রিয়ামনির সংসারের সুখ দেখা হলো না মায়ের

প্রকাশ | ১৬ আগস্ট ২০২২, ১২:৩৩ | আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০২২, ১২:৫২

আহমাদ সোহান সিরাজী, সাভার (ঢাকা)

মা-মেয়ে দুজন একসঙ্গেই চাকরি করতেন একটি পোশাক কারখানায়। মা ফাহিমা আক্তার স্বামী ছাড়া পুরো সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে মেয়ে রিয়ামনিকে আগলে রেখেছিলেন পরম যত্নে। মেয়েকে বিয়ে দিয়ে সেই দায়িত্বের ভার কিছুটা গুটিয়েও নিয়েছিলেন। কিন্তু মেয়ের সেই সুখের সংসার আর দেখে যেতে পারলেন না ফাহিমা।

আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন আশুলিয়ার খেজুরবাগান এলাকার যে বাড়িতে ফাহিমা আক্তার ভাড়া থাকতেন সেই বাড়ির ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম।  

সোমবার বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় ক্রেন থেকে গার্ডার ছিঁড়ে পড়ে নিহত পাঁচজনের একজন ফাহিমা আক্তার। এ ছাড়া আরো মারা যান রিয়ার শ্বশুর রুবেল (৬০), খালা ঝরনা (২৮), খালাতো বোন জান্নাত (৬) ও খালাতো ভাই জাকারিয়া (২)। তবে ফাহিমার মেয়ে রিয়ামনি ও তার স্বামী হৃদয় এ দুর্ঘটনায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন।

নিহত ফাহিমা আক্তারের গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানার নওদত্ত গ্রামে। তার স্বামীর নাম আব্দুর রাজ্জাক। তবে আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ ছিলো না বলে জানা যায়।

রিয়ামনি আশুলিয়ার খেজুরবাগান এলাকার রেডিয়ান্ট গার্মেন্টসে চাকরি করতেন আর তার মা ফাহিমা আক্তার চাকরি করতেন একই এলাকার সিআইপিএল গার্মেন্টসে।

ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে জানান, ‘৮ তলা এই বাড়ির ছয়তলার ৬০৪ নম্বর ইউনিটে বড় মেয়ে রিয়ামনি আর মাদ্রাসা পড়ুয়া ছোট ছেলেকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন ফাহিমা আক্তার। গত শনিবার এই বাড়ির ছাদেই অনুষ্ঠিত হয় রিয়ামনির বিয়ের ছোট্ট আয়োজন।’

তিনি আরো বলেন, ‘রিয়ার বিয়ে ঠিক হবার পর থেকেই তাদেরকে নানা রকম সহযোগিতা করেছি। এমনকি শনিবার আমি নিজে উপস্থিত থেকে বিয়ের সব কাজ সম্পন্ন করি। গতকাল সকালে বউভাতে যাওয়ার উদ্দেশে মিষ্টি হাতে রিয়ামনির মা ও খালাসহ বাকিরা আমার সামনে দিয়েই বের হয়ে যান। বিকেলেই খবর পেলাম তাদের বহনকারী গাড়িটি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে পাঁচজন মারা গেছেন। এটি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।’

শফিকুল নামে রিয়ামনিদের এক প্রতিবেশী বলেন, ‘বিয়ে উপলক্ষে গ্রাম থেকে রিয়ার খালা ঝরনা তার দুই সন্তান জান্নাত ও জাকারিয়াকে নিয়ে এসেছিলেন আশুলিয়ায়। কিন্তু কী নিষ্ঠুর নিয়তি! তাদের সবার ফিরতে হলো লাশ হয়ে।’

আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুদীপ কুমার গোপ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘নিহত ফাহিমা আক্তার তার মেয়ে রিয়ামনিকে নিয়ে আশুলিয়ার খেজুরবাগান এলাকায় ভাড়া থাকতেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা বাড়ির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, বর্তমানে তাদের বাসায় কেউ নেই।’  

(ঢাকাটাইমস/১৬আগস্ট/এসএম)