বিদেশিনী পেট্রিয়াকা এখন ফুলবাড়ীয়ার নন্দিত জনসেবক

প্রকাশ | ১৬ আগস্ট ২০২২, ১০:৪০ | আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০২২, ১১:২৫

মো. আমান উল্লাহ আকন্দ, ময়মনসিংহ
পেট্রিয়াকার (মাঝে) কর্মগুণে মুগ্ধ স্থানীয় বাসিন্দারে কাছে তিনি নন্দিত জনসেবক (ছবি: ঢাকাটাইমস)

১১ বছর আগে প্রেমের টানে ফিলিপাইন থেকে বাংলাদেশে এসে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার রাধাকানাই ইউনিয়নের বসত গড়েন জীন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা ওরফে জেসমিন আক্তার। সেখানে প্রেমিক জুলহাস উদ্দিনকে বিয়ে করে সুখের সংসার রচনা করেন পেট্রিয়াকা। প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুন্দর আচরণে টানা দশ বছর স্বামীর সংসারেই সময় কেটেছে পেট্রিয়াকার।

এদিকে ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা আসনে সদস্য পদে প্রার্থী হয়ে সবাইকে চমকে দেন এই বিদেশিনী। বিষয়টি তখন এলাকার ভোটারদের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। পেট্রিয়াকা ওরফে জেসমিন আক্তার সুন্দর আচরণে ভোটারদের মন জয় করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে দ্বিগুণ ভোট বেশি পেয়ে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন।      

এরপর থেকেই এলাকার মানুষের সেবায় মনোনিবেশ করেন এই নারী। ফলে এলাকার মানুষের প্রত্যাশিত সেবা প্রদানের মাধ্যমে পেট্রিয়াকা এখন স্থানীয় বাসিন্দারে কাছে নন্দিত জনসেবক। তার কর্মগুণে মুগ্ধ এলাকার ভোটারসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরাও।  

তবে ভাষাগত সমস্যার কারণে বেশ বিড়ম্বনা পোহাতে হয় এই বিদেশিনী ইউপি সদস্যকে। এক্ষেত্রে পেট্রিয়াকার পাশে থেকে সব সময় সহযোগিতা করে আসছেন তার স্বামী জুলহাস উদ্দিন ও অন্য ইউপি সদস্যরা।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রিয়াকা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ভালো আছি, তবে অত্যন্ত ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে সময় কাটছে। কারণ আগে ছিলাম শুধু গৃহিণী, এখন হয়েছি জনপ্রতিনিধিও। ফলে দুইটা দায়িত্বই আমি ভালোভাবে পালন করার চেষ্টা করছি।

তবে ভাষাগত কারণে কিছু সমস্যা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা নিয়েই কাজ করছি। সেই সঙ্গে চেষ্টা করছি বাংলা ভাষা ভালোভাবে আয়ত্ত করতে। খুব দ্রুত তা পারব বলে আশা করছি।    

পেট্রিয়াকার স্বামী জুলহাস উদ্দিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, পেট্রিয়াকা জনপ্রতিনিধি হওয়ার পর কাজের চাপ বেড়ে গেছে। বেশ পরিশ্রমে সময় কাটে তার। দিনের বেশির ভাগ সময় সে জনসেবায় কাটায়। তবে কখনো তাকে অসন্তুষ্ট হতে দেখি না। নিয়মিত সে এলাকার সালিশ-বৈঠকে উপস্থিত থাকে।  

তবে অনেক ক্ষেত্রে সে বাংলা কথা ও লেখা বুঝতে পারে না। তখন আমি তাকে বুঝিয়ে দেই। এ সময় সে কি বলছে সেটিও অন্যকে বুঝিয়ে দেই আমি।  অফিসের সময় শেষে বাসায় গেলেও সে বিরক্ত হয় না, এটি তার ভালো গুণ।  

পেট্রিয়াকার সহকর্মীরা জানান, সবার সঙ্গে মিলেমিশেই কাজ করছেন প্রেট্রিয়াকা, এলাকার মানুষও তাকে সব সময় পাশে পায়।

রাধাকানাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া শিমুল তরফদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, তিনি ভালো কাজ করেছেন। তবে ভাষাগত সমস্যা রয়েছে, এ জন্য সে তার স্বামীকে জিজ্ঞাসা করেই সব কাজ করে থাকে। আমরাও তাকে সহযোগিতা করি।  

প্রসঙ্গত, জীন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা পড়াশোনা করেছেন ফিলিপাইনের নামি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিশারিজ বিভাগে। সেখান থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে সিঙ্গাপুরে চাকরি করতে গিয়ে পরিচয় হয় বাংলাদেশি তরুণ জুলহাস উদ্দিনের সঙ্গে। সেই পরিচয় থেকেই তাদের প্রেম ও বিয়ে।  

(ঢাকাটাইমস/১৬আগস্ট/এসএম)