ধানের উৎপাদন হ্রাস, খাদ্য সংকটের মুখে পড়তে পারে শ্রীলঙ্কা

প্রকাশ | ১৬ আগস্ট ২০২২, ১৩:২৮ | আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০২২, ১৪:৩৯

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

নজিরবিহীন অর্থনৈতিক ও সংকটে পড়া ভারত মহাসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার কৃষিতেও বড় ধরনের ধস নেমেছে। দেশটির স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, সারের অভাবে বেশিরভাগ জমিতে ধান চাষ আগের তুলনায় কমে গেছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির সরকারি অনুমান মতে, শ্রীলঙ্কার কিলিনোচ্চিতে ১০ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। এখানে গড় ফলন হেক্টর প্রতি ২.৩ মেট্রিক টন হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তার মতে, বিগত বছরগুলোতে এলাকার প্রতি হেক্টর ধান ক্ষেতে প্রায় ৪.৫ মেট্রিক টন ধান উৎপন্ন হতো।

শ্রীলঙ্কার প্রধান খাদ্য ধান। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত মহাসাগরীয় এই দ্বীপের সমগ্র ধানের জমিতে গ্রীষ্মের ফসল আগের বছরের তুলনায় অর্ধেকের মতো কমে যেতে পারে, এমন একটি অন্ধকার চিত্র ফুটে উঠছে।

শ্রীলঙ্কার প্রধান খাদ্য যেহতু চাল তাই এমন পরিস্থিতিতে দেশটি সামনে আরও সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে সেটা কিছুটা অনুমেয়। ইতোমধ্যে দেশটি ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ানক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সারের ঘাটতি কৃষকদের একমাত্র সমস্যা নয়। দেশে পর্যাপ্ত জ্বালানি আমদানির জন্য খুব কমই বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ আছে। তাই বাজারে চাল সরবরাহ বাড়ানোর জন্য খামারের যন্ত্রপাতি এবং ট্রাকের পরিমাণ কম। কিছু কৃষক বলেছেন তাদের ফসল এখনো কাটার উপযুক্ত হয়নি।

অর্থনৈতিক দুর্দশাকে আরও বাড়িয়ে, স্তব্ধ ফসলের অর্থ হলো দ্বীপটিকে মূল্যবান মুদ্রার রিজার্ভ খরচ করে ভারত থেকে ক্রেডিট লাইনের পাশাপাশি কয়েক হাজার টন চাল আমদানির জন্য বৈদেশিক সাহায্যের দ্বারস্থ হতে হবে।

শ্রীলঙ্কার পেরাদেনিয়া ইউনিভার্সিটির শস্য বিজ্ঞানের অধ্যাপক বুদ্ধি মারাম্বে বলেছেন, দেশজুড়ে চলমান ‘ইয়ালা’ বা গ্রীষ্মকালীন চাষের মৌসুমে ধানের উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় গড়ে ২ মিলিয়ন টন হতে পারে। সারের জন্যই ফলন কম হয়েছে। পর্যাপ্ত ইউরিয়া সারের জোগান সময় মতো না দিতে পারায় ফলন অনেকাংশে কমে গেছে।

শ্রীলঙ্কা কয়েক দশক ধরে ধানে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল। সারের ব্যবহার ছাড়া প্রথম উৎপাদনে যাওয়ার পর গত বছর ১ লাখ ৪৯ হাজার টন শস্য কিনতে হয়েছিল। দেশটি ইতিমধ্যে ২০২২ সালেই ৪ লাখ ২৪ হাজার টন আমদানির চুক্তি করেছে।

মারাম্বে বলেছেন, ২০২৩ সালের প্রথম দুই মাসে খাদ্য ঘাটতি কাটাতে বা সেপ্টেম্বরে রোপণ করা ‘মহা’ ফসল না কাটা পর্যন্ত আমদানির প্রয়োজন হতে পারে।

সরকারি মুখপাত্ররা খাদ্য পরিস্থিতি এবং সম্ভবত আমদানি সম্পর্কে মন্তব্য করার অনুরোধের জবাব দেননি।

চাল দেশটির ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের প্রধান খাদ্য এবং সবচেয়ে বড় ফসল। সরকারি তথ্যানুযায়ী, দেশের বৃহৎ গ্রামীণ অর্থনীতিতে মাছ ধরা ও কৃষিকাজে নিয়োজিত ৮১ লাখ মানুষ। আর ২ কোটি মানুষ ধান চাষি।

(ঢাকাটাইমস/১৬আগস্ট/এসএটি)