখানায় যখন-তখন যেকোনো ঘটনা ঘটে যেতে পারে। পাশাপাশি অনেক ভবনে মানুষ বাসও করছেন। তাদের জন্যই ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।’

এলাকাবাসী জানায়, দোতলার ওই কক্ষে বরিশাল হোটেলের ছয় কর্মচারী মেস করে থাকতেন। রাতে ডিউটি শেষে ওই কক্ষে তারা ঘুমিয়ে ছিলেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর কক্ষে প্রবেশ করে মরদেহ দেখতে পায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, খাবার হোটেলের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কারণে আগুন লাগে। পরে ছড়িয়ে পড়ে একই ভবনের ওপরের তলায় থাকা পলিথিন কারখানায়। সেখান থেকে চারতলা ভবনের নিচতলায় থাকা হোটেলে আগুন লাগে। প্রচণ্ড বাতাসে ভবনের চারতলায় পলেথিন কারখানায় ও গোডাউন আগুন লেগে যায়। এতে ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়।

এই ঘটনায় কোনো মামলা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাইয়ুম ঢাকা টাইমসকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে, ওই ঘটনায় মামলা হবে। মঙ্গলবার তাদের ডিএনএ ট্রেস্ট করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

ফায়ার সার্ভেসের সিনিয়র স্টাফ অফিসার শাহজাহান সিকদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘চকবাজরের ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হবে। তদন্তসাপেক্ষে সুপারিশ করবে ফায়ার সার্ভিস।’

(ঢাকাটাইমস/১৫আগস্ট/এএইচ/ডিএম)